|
|
|
---|---|---|
..ডালিম বলছি | ||
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি | ||
..জীবন বৃত্তান্ত | ||
..সমসাময়িক ভাবনা | ||
..প্রকাশিত বইসমগ্র | ||
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা | ||
..ইংরেজী ভার্সন | ||
জনগণের আশা এবং প্রত্যাশা এবং নেতৃবৃন্দের বিশ্বাসঘাতকতা |
||
জনগণ সর্বকালে ত্যাগের বিনিময়ে কিছুই পায়নি কিন্তু নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করে ফুলে ফেপে কলাগাছ হয়েছেন। সদ্যমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। অনেক আশার বাংলাদেশ। জনগণকে সোনার বাংলার যে স্বপ্ন নেতারা এতদিন দেখিয়ে এসেছেন তা বাস্তবায়িত করার সুযোগ এসেছে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে। জাতীয় পরিসরে মুক্তি সংগ্রাম শ্রেণীভেদের প্রাচীর ভেঙ্গে-চুড়ে একাকার করে দিয়েছে। ফলে শ্রেণীভেদের অহমিকা ভুলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার এক অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা : নেতারা তাদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠি এবং দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে জাতীয় স্বার্থে জনগণকে একত্রিত করে তাদের দেশপ্রেম এবং কর্মউদ্দীপনাকে গঠনমূলক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে পূর্ণগঠন করে গড়ে তুলবেন এক সোনার বাংলা। সমৃদ্ধ এবং দৃঢ় ভিত্তির উপর নির্ভর করে বিশ্ব পরিসরে সর্গবে মাথা উচুঁ করে দাড়াবে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক। অতীত ঐতিহ্য, নিজস্ব স্বতন্ত্রতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সুদূরপ্রসারী বিচক্ষণতা, সঠিক দিক নির্দেশনা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, কঠিন পরিশ্রম সর্বোপরি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ ও জাতিকে আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাংলাদেশকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে উন্নতির চরম লক্ষ্যে। সুখী সমৃদ্ধ এবং গতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলে তার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেবার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। লাখো শহীদের রক্তের বদলে অর্জিত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে অর্থবহ। কিন্তু জনগণের মনে অনেক সন্দেহ। ঐতিহাসিকভাবে আমাদের রাজনীতিতে কাজের চেয়ে কথার ফুলঝুরি ঝরেছে বেশি, তার চেয়ে বেশি থেকেছে প্রতিশ্রুতি। ‘ক্ষমতায় গেলে জনগণের সার্বিক মুক্তি এনে দেব’ এ ধরণের গালভরা বক্তব্য জনগণ হামেশাই শুনে এসেছে দীর্ঘকাল থেকে। কিন্তু ‘যেই গেছেন লংকা সেই হয়েছেন রাবন’ অর্থাৎ ক্ষমতায় গিয়ে বক্তৃতাকারীরাই নির্মমভাবে পদদলিত করেছেন জনগণ এবং জনগণের দাবিকে। এর মূলে রয়েছে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের গণবিচ্ছিন্নতা। দেশের ব্যাপক জনগণের সাথে তাদের কোন সংযোগ নেই। এখানে শাসকের সাথে শাসিতদের কোন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। তাই শাসক গোষ্ঠির বক্তৃতা-বিবৃতি সাধারণ মানুষকে আলোড়িত করে না। তারা যখন যা খুশি তাই বলেন, তাই করেন। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে তাদের নীতি ও কাজ হালাল করে নেন। জনগণ ঘুরে ফিরে একই প্রতারণার শিকারে পরিনত হয় বারবার। মোহ এবং ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ রাজনীতিকরা নির্দ্বিধায় বিসর্জন দেন সাধারণ গণমানুষের স্বার্থ। