মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

বিপজ্জনক রশিতে হাসিনা হাঁটছেন

 
   

শেখ হাসিনার বন্ধুরা কি তাকে পরিত্যাগ করছেন? এই প্রশ্ন আওয়ামী লীগের এবং শেখ হাসিনার নিজেরও বটে। হাসিনার পারিবারিক ধারাবাহিকতা ভারতের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য, যেমন কিনা পারিবারিক অন্য সব বিষয়াদিও তারই হস্তগত শক্তভাবেই। কিন্তু ভিজে সাবান যেমন হাত থেকে পিছলে যায় তেমনি তার হাত থেকে সবই যেন ফসকে যাচ্ছে।

তার প্রতি বিরূপ হবার জন্য শুধুমাত্র ভারতকে দোষ দেয়া যায় না। তার নিজের দোষও এ ব্যাপারে কম নয়; বরং অনেক বেশী হাসিনা। তার মদদ দাতারা যেমন আশা করেছিল উত্তরাধিকার ধারাবাহিকতায় স্বার্থ রক্ষা করবে তা হয়নি। সজীব ওয়াজেদ জয় এমন কোন করিৎকর্মা গুণ দেখাতে পারেনি যাতে সে প্রমাণ করতে পেরেছে যে সে অনেক কাজের মানুষ। বরং সে আমেরিকায় এমন জীবন ধারন ও চলনবলন করেছে যার ফলে তাকে এমন কি জেলে পর্যন্ত থাকতে হয়েছে ওদেশের আইন ভঙ্গকারী উচ্ছৃংখল ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে। পারিবারিক ঝগড়াঝাটিও জয়ের চরিত্রকে কলুষিত করেছে। জয়কে নিয়ে শেখ রেহানার যথেষ্ট সন্দেহ আছে যে সে আদৌ যথার্থ উত্তরাধিকারী হতে পারে কি না। হাসিনার মদদদাতা মুরুব্বীরাও জয়কে পছন্দ করছে না বরং গভীরভাবে অপছন্দ করছে। ১৯৭৫-৮১ সময়কালে হাসিনা যখন দিল্লীতে ‘র’ এর একটি বাড়ীতে বসন্ত বাহার এ থাকতেন তখন একজন শিখ মেয়ের সাথে কিশোর জয়ের ভালবাসা লেনদেন হয় (হয়ত লাগিয়ে দেয়া)। সে মেয়েটি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে অস্বীকার করলে সে বিয়ে আর হয়নি। কেউ কেউ বলেন যে, সেই শিখ মেয়েটি মুসলমান হয়ে জয়কে বিয়ে করতে রাজী হয়নি এজন্য যে জয় ভবিষ্যতে মায়ের বা পরিবারের পথ ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করতে পারবে না। তাছাড়াও ২০০৭ সালে হাসিনার নির্বাচনে জিতবার সম্ভাবনাও যে ক্ষীণ ছিল তাও তার বন্ধুদের বিরূপ হওয়ার একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে। এ কারণেই তারা বাংলাদেশে আর একটি রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার জন্য পরিকল্পিত ও অঢেল অর্থ ব্যয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম গ্রহন করেছিল।

সময়মত নির্বাচন অনুষ্ঠান ওরা অসম্ভব করেছিল। হিটলার এবং কমিউনিষ্ট স্ট্যালিন তাদের কবরে শুয়ে থেকে নিশ্চিতভাবেই অস্বস্তি বোধ করেছিলেন এজন্য যে, তারাও বাংলাদেশের এই হাসিনার রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার কাছে হেরে যাচ্ছিল।

একটু ভিন্নভাবে তাকালে সংক্ষেপে বলা যায় যে, বাংলাদেশ যেন এই খেলায় পূর্ণভাবে হেরে যাচ্ছিল। এমন শাসনতান্ত্রিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল যে, যে শাসনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বহু কষ্টে নির্মিত হয়েছিল, তা নিঃশেষ হতে চলেছিল। জানামতে বাংলাদেশের বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল; পোষাক শিল্পে কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক অর্ডার বাতিল হয়েছিল, আন্দাজ করুন কে সেসব অর্ডার হাইজ্যাক করেছিল? বাংলাদেশের সেই ‘দয়ালু প্রতিবেশী’ ছাড়া অন্য আর কেউ কি? বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ভয়ে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল এবং অব্যাহত ধর্মঘট অবরোধ অর্থনীতির প্রতিটি সেক্টরে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

পরিশেষে এবং খুবই জরুরী বিষয় ছিল এই যে, অসংখ্য নিরীহ মানুষের জীবননাশ হয়েছিল-কোন বড় কাজে নয়, অনেকের বাড়ীঘর ধ্বংস করা হয়েছিল, বাংলার মানুষের গরীবরাই বরং বেশী করে ধ্বংস হয়েছিল।

হাসিনার দুঃখের কথায় ফিরে আসলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, হাসিনা যখন সরকারে অথবা বিরোধী আসনে বসে থেকে তার বিদেশী মদদ দাতাদের সাহায্যাদি পেয়েছিলেন, তারা এখন তার থেকে দূরে সরে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের অসন্তোষজনক অবস্থানে হাসিনাকে যদি দ্বিতীয় সারির নেতা হিসেবে সংসদে বসে থেকে অন্যদের বক্তব্য শুনতে হয়, অথবা চিরতরে তার নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত রুদ্ধ হয়, তাতে বোধ করি অবাক হবার কিছু থাকবে না।

 

সময়কাল-২০০৫