মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

তোষামোদকারীরা রাষ্ট্রপতিকে খুশি করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছিল

 
   
 

 

সাধারণভাবে মানব চরিত্র তোষামোদের প্রতি দুর্বল হয়ে থাকে। মোসাহেবদের দল মানুষকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।

একদিন দেখি জাতীয় ব্যাংকের গভর্ণর জোরেশোরে লবি করে চলেছেন - নতুন নোট যেটা ছাপাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাতে প্রেসিডেন্ট মোশতাকের ছবিই ছাপানো উচিত। কয়েকজন পদস্থ আমলাও কোরাসে যোগ দিয়ে একই কথা বলে বেড়াচ্ছেন। এক ফাঁকে আমি গভর্ণর সাহেবকে কাছে পেয়ে বললাম, “স্যার, অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতির ছবি ছাপানোর জন্য এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন কেন?” আমার প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব খুঁজে না পেয়ে কিছু না বলেই কেটে পড়লেন। এমনিভাবে একদিন শুনতে পারলাম, কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু আমলা বিতর্কের ঝড় তুলেছেন - আমাদের কোন নির্দিষ্ট জাতীয় পোষাক নেই। একটা জাতীয় পোষাক নির্ধারণ করতে হবে; পোষাক যেটাই সাব্যস্ত হোক না কেন ‘মোশতাক টুপি’-কে অবশ্যই জাতীয় পোষাকের অংশ হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। মুসলমান হিসাবে জাতীয় পোষাকে টুপি থাকতে পারে যুক্তিসঙ্গত কারণেই; কিন্তু সেটা ‘মোশতাক টুপি’ হতেই হবে কোন যুক্তিতে; সেটাই বোধগম্য হচ্ছিল না। তাই একদিন তদবীরকারীদের একজন জাদরেল নেতাকে অনুরোধ করেছিলাম যুক্তিটা আমাকে বুঝিয়ে দিতে। তিনি তেমন কোন ঠোস যুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর হঠাৎ করেই এই তদবীরে ভাটা পরেছিল যে কোন কারণেই হোক। সব জায়গাতেই কেমন যেন পচঁনের র্দুগন্ধ। ধসে পড়ছে চারিত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ। যেকোন রাষ্ট্রের জন্য সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র হল মেরুদন্ড। সেখানে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পচঁন ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। সেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে জাতীয় পরিসরে। সেখানে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে কতটুকু পরিবর্তন আনা সম্ভব সেটা একটা কঠিন প্রশ্ন ও ভাবনার বিষয়। দ্রুত এই পচঁন ও অবক্ষয়ের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচানো অত্যন্ত দুরহ্‌ কাজ। অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রক্রিয়া শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব ঐতিহাসিকভাবেই আজ আমাদের উপর বর্তেছে। এই গুরু দায়িত্ব পালনের আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি আমরা পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতার মুখে। জানি না কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব এই প্রক্রিয়াকে! এ সমস্ত ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পরেছিলাম।

পরদিন অভ্যাস মতো ভোর ৬টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রাতঃক্রিয়া সম্পন্ন করে কাপড় পরছিলাম সেই সময় প্রেসিডেন্টের আরদালী এসে জানাল প্রেসিডেন্ট সাহেব নাস্তার জন্য আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তার কামড়ায় গিয়ে দেখলাম আমাদের প্রায় সবাই সেখানে উপস্থিত। আমি একটা খালি চেয়ারে বসলাম প্রেসিডেন্টের অনুমতি নিয়ে। ভাবছিলাম, প্রেসিডেন্ট গতরাতে আবেদুর রহমানের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন। কিন্তু সে বিষয়ের কোন উল্লেখ না করে হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন, “বাবা, আমগো মইধ্যে কম্যুনিষ্ট কেডা কেডা?” অপ্রত্যাশিত প্রশ্নটা করেই তিনি আমাদের সবাইকে দেখতে লাগলেন তীক্ষ্ণ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিয়ে। মুখে ছিল তার স্বভাবসিদ্ধ রহস্যময় হাসি। আমাদের কেউই তার প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলল না। তিনিই আমাদের সবাইকে নিশ্চুপ দেখে আবার বললেন, “যারাই কম্যুনিষ্ট হওনা কেন; তোমরা জাইন্যা রাইখো আমি সবচেয়ে বড় কম্যুনিষ্ট।” এরপর আর বিশেষ কোন কথাবার্তা হল না। নাস্তা শেষে আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম। মনে খট্‌কা লাগল, প্রেসিডেন্ট হঠাৎ করে এমন একটা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করলেন কেন? তবে কি তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নেতৃবৃন্দ ও ব্যক্তিদের সাথে আমাদের বিশেষ করে আমার গোপন যোগাযোগের বিষয়ে কিছু জানতে পেরেছেন? নাকি তিনি ঈঙ্গিতে আমাদের কাছে নিজেকে প্রগতিবাদী হিসাবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করলেন কিছুই ঠিক বুঝতে পারলাম না। তার সেই উক্তি রহস্যাবৃত্তই রয়ে গেল আমাদের সবার কাছে।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net