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ১৯৪৭ সাল হতে পরবর্তিকালে যত সরকার এসেছে তারা প্রত্যেকেই মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন ধূঁয়া তুলেছে। ১৯৪৭ সালে সুবিধাবাদী নেতৃত্ব ধূঁয়া তুললেন ইসলামের। ধর্মপ্রাণ মানুষ অতি সহজেই মোহিত হয়েছিল সেই ধূম্রজালে। ১৯৫২ সালে তারা ভাষা আন্দোলনকে আখ্যায়িত করলেন ইসলাম বিরোধী সংগ্রাম বলে। ১৯৫৮ সালে আইয়ূব খান সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে এলান করলেন মৌলিক গণতন্ত্রের। মানুষ বারবার আশাহত হয়েছেন এসমস্ত সরকারের কাছ থেকে। তাদের বিভিন্ন সব শ্লোগান পরিণত হয়েছে শুধু ফাঁকা আওয়াজে। সাধারণ মানুষের অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশার বোঝা ক্রমান্বয়ে গিয়েছে বেড়ে। গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে সামাজিক সংকট। অর্থনৈতিকভাবে তারা হয়েছেন দেউলিয়া। পরিণামে জনগণ হয়েছে পশ্চাদমুখী। তাই শুনতে পাই তাদের আক্ষেপ, “পাক আমলেই ভালো ছিলাম। বৃটিশ আমলে ছিলাম আরও ভালো।” ১৯৭১ সালের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের মন-মানসিকতায় কোন গুনগত পরিবর্তন আনতে পারেনি। তাই তারাও তাদের পূর্বসুরীদের মত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পদার্পন করেই পুরনো কায়দায় ধুঁয়া তুললেন মুজিববাদ কায়েম করতে হবে। কিন্তু মাত্র সাড়ে চার বছরের মাথায় যখন মুজিববাদের অসাড়তা পূর্ণমাত্রায় প্রমাণিত হল তখন জনাব শেখ মুজিব আবারো একই কায়দায় সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনী প্রণয়ন করে এবং জরুরী আইন ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষমতা নিজ হাতে কুক্ষিগত করে একনায়কত্ব ও একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেন। নজীরবিহীন তার এই শাসনতান্ত্রিক ক্যু’কে তিনি তার ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করেন। তার এই সর্বক্ষমতা হরণের ফলে বাহ্যিকভাবে অবস্থা স্থিতিশীল মনে হলেও দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। এই অবনতির একটি প্রধান কারণ ছিল শেখ মুজিব ও তার সরকার মনে করত কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠি এবং ক্ষমতাবলয়ের লোকজনের মাঝে সুখ-সুবিধা বন্টন করে তাদের খুশি রাখতে পারলেই ক্ষমতায় থাকার সমর্থন লাভ করা যায়। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা, আদর্শ অথবা নীতিগত বিশ্বাসের অভাব সর্বোপরি তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশসমূহের সমস্যাদি এবং সশস্ত্র জাতীয় সংগ্রামের মাধ্যমে সদ্যমুক্ত বাংলাদেশের পূর্ণগঠনের সমস্যা সম্পর্কে তার জ্ঞানের অভাবের জন্যই শুধুমাত্র সুখ-সুবিধা বন্টনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। যে কোন নীতি নির্ধারনের ব্যাপারে তিনি তার অভিমতকেই প্রাধান্য দিতেন। কারো কোন যুক্তিই তার কাছে গ্রহণযোগ্য হত না। তার এই সবজান্তা ভাবও তার প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। পার্টি ও রাষ্ট্র সম্পর্কের ব্যাপারেও তার যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব ছিল। ঐ ধরণের মানসিকতার জন্যই ১৯৫৬-১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খানের সাথে শেখ মুজিবের মতবিরোধ ঘটে। জনাব খানের অভিমত ছিল প্রশাসনকে নির্দলীয় রাখতে হবে। প্রশাসনের উপর কোন প্রকার দলীয় প্রভাবের ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ বিঘ্নিত হবে। কিন্তু শেখ মুজিব তার এই মনোভাবের বিরোধিতা করে যুক্তি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, “পার্টির আনুগত্যকে প্রাধান্য দিতে হবে প্রশাসনকে তাদের নিরপেক্ষতা বর্জন করে। