মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সহযোদ্ধা

 
   

আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার অর্থ হচ্ছে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র; এখানে সকলের মঙ্গলের জন্য প্রত্যেকেকেই কিছু কিছু ছাড় দিতে হয়। উপরোক্ত কল্যাণমূলক নীতির কারণে প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশই জনগণের কল্যাণের জন্য সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালায়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশ দুটিই ঘোষিতভাবে গণতান্ত্রিক দেশ এবং তাই ঐ লক্ষ্য হাসিল করতে চায়। তাছাড়া এই দুটি ভগ্নি দেশের বৈসাদৃশ্য নয়, স্বাভাবিক মিল আছে অনেক কিছুতেই। তাই তাদের অসুবিধা ও দূর্ভাগ্যের জন্য ঔষধ পত্রাদি একই ধরনের।

এই দুটি দেশের সাধারণ সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছেঃ-
(ক) সন্ত্রাসবাদ : এটি একটি পুরাতন রোগ যা কিনা দুদেশেই আছে। পশ্চিমারা হালে কেবলমাত্র এই বিষয়টির উপর নজর দিয়েছে, অথচ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সেই সূচনাকাল থেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়। ভারত স্বাধীন হবার পর তার আশেপাশের সবগুলি পড়শী দেশে রক্ত গঙ্গার সূচনা করে এবং এভাবে ছোট ছোট সবাইকে গলা টিপে ধরে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়। যেহেতু ভারত উত্তরাধিকার সূত্রে বৃটিশদের নিকট থেকে সুসজ্জিত বিদেশ অফিসের সবকিছুই তার দখলে পেয়ে গিয়েছিল, তাই দিয়ে সে নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত সবগুলি দেশকেই ভয়ভীতি দেখানোর মধ্য দিয়ে তাই করতে থাকে। পাকিস্তানকে এভাবেই ভারত পাকিস্তানের প্রাপ্য মিলিটারী যন্ত্রপাতি, নগদ অর্থ, ইত্যাদি না দিয়ে সেই সূচনাতেই পাকিস্তানকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের নিয়োগ করে তারা সেই সময়ে যারা জীবনের ভয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যাচ্ছিল তাদের হত্যা করে। যে কোন সংজ্ঞায় এসব ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়কালে তারা ভয়ানক অপপ্রচার চালায় যার ফলে পাকিস্তান ভেঙ্গে দু’টুকরো হয়। আধুনিককালের মধ্যে এ ছিল একটি সুস্পষ্ট ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
ঘটনা সেখানেই শেষ হয় না। এখনও বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশেই ভারতীয় সন্ত্রাস অব্যাহতভাবেই চলছে।

(খ) পানির অভাবঃ উভয় দেশেই এই সমস্যা বিরাজমান। দূর্ভাগ্যবশতঃ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশেরই নদীগুলির পানির উৎস ভারতে। আল্লাহর দেয়া এই দান ভারত চরম অপরাধ করে এমনভাবে উজানে নিয়ন্ত্রণ করছে যে যার ফলে যেন এই দুটি দেশই ভারতের কথা সুবোধ বালকের মত শোনে।

(গ) অর্থনৈতিক সমস্যাঃ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থনীতির মধ্যে সামঞ্জস্য আছে। উভয়ের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক এবং সেই সাথে নব কৃষি শিল্পজাতও বটে। এই দুই দেশেরই শিল্প উন্নয়ন নির্ভর করে ভিতরে ও বাইরে সংরক্ষণের উপর। অভ্যন্তরীনভাবে সরকারি সংরক্ষণ নীতি - যেমন সাবসিডি দিয়ে এবং বাইরের প্রতিযোগিতার মুখেও সংরক্ষণ করা। দূর্ভাগ্যবশতঃ উভয়েই ভারতের সস্তা শিল্প দ্রব্যের প্রতিযোগিতার শিকার। ভারত সার্ক (SAARC) এর সুবিধাদি নিয়ে সাপটা (SAPTA) এর ভিতর দিয়ে ব্যবসায় এমএফএন (Most Favoured Nation) এর আওতায় তার নিজের মালামাল উভয় দেশে বিপুল আকারে বাজারজাত করে এই দু'দেশের শিল্প উন্নয়ন ধ্বংস করে দিতে চায়।

(ঘ) নিরাপত্তাঃ নিরাপত্তা প্রতিদিনের জন্য প্রতিজন মানুষের একটি মৌলিক প্রয়োজন। শুধু মানুষেরই নয় বরং আর সব নিম্নশ্রেণীর প্রাণীরও নিরাপত্তা প্রয়োজন। তাদের পূর্ণভাবে বেঁচে থাকাই কঠিন নয়, বরং পূর্ণ বিকাশ নিরাপত্তাহীনতায় সম্ভব নয়। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান উভয় দেশের মানুষই ভারতের পক্ষ থেকে সর্বক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এ কারণে উভয়েই এমনকি এশিয়ার বাইরের শক্তির কাছে নিরাপত্তার সন্ধান করছে। ফলে এশিয়ার অন্য সমপ্রদায়ের মানুষও অনেক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

(ঙ) সীমানা বিবাদ : কোন জাতির নিরাপদ ও শান্ত সীমানা জাতির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় বটে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশেরই বিশাল সাধারণ সীমানা বিদ্যমান। স্ব-নিয়োজিত ভারত মাতার স্বপ্নচারীরা প্রায়ই দুটি দেশের সীমানায় সময়-সুযোগমত উত্তেজনা সৃষ্টি করে। কোন আর্ন্তজাতিক নিয়ম নীতি, কিংবা কোন নৈতিকতা-মূল্যবোধ এযাবতকাল ভারত ওসব দেশের মানুষের প্রিয় জন্মভূমির বিরুদ্ধে অপমানজনক কার্যক্রম চালানো থেকে বিরত রাখেনি।

(চ) চোরাচালান : চোরাচালান যে কোন দেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং নিরাপত্তার জন্য খুবই অনাকাঙ্খিত বিষয়। অভ্যন্তরীন কোন কোন কারণে প্রতিটি দেশেই কিছু কিছু দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়। চোরাচালান এসব দ্রব্যের সরবরাহ সহজ করে থাকে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই ওসব নিষিদ্ধ দ্রব্যাদি ভারতে উৎপাদন ও ভারত থেকে চোরাচালান পথে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে আসে। ধর্মীয় কারণে উভয় দেশই ওসব জিনিস দেশে আসতে দিতে চায় না। ভারতে তেমন কোন কারণ না থাকার জন্য এবং অন্য প্রতিবেশী দেশেও কোন নিষেধাদি ধর্মীয় বা নৈতিক কারণে না থাকার ফলে তাদের কোন সমস্যাদি হয় না। ফলে সে দেশের প্রশাসনের বদৌলতে সেসব নিষিদ্ধ দ্রব্যাদি তারা অনায়াসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে চোরাচালানী পথে সরবরাহ করে।

উপসংহার : উপরে সংক্ষেপে উল্লেখিত সমস্যাগুলির চরিত্র এমন যে, তাদের বিরুদ্ধে একই ধরণের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নেতৃত্বের এখন জরুরী প্রয়োজন হচ্ছে এই যে, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য হাত মিলিয়ে যৌথভাবে কাজ করা।

সময়কাল-২০০৫