মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং আইনী সাহায্য প্রদান কমিটি’ গঠন করা হয়

 
   
 

‘মানুষের জীবন যখন প্রায় মূল্যহীন হয়ে পড়েছিল, জীবনের নিরাপত্তা হয়ে উঠেছিল অনিশ্চিত ঠিক তখনই কিছু বিবেকবান নাগরিক মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং আইনী সাহায্য প্রদান কমিটি গঠন করেন।

এ সময় ৩১শে মার্চ ১৯৭৪, জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সভায় মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটি নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডঃ আহমদ শরীফ। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন কবি সিকান্দার আবু জাফর। এ ছাড়া মীর্জা গোলাম হাফিজকে আইন পর্যালোচনা সাব কমিটির, ডঃ আহমদ শরীফকে প্রকাশনা সাব কমিটির, বিনোদ দাশগুপ্তকে তথ্য অনুসন্ধান সাব কমিটির চেয়ারম্যান, এনায়েতউল্লাহ খানকে কোষাধ্যক্ষ, মওদুদ আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দ জাফরকে সহ-সম্পাদক নির্বাচিত করে ৩৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির ঐ সভায় জনগণের মৌলিক অধিকার ও তৎকালীন পরিস্থিতি সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ প্রস্তাবও গৃহিত হয়। মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল :-

(১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ‘গণতন্ত্র’ রাষ্ট্রের একটি নিয়ামক নীতি হিসাবে সংযোজিত হয়েছে। ৩১, ৩২ এবং ৩৩ নং ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, শাসনতন্ত্র মোতাবেক জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে এবং প্রত্যেক নাগরিকই নিজেকে গ্রেফতার ও আটকের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য আইনের সাহায্য প্রার্থনা করার অধিকার ভোগ করবেন।
(২) কিন্তু এরূপ সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা সত্ত্বেও উপরোক্ত শাসনতান্ত্রিক ওয়াদা এবং নাগরিক অধিকার খেলাপ করা হচ্ছে বলে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত খবর পাওয়া যায়। এসব খবরে জানা যায় যে, কোন আদালতে হাজির না করেই অসংখ্য লোককে গ্রেফতার করে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং যে সব সংস্থার নাগরিকদের অধিকার রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকার কথা তাদের হাতেই অনেক লোক শারীরিকভাবে গুম হয়ে যাচ্ছে।

(৩) কাজেই যেসব দায়িত্বশীল নাগরিক আইনের শাসনের বিশ্বাসী তাদের মতামত সংগঠিত করা দরকার। এবং এই কাজের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও শান্তিকামী ব্যাপক জণগণের মৌলিক অধিকার হরণের প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে অভিহিত করে জনমত সংগঠিত করা প্রয়োজন। যাতে শাসনতন্ত্রে প্রদত্ত আইনের শাসনের নিশ্চয়তাকে নগ্নভাবে উপেক্ষা করে যে ব্যক্তি নিপীড়নের কাজ চলছে তা প্রতিরোধ করা যায়।

(৪) এর সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। অনেকক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিগণকে বিনা বিচারেই ধরে রাখা এবং অনেককেই আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়েই সাজা দেয়া হচ্ছে। সুতরাং এ ধরণের আটক ব্যক্তিদেরকে আইনের সাহায্য দেয়া প্রয়োজন।

(৫) আইনের এই সাহায্য দেয়ার জন্য উপযুক্ত সংগঠন ও ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

(৬) তহবিল ছাড়া সংগঠনের প্রয়োজনীয় কাজ যথাযথভাবে চালানো সম্ভব নয়। কাজেই সুষ্টভাবে এই কাজ চালানোর জন্য একটি তহবিল সৃষ্টি করাও প্রয়োজন।
(৭) এই কমিটির কাজ শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। কমিটিকে একটি কার্যকর সংগঠন পরিণত করার জন্য এবং সারাদেশের জনগণ যাতে আইনের সাহায্য পেতে পারে তার জন্য জেলা পর্যায়ে এমনকি তার নিম্ম পর্যায়ে ও এই কমিটি গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে নিম্ন আদালতেও জনগণ আইনের সাহায্য লাভ করতে পারে।

(৮) এই সংগঠন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিক অধিকার রক্ষামূলক সমিতিগুলোর সঙ্গেও ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখবে। ঐ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত প্রস্তাবলী ছিল নিম্নরূপ :-

