মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

ঐক্য প্রচেষ্টা ফলপ্রসু হয়নি

 
   
 

 

স্বৈরাচারী একনায়কত্বের বিরুদ্ধে লড়াই এর জন্য জাতীয়তাবাদী এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য ছিল অপরিহার্য। কিন্তু অনেক চেষ্টায়ও সেই ঐক্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

সরকারি দল ও তাদের পেটোয়া বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো তাদের সাধ্যমত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। সর্বহারা পার্টি এবং জাসদের কর্মীরাই সরকার বিরোধিতায় মারাত্মকভাবে তৎপর। অন্যান্য বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এবং প্রগতিশীল সংগঠনগুলো তাদের সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়ছে। জনগণ সাধারণভাবে আওয়ামী ঐক্যজোটের বিরুদ্ধে। ঐক্যজোটের স্বৈরাচারী নির্যাতনে জীবন ও জীবিকার তাগিদে সবাই দিশেহারা। জাসদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, লেনিনবাদী কম্যুনিষ্ট পার্টি, সর্বহারা পার্টি, জাতীয় লীগ ইত্যাদি দলগুলো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এবং তাদের গোপন সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। তাদের মধ্যে সরকার বিরোধিতার ব্যাপারে কয়েকটি বিষয়ে ঐক্যমতও রয়েছে। জনগণও আজ পিছিয়ে নেই। তারাও আজ আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এরপরও কোন একটি দলের পক্ষেই পর্যাপ্ত পরিমাণের শক্তি এবং প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না সরকারি নিষ্পেষণের কারণে। ফলে জনগণ কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের পেছনে দাড়াতে ভরসা পাচ্ছে না। তারা এটাও লক্ষ্য করছে যে, বিরোধী দলগুলো মোটামুটিভাবে সরকার বিরোধী একই রকমের বক্তব্য রাখছে; একইভাবে সরকারের বিরোধিতা করছে কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে না। দলগুলোর মধ্যে তেমন কোন মৌলিক পার্থক্য না থাকায় এবং তাদের বক্তব্য এবং মতামতের মধ্যে একটা মৌলিক সাদৃশ্য দেখতে পাওয়ায় তারা চাইছিল সব বিরোধী দল এবং সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হোক। এ ব্যাপারে কিছু নির্দলীয়, রাজনৈতিকভাবে সচেতন, দেশপ্রেমিক ব্যক্তি নিজেরা উদ্যোগ নিয়েছিল ঐধরণের একটা ঐক্য প্রচেষ্টার। লেখকেরও এই ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বিরোধী দলগুলোর কোনটাই সরকারের নির্যাতন এবং দমন নীতির মুখে এককভাবে দাড়াতে পারবে না; এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত ছিল না। গণআন্দোলন এবং সরকার বিরোধী সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে পর্যায়ক্রমে; এ ব্যাপারেও ঐক্যমত ছিল। এই দু’টো মূল বিষয়ই ছিল ঐক্য প্রচেষ্টার ভিত্তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং আগামী দিনগুলোতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে কারো পক্ষেই শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না বরং দলগুলোর বিলুপ্তি ঘটারই সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে; এ বিষয়টিও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। তাছাড়া সরকার যেভাবে দেশে প্রকাশ্য রাজনীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত করে আনছে তাতে করে অচিরেই আগামীতে দেশে একদলীয় শাসনই প্রতিষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে সরকার বিরোধী কিছু করতে গেলে তাতে শক্তিক্ষয়ই ঘটবে কিন্তু তাতে কোন লাভ হবে না। গোপনে বৈঠকের পর বৈঠক চললো। আলোচনাকালে বোঝা গেল ঐক্যের পক্ষে যারা; তারা শীর্ষ নেতাদের জন্য তেমনভাবে তাদের মতামতও প্রকাশ করতে পারছিলেন না। সারকথা, বুঝতে পারা যাচ্ছিল ঐক্যের পথে মূল বাধা নেতারা। আবিষ্কার করতে পারলাম এর কারণও রয়েছে অনেক:- নেতৃত্বের কোন্দল, অতীতের তিক্ততা, অবিশ্বাস, নেতাদের বিভিন্ন দুর্বলতা এবং নীতিগত ভুলের জন্য অতীতের ব্যর্থতা। এসব জটিল সমস্যাগুলোর উর্ধ্বে উঠার মত মানসিকতা নেতাদের মাঝে নেই। তার উপর ঐক্যের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিল ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে নেতৃত্বের কোন পদে কে থাকবেন; সেই প্রশ্নটি। নেতাদের সবাই যার যার হাতে সাড়ে তিন হাত! সবাই নিজেকে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করছেন। এ ধরণের মনোভাব এবং পরিস্থিতিতে কোন ঐক্য গড়ে তোলা অসম্ভবই নয় অবাস্তবও বটে। তাই আমরা সেই উদ্যোগ থেকে সরে দাড়াব ভেবেছিলাম এক সময়। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হল ভেঙ্গে পরলে চলবে না; ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সব নেতাদের মধ্যে পারষ্পরিক বিভেদ থাকলেও তাদের প্রত্যেকেই আমাদের আন্তরিকতার তারিফ করেছিলেন। পরিশেষে আমাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে একদিন কর্নেল আকবর এসে বললেন যে, এদের নিয়ে কোন ঐক্য গড়ে তোলা কিছুতেই সম্ভব নয় বলেই তিনি, কাজী জাফর, মেনন এবং রনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার। এই দলে আমাকে একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে যোগদানের প্রস্তাব দিলেন তিনি। জবাবে আমি বলেছিলাম, “এত তাড়াতাড়ি হতাশ হলেতো চলবে না; ঐক্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যেখানে পুরনো দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে তাদের অস্তিত্বই বজিয়ে রাখতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে সেখানে আর একটি নতুন দল করে লাভটা কি হবে? এরপরও আপনারা দল করতে চান ভালো কথা; তবে আমার জন্য এই মুহুর্তে র্নিদলীয় থাকাটাই উচিত হবে বলে মনে করি। আপনাদের দলে যোগ না দিলেও সময়মত আমরা সবাই একত্রিত হব কোন বৃহত্তর স্বার্থে; সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।” এর অল্প কয়েকদিন পরেই United People’s Party (UPP) আত্মপ্রকাশ করে। কর্নেল আকবর সেই পার্টিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে যোগদান করেন। এরপরও আমাদের যোগাযোগ অবিচ্ছিন্ন থাকে।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net