মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 
আমার জীবননাশের তৃতীয় প্রচেষ্টা মিসেস সাজেদা চৌধুরী এবং তার পরিবারের সদস্যরা সবই এর জীবন্ত সাক্ষী।
 
   
     
 

১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথমদিকে এক সন্ধ্যায় আমি, নিম্মী ও নূর গিয়েছিলাম সাজেদা চাচীর বাসায়। চাচীরা তখন থাকতেন ইন্দিরা রোডের একটা দোতালা বাসার উপর তলায়। নিচের তলায় থাকতেন রক্ষীবাহিনীর কর্নেল সাব্বিউদ্দিন। চাচা ও চাচী মানে জনাব গোলাম আকবর চৌধুরী ও সাজেদা চৌধুরী (আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) দুজনই বাড়িতে ছিলেন। পারিবারিক সূত্রে আমরা বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ। আমার শ্বাশুড়ী ও বেগম সাজেদা চৌধুরী পরম বান্ধবী। পুরো সংগ্রামের সময়টা তাদের পরিবার আমার শ্বশুড় মহাশয়ের কোলকাতার বাড়িতেই কাটিয়ে ছিলেন আশ্রয় গ্রহণ করে। কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়লেন না চাচী। খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে প্রায় ১০টা/সাড়ে ১০টা বেজে গেল। বিদায় নিয়ে গাড়িতে এসে উঠলাম। বাড়ির গেট থেকে ইন্দিরা রোড পর্যন্ত একটি সরূপথ। নিচু জমিতে মাটি ফেলে রাস্তা বানানো হয়েছে। গেট দিয়ে বেরুতেই নূর হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠল, স্যার, ওরা গুলি করছে। সামনে চেয়ে দেখি দুজন লোক চাদর মুরি দিয়ে রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে। দুজনারই হাতে ষ্টেনগান। গুলি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যাক গিয়ার দিয়ে তীব্র গতিতে গেটের ভেতরে চলে এলাম এক নিমিষে। আমাদের পিছু হটে যাওয়ায় লোক দুটি বুঝতে পারলো আমরা ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছি। মুহুর্তে তারাও হাওয়া হয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে উপরে উঠে গেলাম দৌড়ে। বেচারী নিম্মীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ছুটে গিয়ে চাচীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল নিম্মী। বাসার সবাই হতভম্ব। কি ব্যাপার, কি হয়েছে? বাবলু, ছোটকা, লাবু, মানু সবাই ছুটে এল। চাচীকে ঘটনা খুলে বললাম। চাচী সব শুনে থ্‌ হয়ে গেলেন। চাচার অবস্থাও অনূরূপ। সাব্বিউদ্দিনের বাড়িতে সিভিল কাপড়ে আর্মড গার্ড থাকে। সে ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনাতে ভীষণভাবে ঘাবড়ে গেলেন চাচী। আমাকে ও নূরকে নিয়ে নিচে গিয়ে সাব্বিউদ্দিনকে সব খুলে বললেন তিনি। সব শুনে কর্নেল সাব্বিউদ্দিন বেশ কিছুটা বিব্রত বোধ করলেন। তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন, দিনকাল ভালো না। কি করা যায় বলেনতো? বুঝলাম ব্যাপারটা কোনমতে কাটিয়ে দিতে চাচ্ছেন তিনি। কিছুক্ষণ পর উপরে ফিরে এসে চাচী ৩২নং ধানমন্ডিতে ফোন করলেন শেখ সাহেবের বাড়িতে। কি কথা হল সেটা বলতে পারব না। তবে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চাচী বললেন, বাসায় ফোন করে দাও আজ রাতে তোমরা ফিরছো না। আমার এখানেই থাকবে। তার উপদেশ মেনে নিয়ে সে রাতটা তার বাসাতেই কাটিয়ে সকালে ফিরে এসেছিলাম। আল্লাহ্‌তায়ালা আর একবার জীবন রক্ষা করলেন। একেই বলে রাখে আল্লাহ মারে কে? সিভিল ড্রেসে রক্ষীবাহিনীর গার্ডরা সর্বক্ষণ পাহারা দিচ্ছে এই বাড়ি। হঠাৎ খটকা লাগল মনে। আততায়ী দুজন ছিলেন সিভিল ড্রেসে এবং তাদের হাতে ছিল ৯এমএম ইন্ডিয়ান ষ্টেনগান। হিসাব মিলে গেল। একই সাথে মনে পড়ে গিয়েছিল এসপি মাহবুবের সর্তকবাণী। আমাদের উপর থেকে সুনজর এখনো যায়নি। আরো সাবধানে চলাফেরা করতে হবে।