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১,৩২ এবং ৩৩ নং ধারায় ব্যক্তি স্বাধীনতা সম্পর্কে যে সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সেগুলো নানান সরকারি বাহিনী ও প্রশাসন যন্ত্রের দ্বারা খর্ব বা হরণ করা হচ্ছে শুধু তাই নয়; নতুন নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সংবিধানে প্রদত্ত অনেক অধিকারকে ইতিমধ্যেই কাগুজে অধিকারে পরিণত করা হয়েছে। এই সভা সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারসমূহের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এই সমস্ত আইন প্রত্যাহার করে নেয়া এবং বিভিন্ন সরকারি বাহিনীও প্রশাসন যন্ত্র কর্তৃক ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা প্রভৃতি মৌলিক অধিকারসমূহের উপর হস্তক্ষেপ ও হামলা বন্ধ করার জন্য সাধারণভাবে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তিকে কোন কারণ না দেখিয়ে অনির্দিষ্টিকালের জন্য আটক রাখা, যে কোন সংবাদপত্রকে যে কোন সময় বন্ধ করে দেয়া এবং ব্যক্তির মৌলিক অধিকারসমূহের উপর যে কোন প্রকার হামলার তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে। সভা বিশেষ ক্ষমতা আইনকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং বর্তমান সংবিধানের বিরোধী বলে মনে করছে এবং তা বাতিল করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে।

রক্ষীবাহিনী আইনের মাধ্যমে যে সমস্ত ক্ষমতা রক্ষীবাহিনীর হাতে অর্পন করা হয়েছে সে ক্ষমতাগুলি এতকাল পুলিশের হাতেই একান্তভাবে ন্যস্ত ছিল। যে ক্ষমতা পুলিশের হাতে এতকাল ন্যস্ত ছিল এবং এখনও ন্যস্ত আছে সে একই ক্ষমতা আবার একটি নতুন বাহিনীর হাতে আইনের মাধ্যমে নতুন করে অর্পন করার উদ্দেশ্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের প্রচেষ্টা নয় বরং নানা ক্ষেত্রে যারা সরকারি নীতির সমালোচনা ও বিরোধিতা করবে তাদের ব্যক্তিগত অধিকার হরণ এবং তাদের উপর রাজনৈতিক নির্যাতন পরিচালনা করাই হল এর প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় রক্ষীবাহিনীর কার্যকলাপ সম্পর্কে সংবাদপত্রে বহু বিবরণ ইতিমধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে। কমিটি রক্ষীবাহিনীর এই নির্যাতনমূলক কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করছে এবং রক্ষীবাহিনী আইন বাতিলের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে।

সভা বর্তমান সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য ব্যক্তিকে বিনা বিচারে এবং কোন কারণ না দেখিয়ে এ দেশের নাগরিকদের জেলে আটক রাখার নীতি ও কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা ও বিরোধিতা করছে এবং বিনা বিচারে আটক সকল বন্দীর আশু মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃত হয়েছে। সংবাদপত্রে স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, সরকার বিভিন্ন বিরোধী মতালম্বী সংবাদপত্রের ওপর নিয়মিত হামলা করে সংবাদপত্র সম্পাদক ও কর্মীদের উপর রাজনৈতিক নির্যাতন চালাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে প্রচলিত সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারসমূহ নিজেরাই খর্ব ও হরণ করেছে। দৈনিক গণকন্ঠের ওপর সামপ্রতিক হামলা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এই সভা বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এবং মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটির কার্যকরী সংসদের সদস্য গণকন্ঠ সম্পাদক জনাব আল মাহ্‌মুদসহ অন্যান্য আটক বা গ্রেফতারী পরোয়ানাপ্রাপ্ত সংবাদপত্র কর্মীদের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে জারিকৃত পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।

২৯শে অক্টোবর সারাদেশে ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। একই দিন মজুতদারী আর কালোবাজারের দায়ে আওয়ামী লীগের আর একজন সংসদ সদস্য গ্রেফতার হন। ৩০ তারিখে লবন মজুতের জন্য আওয়ামী লীগের এমপি ডঃ শামসুদ্দিন আহমদকে গ্রেফতার করা হয়।

এ অবস্থায় মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটির উদ্যোগে ১লা নভেম্বর ১৯৭৪ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে শিক্ষক, আইনজীবি, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, চিত্রশিল্পী ও ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা বাংলাদেশের বর্তমান মন্বন্তর প্রতিরোধের জন্য আন্দোলন গঠনের উদ্দেশ্যে এক বিরাট সমাবেশে যোগদান করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বুদ্ধিজীবিদের এত বিরাট সমাবেশ ইতিপূর্বে আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ‘মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটির’ সভাপতি সিকান্দার আবু জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুই ঘন্টার উপর এ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এডভোকেট মির্জা গোলাম হাফিজ, ডঃ আহমদ শরীফ, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, এনায়েত উল্লাহ খান, কামরুন্নাহার লাইলী, নিজামুদ্দিন আহমদ, মহিউদ্দিন আলমগীর, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির মুহাম্মদ জাকারিয়া এবং বদরুদ্দিন উমর। সমাবেশে বিদ্যমান মন্বন্তর পরিস্থিতি ও মৌলিক আধিকার সম্পর্কে ১৭টি প্রস্তাব গৃহিত হয়। সমাবেশের পর বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গন থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত যায় এবং সেখানেই সমাবেশের কর্মসূচী শেষ হয়। সমাবেশে গৃহিত প্রস্তাববলীর বিবরণ:-

