শিশু ভাই এলেন ব্যাংককে

এর কয়েকদিন পর এসে পৌঁছলেন জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশু, সবার প্রিয় শিশুভাই। তার সঙ্গে রয়েছেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী পাকিস্তান আমলের ঝানু কূটনীতিক খাজা কায়সার, আমার আব্বার বন্ধু ও সহপাঠী। তার চৌকস দূতিয়ালির ফলেই আয়ুব খানের পক্ষে সম্ভব হয়েছিলো ষাটের দশকে গণচীনে তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করা।

প্রথমে আমাদের খটকা লেগেছিল তাকে জেনারেল জিয়া কি চর হিসাবে শিশুভাই এর সাথে পাঠিয়েছে নাকি! না, তা নয় তিনি ফিরে যাচ্ছেন তার কর্মস্থল রেঙ্গুনে। পরদিন সকালেই তার ফ্লাইট। রাতের খাবার আমরা একসাথেই খেলাম। তিনি খেতে খেতে সবার কুশলাদি জেনে বললেন, আল্লাহ্ যা করবেন তাতেই মঙ্গল। খাওয়া শেষে বিদায় নেবার আগে তিনি আমাকে একান্তে নিয়ে পকেট থেকে একটা লেফাফা বের করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, শামসু মানে তোমার আব্বা এটা তোমার আর নিম্মির জন্য পাঠিয়েছেন। বাসার সবাই ভালোই আছে, তবে তোমাদের নিয়ে চিন্তিত। আমি রেঙ্গুন পৌছেই তোমাদের কুশলবার্তা উনাকে জানিয়ে দেবো। পরদিন সকালে শিশুভাই তাকে এয়ারপোর্টে বিদায় জানিয়ে হোটেল শেরাটন ছেড়ে আমাদের এখানে শিফট করলেন।

অনেকদিন পর শিশুভাইকে কাছে পেয়ে সবাই খুশি। মেয়েরা কিছুটা অখুশি। তাদের অভিযোগ, টনি ভাবীকে কেন নিয়ে আসলেন না শিশু ভাই। শিশু ভাই বললেন, ভাবীও ভীষণভাবে আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু অফিসিয়াল কাজে এসেছেন তাই সাথে করে আনা সম্ভব হয়নি। দুপুরের খাবার খেতে তাকে নিয়ে গেলাম ছোট্ট একটা বার্মিজ রেস্তোরাঁয়। পরিবারের সবাই মিলে হোটেলটা চালায়। সবাই ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বলতে এবং বুঝতে পারে রক্তের সংমিশ্রণের ফলে। তাই আমাদের সাথে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশী তরিকায় মাছ-ভাত রান্না করে খাওয়ায় পরম যত্ন করে। আমরা তাদের কাছে খদ্দের নই, যেন তাদের পরিবারেরই সদস্য। আমাদের শ্রদ্ধেয় অতিথির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই সবাই তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানালো। শিশুভাই বললেন

যেখানেই যাও জমিয়ে বস দেখছি!

কি আর করি বলুন, আপনারা আমাদের আপনজন হয়েও ত্যাজ্য করে নির্বাসনে রেখেছেন। তাই এদেরকেই আপন করে নিয়েছি। সবাই মিটিমিটি হাসছিলো আমার কথার ধরনে। শাহরিয়ার তার স্বভাবসিদ্ধ কৌতুকের সাথে বললো

শিশুভাই, যেমন বুঝা যাচ্ছে, মনে হয় এখন থেকে বিদেশের সবখানেই আপনজন খুঁজে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।

কেনো তোমরা কি আর দেশে ফিরবে না সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছ নাকি?

না তা নয়। তবে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার এখতিয়ার এখন আমাদের আছে কি?

শাহরিয়ারের কথায় শিশুভাই কিছুটা বিব্রত বোধ করছিলেন দেখে নূর কথার মোড় ঘুরিয়ে বললো

দেশি মাছ,ভাত আর ডাল আসুন, শুরু করা যাক। সবাই খাবারে মন দিলাম। ভূরিভোজনের পর বার্মিজ পরিবারের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। মেয়েরা পান-সুপারি মশলা পরিবেশন করে কিছুক্ষণ খোশ আলাপের পর শিশুভাই-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এরপর শুরু হল আসল কথাবার্তা। আমিই শুরু করলাম

কি শিশুভাই, বলেছিলাম না আসার পথে রেঙ্গুনে তৈরি থাকবেন, ডাক পড়বে! তখন আপনি কিন্তু আমার কথাটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেননি তাই না? হ্যাঁ, কিন্তু বলতো কি করে সবকিছু ঘটল? এখনো বুঝে উঠতে পারলেন না এটা কি করে বিশ্বাস করি বলুনতো? আপনি এখন ক্ষমতাসীনদের একজন। যাক, এবার বলুন আপনার সাথে আমাদের কথাবার্তা কি ভাবে করা হবে, আমাদের প্রিয় শিশুভাই হিসাবে নাকি জিয়ার প্রতিনিধি হিসাবে? এখন দেশে আপনার যেই পরিচিতিই হয়ে থাক আমরা কিন্তু আমাদের শিশুভাইকেই বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করবো।