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের দলীয় সদস্যদের কাজকে সহায়তা করাই হবে প্রশাসনের সার্বিক দায়িত্ব এবং এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রভাব বাড়তে সহযোগী হতে হবে প্রশাসনিক যন্ত্রকে।” শেখ মুজিবের দাপটের কাছে জনাব আতাউর রহমান খানকে নিশ্চুপ থাকতে হয়। ফলে ১৯৫৬-৫৭ সালে শেখ মুজিব যখন শিল্পমন্ত্রী তখন তার বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনি তার সরকারি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তার প্রিয়জন ও পার্টির লোকদের অনেক পারমিট, ব্যাংক লোন, ইনডেটিং লাইসেন্স, শিল্প কারখানা গড়ার পারমিশন প্রভৃতি করিয়ে দেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি তার স্বভাবসুলভ প্রথায় তার পার্টির লোকজনদের নানাভাবে খুশি রাখার চেষ্টা করেন। কাউকে দেয়া হয় টাকা, কাউকে চাকুরী, কাউকে অযৌক্তিক পদোন্নতি, কাউকে বানানো হয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এভাবেই দেশ স্বাধীন হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই অযোগ্য ও অসৎ পরিচালকগণ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মেশিনপত্র, স্পেয়ার পার্টস, কাচাঁমাল ভারতে পাচাঁর করে রাতারাতি বড়লোক হয়ে উঠেন। সব রকম দেশী ও বিদেশী আমদানিকৃত পন্য সরবরাহ করা হত লাইসেন্স প্রাপ্ত ডিলারদের মাধ্যমে। তাদের সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের সুপাত্রগণ! মুজিব পরিবারের সাথে বিশেষ ঘনিষ্ঠতার কারণে আমি প্রায়ই যেতাম ৩২নং ধানমন্ডিতে। কখনো তিনি ডেকে পাঠাতেন, কখনো যেতাম স্বেচ্ছায়। এমনই একদিন দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমি তাকে বলেছিলাম, এমন একটি জবাবের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মনে মনে ভেবেছিলাম, আজতো তিনি জাতীয় নেতা, রাষ্ট্রের কর্ণধার। জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে শুধু দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখা কি তার উচিত? জাতিই বা সেটা আশা করে কি? এ বিষয়ে আর আলাপে না গিয়ে সেদিন ফিরে এসেছিলাম এক অর্বণনীয় অস্বস্তি নিয়ে। শাসকদলের এই সমস্ত নব্য পুজিঁপতিরা জাতীয় অর্থনীতিতে কোন প্রকার বিনিয়োগ করেননি, তারা শুধু যা ছিল সেটাকেই লুট করে বড়লোক হয়েছেন। জাতীয় সম্পদ শুষে নিয়ে খোকলা করে দিয়েছেন অর্থনীতিকে। এভাবে পাকিস্তানের ২২ পরিবারের মত রাতারাতি বাংলাদেশ কয়েক হাজার পরিবার সৃষ্টি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের প্রভাবে পরিচালিত দল আওয়ামী লীগের মাধ্যমে শেখ মুজিব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। জ্ঞানের অভাব নাকি জনতাকে বোকা বানাবার অতি চালাকি বোঝা মুশকিল! শুধু যে কর্মীরা অসৎ হয়ে উঠেছিল, তা নয়। মুজিব পরিবারের সদস্যগণ ও তার আত্মীয়-স্বজনও দুর্নীতি ও চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। শেখ মুজিবের অতি বিশ্বাসভাজন গাজী গোলাম মোস্তফা জাতীয়ভাবে ‘কম্বল চোর’ উপাধি পান এবং রিলিফের জিনিসপত্র নিয়ে কেলেংকারী ও চোরাচালানের জন্য আর্ন্তজাতিকভাবে খ্যাতি লাভ করেন। তিনি রেডক্রসের চেয়ারম্যান ছিলেন। শেখ মুজিবের ছোট ভাই শেখ নাসের শুধু খুলনায় বাড়িঘর এবং অবাঙ্গালীদের ব্যবসা-বাণিজ্য হাতিয়েই