মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

বঙ্গভবন

 
   
 

 

রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ ছিল স্বাভাবিক। রাজকীয় এবং মনোরম। অস্বাভাবিকতা কিংবা আতংকের কিছুই দৃশ্যতঃ চোখে পড়ছিল না।

বঙ্গভবনের গেটেই নজরে পড়ল বিডিআর-এর সশস্ত্র সৈনিকরা পজিশন নিয়ে আছে। মিলিটারি সেক্রেটারীর কামরায় কর্নেল মান্নাফ ও মেজর মালেককে বসিয়ে আমি ও নুর গিয়ে ঢুকলাম প্রেসিডেন্টের কামরায়। সেখানে প্রেসিডেন্টের সাথে জেনারেল ওসমানী ও কর্নেল রশিদকে আলাপরত অবস্থায় পেলাম। হুদা ব্যস্ত ছিল নোট নেয়ায়। আমরা ঢুকতেই তারা জানতে চাইলেন, ক্যান্টনমেন্টের অবস্থা কি? আমি বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলে জানালাম, ব্রিগেডিয়ার খালেদের নেতৃত্বেই ঘটেছে সব কিছু। তাদের সবার তরফ থেকে চারটি দাবি নিয়ে এসেছেন কর্নেল মান্নাফ এবং মেজর মালেক। এরা দু’জনেই জেনারেল ওসমানীর কাছে বিশেষভাবে পরিচিত; তাই নাম শুনতেই ক্রোধে ফেটে পড়লেন,
-  How could they give their allegiance to Khaled! জবাবে আমি বললাম,
- স্যার, মানুষের চরিত্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবর্তনশীল। এ নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই এখন। বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মূল সমস্যা নিয়েই ভাবতে হবে। সবাই আমাদের অভিমত কি সেটা জানতে চাওয়ায় নূর ও আমার পক্ষ থেকে আমিই আমাদের অভিমত জানালাম,
- প্রথমত: আমি মনে করি ব্রিগেডিয়ার খালেদ এবং তার দোসরদের এই putch কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। সামরিক শক্তির দিক দিয়ে আমরাই বেশি শক্তিশালী। জনগণ এবং সৈনিকরা যখন তাদের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারবে তখন এই ক্যু’দাতা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। শুধু তাই নয়; তখন তারা এর বিরোধিতা করার জন্যও মানসিকভাবে প্রস্তুত হবে কিন্তু ঠিক এই মুহুর্তে আমাদের তরফ থেকে কোন প্রকার সামরিক অভিযানের তৎপরতা হবে আত্মঘাতী। তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত হওয়ার আগে কোন প্রকার সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পরলে দেশের জনগণ এবং বিভিন্ন সেনানিবাসের সৈনিকরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়বে ফলে দেশে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটবে; জনগণ এটাকে শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর আভ্যন্তরীন ক্ষমতার লড়াই হিসাবে বিবেচনা করে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পরে সব কিছু থেকে নিজেদের দূরে সরিয়েও রাখতে পারে। এই দুই ধরণের অবস্থারই পূর্ণ সুযোগ নিবে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী ত্রানদাতা হিসাবে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরাজিত শক্তিকে আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে দেশকে আবার নিয়ে যাবে আগষ্ট বিপ্লবের পূর্বাবস্থায়; জনগণের কিছু বোঝার আগেই। এ ধরণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত হবে না। পক্ষান্তরে, আমরা যদি এই সময় কোন প্রকার দ্বন্দ্বে না গিয়ে বোঝাপড়ার মাধ্যমে সরে দাড়াই তবে আমার বিশ্বাস, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই খালেদ চক্রের নিজস্ব কীর্তিকলাপের মাধ্যমেই খসে পরবে তাদের মুখোশ; ফলে দেশবাসী এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা জানতে পারবে তাদের আসল পরিচয়। সবাই যখন পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবে যে, পরাজিত আওয়ামী-বাকশালী স্বৈরশাসন এবং ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বিনিময়ে ব্রিগেডিয়ার খালেদ তার উচ্চাভিলাস চরিতার্থ করার জন্য তাদের উস্কানি এবং মদদ নিয়েই পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন; তখন যদি কোন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় খালেদ চক্রের বিরুদ্ধে তবে সেই উদ্যোগকে স্বতঃস্ফুর্ত অভিনন্দন ও সমর্থন জানাবে দেশবাসী। ঠিক একইভাবে যেমনটি তারা জানিয়েছিল ১৫ই আগষ্ট বিপ্লবকে। সেক্ষেত্রে জাতীয় বেঈমান ও তাদের বিদেশী প্রভুদের যেকোন হুমকির মোকাবেলায় জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক অংশের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবে জাগ্রত জনতা। সিপাহী-জনতার ঐক্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোন ষড়যন্ত্রই কার্যকরী করা সম্ভব হবে না কারও পক্ষে; যেমনটি হয়নি আগষ্ট বিপ্লবের পর।
দ্বিতীয়ত: আমি মনে করি জাতিকে ধোকা দেবার জন্য কৌশল হিসাবে ব্রিগেডিয়ার খালেদ এবং তার সহযোগীরা প্রেসিডেন্ট মোশতাককে সামনে রেখে আমাদের নিয়োজিত চীফ অফ স্টাফদের অপসারন করে সমস্ত সামরিক বাহিনীর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার হীন প্রচেষ্টা করছে। প্রেসিডেন্টকে দিয়ে এই কাজটি হাসিল করার পর অতি সহজেই তাঁকে সরিয়ে তাদের রাজনৈতিক দোসরদের ক্ষমতায় পুনর্বহাল করবে তারা। তাই আমি মনে করি, জাতীয় বেঈমানদের নীলনকশা বাস্তবায়নে প্রেসিডেন্ট মোশতাকের কোনরূপ ভূমিকা রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে না। যদি রাষ্ট্রপতি হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তাকে পালন করতেই হয় তবে সেটা তাকে করতে হবে আগষ্ট বিপ্লবের চেতনার আলোকেই; তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজিয়ে রেখেই। ব্রিগেডিয়ার খালেদ চক্রের হাতে ক্রিয়াণক হয়ে নয়। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার খালেদ চক্রকে পরিষ্কার করে বলে দেয়া উচিত। তারা যদি প্রেসিডেন্টের শর্ত মেনে নিতে রাজি না হয় সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের ছেড়ে দেওয়াই উচিত হবে বলে মনে করি আমি। আমার বক্তব্যের আলোকে রুদ্ধদ্বার অবস্থায় আমাদের মধ্যে কিছুক্ষণ আলোচনা হল। আমার যুক্তি মেনে নিয়ে সবাই একমত হলেন এই মুহুর্তে কোনরূপ সামরিক সংঘর্ষে যাওয়া ঠিক হবে না। ব্রিগেডিয়ার খালেদ চক্রের প্রতিনিধিদের কি বলা হবে সেটাও ঠিক করে নেয়া হল।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net