মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

আমার প্রাণনাশের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা

 
   
 

উত্তরবঙ্গে কর্মক্ষেত্র পরিদর্শন করতে যাবার সময় ঐ ঘটনা ঘটে।

১৯৭৫ সালের প্রথমার্ধে সারিয়াকান্দী এবং ধুনটেতে তখন আমাদের প্রজেক্টের কাজ চলছে। একদিন আমার উপর দায়িত্ব পড়ল কিছু মেশিনপত্র নিয়ে প্রজেক্ট পরিদর্শনে যেতে হবে। স্বপন ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে; নূরও বিশেষ একটা কাজে ঢাকাতেই আটকে পড়েছে; তাই বাধ্য হয়েই আমাকে ঐ দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। ট্রাকে মাল ভর্তি করে রওনা হলাম। আমি নিজের গাড়িতেই যাব কারণ আমাকে তাড়াতাড়ি আবার ঢাকায় ফিরতে হবে অন্য আরেকটি কাজে। আরিচা ঘাটে পৌঁছে দেখি ফেরি বিভ্রাট। নগরবাড়ি ঘাটে পৌঁছালাম বেশ রাত করে। রাতে ড্রাইভ করা সেই সময় ছিল বিপদজনক। তাই ঠিক করলাম ঘাটেই রাতটা কাটিয়ে ভোরে রওনা দেব গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে। প্রায়ই উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়া-আসা করতে হয় নগরবাড়ি ঘাট দিয়ে। ঘাটের ছাপড়া বেড়ার একটা রেষ্টুরেন্ট বিশেষ পরিচিত। সবসময় এই রেষ্টুরেন্টেই খাওয়া-দাওয়া করে থাকি আমরা যাত্রাকালে। সেই সুবাদে মালিক হাজী সাহেবের সাথে বেশ হৃদ্যতা হয়ে গেছে। আমাদের সবসময় বিশেষ খাতির-যত্ন করে পছন্দমাফিক টাটকা মাছ রেধে খাওয়ান হাজী সাহেব। হাজী সাহেবকে সমস্যাটা বোঝাতে বললাম, “হাজী সাহেব রাতটাতো এখানেই কাটাতে হয় আজ।” হাসিমুখে হাজী সাহেব জবাব দিলেন, “কোন অসুবিধা নাই স্যার। চকি একটা পাইতা দিমু; বিছানাপত্র বাসা থাইকা আইনা দিমু; মশারীও একটা লাগাইয়া দিমু।” রাতের খাবারের পর বাইরে বেরিয়ে দেখি আমার ট্রাক ড্রাইভার এবং অন্য সবাই টুয়েন্টিনাইন খেলছে ট্রাকের পাশেই। ঘুম আসছিল না; ভাবলাম ওদের সাথে কিছুক্ষণ তাসই খেলা যাক। অল্প সময়েই খেলা জমে উঠল। খেলা ভীষণ জমেছে; কখন মধ্যরাত্রি পার হয়ে গেছে টেরও পাইনি। হঠাৎ করে ষ্টেনগানের ব্রাশ ফায়ারের শব্দ শুনতে পেলাম কাছেই। নিরাপত্তার জন্য সবাইকে ট্রাকের নিচে শুয়ে পড়তে বলে নিজেও কাভার নিলাম। ট্রাকের নিচে শোয়া অবস্থা থেকে দেখলাম হাজী সাহেবের রেষ্টুরেন্টকে টার্গেট করেই দু’জন লোক একনাগাড়ে গুলি ছুড়ে চলেছে। পাশে দাড়িয়ে আছে একটা জিপ। মিনিট খানেক গুলিবর্ষণ করে লোক দু’টো জিপে উঠার পর জিপটা উত্তর দিকে চলে গেল। হাজী সাহেবের বাসা দোকানের কাছেই। গোলাগুলির আওয়াজ থামতেই তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নিয়ে। আমরাও বেরিয়ে এলাম ট্রাকের নিচ থেকে। আমাকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে পেয়ে হাজী সাহেব দৌড়ে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বেচারা নিজেকে সামলাতে না পেরে বাচ্চাদের মত কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, “আল্লাহ্‌ মেহেরবান, শুকুর আলহামদুলিল্লাহ্‌।” সত্যিই আল্লাহ্‌ মেহেরবান। অন্যরা বুঝতে না পারলেও আমি আর হাজী সাহেব ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম কি উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া হয়েছিল। পরদিন অতি প্রত্যুষে ট্রাক ড্রাইভার ও অন্যদের গন্তব্যস্থানে চলে যাবার নির্দেশ দিয়ে আমি ঢাকায় ফিরে এলাম। এই ঘটনার ব্যাপারে বিশেষ ঘনিষ্ঠমহল ছাড়া অন্য কারো সাথেই আলাপ করলাম না। এরপর থেকে নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া আমি ঢাকার বাইরে তেমন একটা যেতাম না। বাইরের কাজ দেখাশুনার দায়িত্ব নূর ও স্বপনকেই নিতে হয়।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net