ক্ষান্ত হননি। ভারতে চোরাচালানের রিং লিডারও ছিলেন তিনি। শেখ মুজিবের প্রত্যেকটি ভাগীনা (শেখ মনি, আবুল হাসনাত, শেখ শহিদুল ইসলাম) মামুর জোরে শুধু যে রাজনৈতিক আধিপত্যই বিস্তার করে রাতারাতি নেতা বনে যান তাই নয়; অসৎ উপায়ে অর্জিত ধনদৌলতের পাহাড় গড়ে তোলেন তারা। শেখ মুজিবের পুত্রদ্বয় বিশেষ করে শেখ কামালও অসৎ উপায়ে টাকা-পয়সা আয় করতে থাকে। এক ব্যাংক ডাকাতির সাথে শেখ কামালের জড়িত হয়ে পড়ার ব্যাপারে পূর্বেই বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। আওয়ামী সরকারের আমলে দুর্নীতি সম্পর্কে বিখ্যাত সাংবাদিক জনাব লরেন্স লিফসুলজ ৩০শে আগষ্ট ১৯৭৪ সালে Far Eastern Economics এ লিখেন, “অসৎ কাজ ও অসাধু তৎপরতা কোন আমলেই নতুন কিছু নহে। কিন্তু ঢাকাবাসীদের অনেকেই মনে করেন যেভাবে মুজিব আমলে সরকারের ছত্রছায়ায় খোলাখুলিভাবে দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের লুটপাট হয়েছে তার নজির ইতিহাসে বিরল।” স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে লুটপাট ও দুর্নীতির ফলে কোনরূপ অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক সুফল লাভ করা সরকারের পক্ষে ছিল অসম্ভব। উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কহীন পরগাছার মত গজিয়ে উঠা নব্য ধনীদের বিলাসবহুল জীবনধারা ও সহজ উপায়ে অর্জিত অর্থের অস্বাভাবিক অপচয় জাতীয় অর্থনৈতিক সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলেছিল একদিকে, অন্যদিকে তাদের নীতি বর্জিত ক্রিয়াকর্ম সরকার ও সরকারি দলের ভাবমুর্তিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল জনসাধারণের চোখে। আওয়ামী লীগের পক্ষে সেই হারানো মর্যাদা আর কখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মানুষের আকাশচুম্বি চাহিদা এবং সীমিত জাতীয় সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কিছু লোককে ফায়দা দিতে পারলেও বেশিরভাগ জনগণের কাছ থেকে সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় গড়ে তুলে সুষম সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরণের পক্ষপাতিত্ব ও দুর্নীতি প্রতিষ্ঠিত করবে সমাজের প্রতি স্তরে, এটাকে জনগণ জাতীয় বেঈমানীর সমান বলেই মনে করেছিল। আওয়ামী নেতৃত্বের প্রতি তারা বীতঃশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় জনগণের আস্থা হারায় আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয় জনগণের সাথে সাথে ক্ষমতাবলয়ের বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের আস্থা থেকেও বঞ্চিত হয় আওয়ামী সরকার। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল প্রশাসন, ছাত্র ও যুব সমাজ, মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা বাহিনী। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের ৮ কোটি লোকের অন্নের সংস্থান করা ছিল অতি দুরূহ কাজ। বৈদেশিক বন্ধুরাষ্ট্রগুলো এবং সাহায্য সংস্থাগুলো মুক্তহস্ত নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুর্নগঠনের জন্য। তাদের সহানুভূতির ফলে ১৯৭৩ সালের ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সর্বমোট ১৩৭৩ মিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান লাভ করতে সমর্থ হয়। এছাড়া ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত UNROB এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের রিলিফ সাহায্যও দান করা হয় সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে। |
||