১৯৭৪ সালের ১লা নভেম্বর বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত মন্বন্তরের গৃহিত প্রস্তাবে বলা হয় যে, এই মন্বন্তরের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতাকেও অতিক্রম করেছে এবং এই মম্বন্তর, বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্টি হয়নি বরং শাসকশ্রেণী ও তাদের সহযোগীদের গণবিরোধী নীতি ও কর্মকান্ডেরই প্রত্যক্ষ পরিণতি। সমাবেশের প্রস্তাবে এই মন্বন্তরকে ‘প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থা’ বলে বর্ণনা না করে একে মন্বন্তর বলে ঘোষণার জোর দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবে বৈদেশিক সাহায্যের একটি শ্বেতপত্র ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশের প্রস্তাবে সর্বদলীয় রিলিফ কমিটি গঠনে সরকারের বিরোধিতার নিন্দা করে অবিলম্বে একটি সর্বদলীয় রিলিফ কমিটি গঠন করার দাবি জানানো হয় এবং এ ব্যাপারে বিরোধী দলসমূহের প্রতি উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণের আহ্‌বান জানানো হয়। এছাড়াও রেশনিং এলাকা সম্প্রসারন ও টেষ্ট রিলিফ চালু করার দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রস্তাবে লঙ্গরখানার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সেখানে নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। মন্বন্তর প্রতিরোধ আন্দোলন সমাবেশে রেডক্রসের চেয়ারম্যান হিসাবে সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারপতিকে নিয়োগ করার দাবি জানানো হয়। রাজনৈতিক নির্যাতন বন্ধ ও মিথ্যা মামলায় আটক ও বিনা বিচারে আটক রাজনৈতিক বন্দীসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবি জানানো হয়।

দেশবাসীর মৌলিক অধিকার প্রশ্নে জুলাই মাসে ‘মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটি’-র কার্যনির্বাহী পরিষদ জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ক্রমাবনতি এবং এ বিষয়ে সরকারি নীতি লক্ষ্য করে এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে সরকার বিরোধী মতামত ও সরকার বিরোধী ব্যক্তিদের দমন করার জন্য রক্ষীবাহিনীকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ এর অস্ত্র দ্বারা নিজেদেরকে সজ্জিত করেছেন। বাহ্যতঃ সমাজ বিরোধী লোকদের মোকাবেলা করার জন্য প্রণীত এই আইন বস'ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন নির্যাতনের একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ এর স্থল ও দারুন অপব্যবহার এবং গ্রাম ও শহরাঞ্চলে বেপরোয়া রক্ষীবাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে সরকার মূলতঃ ব্যাপকভাবে জনগণের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।

সব ধরণের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেই রক্ষীবাহিনী ধরে নিয়ে যাচ্ছে এবং রক্ষীবাহিনী আইনের মধ্যেও তাদেরকে আদালতে উপস্থিত করার যে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে তা না করে তাদের উপর তারা হিংসাত্মক শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মীদের উপর অস্বাভাবিক নির্যাতন ও তাদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টির কাহিনী বিভিন্ন সংবাদপত্রে এমনকি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্রের মাধ্যমেও ফাঁস হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ সরকার বিরোধী দলীয় মতামতকে দমনের চেষ্টা করছেন শুধু তাদেরকে জেলে দিয়ে এবং নির্যাতন ও শারীরিকভাবে খতম করেই নয়; তারা এর জন্য ১৪৪ ধারাও দেশব্যাপী জারি করেছেন। বাহ্যতঃ এটা তারা করেছেন দুই মাস পূর্বে আরম্ভ করা তাদের তথাকথিত শুদ্ধি অভিযানের সুবিধার জন্য। কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য হল এ দেশে বিরোধী মতামত প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে সংগঠিত হতে না দেওয়া। আর একটি বিষয়ে আমরা জনগণের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। একমাত্র সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রপত্রিকার মাধ্যমেই মত প্রকাশে যারা ইচ্ছুক তাদেরকে তা প্রকাশ করার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে ভয়ানক রকম কড়াকড়ি করে এবং নিউজপ্রিন্টের কোটা দিতে অস্বীকার করে সরকার বর্তমানে বিরোধী দলীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকীগুলোর প্রকাশনা ক্ষেত্রে নিদারুন অসুবিধার সৃষ্টি করেছেন। উপরে উল্লেখিত ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটি কারাগারের অবস্থার উন্নতি ও রাজনৈতিক বন্দীদের আশু মুক্তি দাবি করছে।