|
|
|
---|---|---|
![]() ![]() ![]() |
||
..ডালিম বলছি | ||
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি | ||
..জীবন বৃত্তান্ত | ||
..সমসাময়িক ভাবনা | ||
..প্রকাশিত বইসমগ্র | ||
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা | ||
..ইংরেজী ভার্সন | ||
৫৮ নং বালিগঞ্জ, কোলকাতা |
||
মুজিব নগর সরকারের পিঠস্থান। লোকাকির্ণ ছোট্ট একটা জায়গা। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা রক্ষা করা ছিল অসম্ভব। বালিগঞ্জের বাড়িটা নেহায়েতই ছোট। সবসময় অসংখ্য লোকজন ভীড় করে থাকে। নিরাপত্তা রক্ষা করা দুঃস্কর, কথাটা অতি সত্য। সর্বক্ষণ অগুনিত লোক মাছির মত ভনভন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক কামরা ছেড়ে অন্য কামরায়, কেউবা এমপি, কেউবা জাদরেল আমলা, কেউবা নেতাদের বিশেষ পরিচিত এবং আস্থাভাজন চামচা। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য নেতা, পাতি-নেতার ভীড়। গায়ে মানে না সকলেই আপনে মোড়ল। যার যার হাতে প্রত্যেকেই সাড়ে তিন হাত। গেটে প্রহরীরা কিছু জিজ্ঞাসা করলেই লংকাকান্ড বেধে যায়। সবাই যারা আসছেন তাদের ভাবসাব হচ্ছে, ‘আমরা কি হনুরে'। সবার পরিধানে নতুন নতুন কাপড়-চোপড়। হাল ফ্যাশনের অন্ত নেই। দিব্যি হেলেদুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দেখা হলে দাত বের করে নিজের পরিচয় দিয়ে খাজুরে আলাপ জমিয়ে তুলতে চেষ্টা করছেন। ঢালাওভাবে ভাত, গোস্ত আর ডাল রান্না হচ্ছে কিচেনে। যে আসছেন সেই খাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। কেউ কাউকে কিছু বলছেন না। ভুড়ি ভোজনের পর বিভিন্ন ঘরে চেয়ারের উপর, বসার বেঞ্চে এমনকি টেবিলের উপরও সটান হয়ে শুয়ে পড়ে দিবা নিদ্রা কিংবা রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করে নিতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করছেন না এ সমস্ত ভিআইপি ব্যক্তিদের দল। প্রত্যেকের হাতে একটা নতুন ব্রিফকেস কিংবা ছোট এট্যাচী। কোন কোন নেতার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। তারা যা কিছুই করছেন এ সমস্ত জিনিসগুলোও থাকছে তাদের সাথে সাথে। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাবার সময়ও সেগুলো সাথে নেয়া হচ্ছে, পাছে হারিয়ে যায়। ব্যাপার কি? এ সমস্ত ব্রিফকেস, এট্যাচী এবং ঝোলায় কি এমন দুর্লভ জিনিষ রয়েছে ভেবেই পাচ্ছিলাম না। রহস্যটা মতিই উৎঘাটন করল কিছুদিন পর। ও জানালো, টাকা সম্পর্কে সবটাই গোপন করলেন ভদ্রলোক। ইতিমধ্যে নূর উঠে গিয়ে পাশের ঘরে কর্নেল ওসমানীকে সবকিছু খুলে বলেছে। সব শুনে কর্নেল ওসমানী আমরা যে ঘরে বসেছিলাম সেখানে আসেন। তিনি ভদ্রলোককে অনেকভাবে জেরা করেন। ভদ্রলোক টাকার কথা সম্পূর্ন চেপে গিয়ে ঝোলাতে শুধু কিছু কাপড় ও জরুরী কাগজপত্র ছিল সে কথাই কর্নেল ওসমানীকে জানান। সব শুনে কর্নেল ওসামানী নূরকে আদেশ করেন ব্রিফকেসটি ভদ্রলোককে ফিরিয়ে দিতে। ইতিমধ্যেই ব্রিফকেস থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা আলাদা করে রেখে দেওয়া হয়েছিল। কাপড়-চোপড় ও কিছু কাগজপত্রসহ ব্রিফকেসটি ভদ্রলোককে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তিনি তাড়াতাড়ি ব্রিফকেস খুলে দেখেন টাকা ছাড়া অন্য সবকিছুই ঠিক আছে। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কিন্তু অবস্থা বেগতিক বুঝে ব্রিফকেস বন্ধ করে নিয়ে আমাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সুর সুর করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এরপর সেই ভদ্রলোককে আর কখনও দেখিনি পুরো ৯ মাস সংগ্রামকালে। উদ্ধারকৃত টাকাটা প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে জমা করে দেয়া হয়। এ ঘটনার অবতারনা এখানে এজন্য করলাম, তখন তথাকথিত মুজিবনগর সরকারের কার্যালয় দেখে বোঝা কষ্ট হত যে একটি জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম চলছে বাংলাদেশে। আর সে সংগ্রাম পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন প্রবাসী বালিগঞ্জস্থ লোকজন। যে সমস্ত লোকজন তখন অকারণে বালিগঞ্জের বাড়িতে ভীড় করে সর্বদা ঘুর ঘুর করতেন তাদের হাবভাব দেখে মনে হত সবাই যেন বরযাত্রী হয়ে এসেছেন কোন দূরদেশ থেকে! কোন ভাবনা নেই, কোন চিন্তা নেই! নির্বিঘ্নে হেসে খেলে সময় কাটিয়ে আনন্দেই আবার ফিরে যাবেন তারা। |
||