তাহলে আমিও খুশি হব খোলাখুলি আলাপ করতে পেরে।

Great dear old Shishu Bhai! এবার বলেন আপনার বক্তব্য।

সেনাবাহিনীতে পূর্ণ শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারছেন না জেনারেল জিয়া। তিনি এই ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য চান। নূরের প্রশ্ন

কেনো পারছেন না? সেনাবাহিনীতে তার জনপ্রিয়তা আর পেশাগত যোগ্যতার জন্যই নাকি প্রেসিডেন্ট মোশতাক ১৫ই আগস্ট পটপরিবর্তনের পর তাকে সেনা প্রধান বানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিদেশের দূতাবাসগুলোতে ঘুরে ঘুরে সেটাই বেচে চলেছেন তিনি। সেটাই যদি সত্যি হয় তবে সমস্যাটা কোথায়? বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারছি না শিশুভাই। তাই আর একটু খোলাসা করে বলুন, পাইপের তামাকে আগুন ধরাতে ধরাতে বলল স্বল্পভাষী নূর।

আমি জানি দেশের বাইরে থেকেও তোমরা দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার চেয়ে বেশি না হলেও কম জান না। তাই জিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি তাদের সাথে সরাসরি কথা না বলে আমাকে কেনো পাঠাচ্ছেন? কিন্তু জিয়া আমার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, তোমাকেই যেতে হবে। তাই কোনও গত্যন্তর না থাকায় আমাকে আসতেই হল। আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই, আমি জিয়ার পক্ষে ওকালতি করতে আসিনি। তিনি তোমাদের যা বলতে বলেছেন, আমি সেটাই বলবো। আর তোমরা জবাবে যা তাকে জানাতে বলবে আমি ঠিক সেটাই তাকে জানাবো। এ ছাড়া পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে যা কিছুই আমরা আলোচনা করি না কেনো সেটা সীমিত থাকবে শুধু আমাদের মধ্যেই। এরপর নূরের কথার জবাবে শিশুভাই বললেন, জিয়ার ধারণা তোমাদের অধীনস্থ ইউনিটগুলোর বিপ্লবী অফিসার এবং সৈনিকরা মনে করছে জিয়া আগস্ট বিপ্লবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। কিছুক্ষণ পর পাশা বলা শুরু করলো

১৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর শফিউল্লাহকে পদচ্যুত করে কারা জিয়াকে চীফের পদে অধিষ্ঠিত করেছিল প্রেসিডেন্ট মোশতাকের মাধ্যমে সেটা দেশবাসীর অজানা নয়। মোশতাক কি সেনা পরিষদের মনোনীত রাষ্ট্রপতি ছিলেন না? যেই বিপ্লবীরা নিজেদের জানবাজি রেখে ৭ই নভেম্বরের বিপ্লব ঘটিয়ে খালেদ-চক্রকে পরাস্ত করে জিয়াকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করে চীফের পদে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলো, যারা কর্নেল তাহেরের জিয়াকে হত্যা করার সব ষড়যন্ত্র বানচাল করে জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখলো, যাদের জোরে কর্নেল তাহের এবং তার অধীনস্থ বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার হঠকারি পদক্ষেপের পর তাদের শায়েস্তা করতে পারলেন, তারা সবাই সেনা পরিষদের সদস্য সেটা তিনি ভালো করে জেনেও কি করে রটাচ্ছেন যে, সেনা পরিষদের সাথে তার কোনও সম্পর্কই নেই? যুদ্ধকালীন সময় তিনি স্বেচ্ছায় আমাদের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী হয়েই তো কোরআন শপথ নিয়ে আমাদের গোপন সংগঠনের একজন হয়েছিলেন। এরপরই আমরা তাকে আমাদের মধ্যমণি হিসাবে গ্রহণ করে আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতা এগিয়ে নিয়ে চলেছিলাম, ফলে, স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীতে গড়ে তুলতে পেরেছিলাম গোপন সংগঠন সেনা পরিষদ। এতদিনের পুরনো সম্পর্কের পরও যদি কোনও অবিশ্বাস জন্মে থাকে তবে তার একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ নিশ্চয়ই থাকবে সেটাই স্বাভাবিক কিনা বলেন?

খুবই স্বাভাবিক।

তাহলে কারণটা কি বলে মনে হয় আপনার?

তুমিই বলো?

ঠিক আছে আমিই বলছি। কারণটা হচ্ছে মুনাফিকাত মানে বিশ্বাসঘাতকতা।

নূর আবার মুখ খুললো

খন্দকার মোশতাক জিয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সাংবিধানিক জটিলতার কারণ উত্থাপন করে যদিও আসল কারণটি ছিল ভিন্ন। অনুরোধ জানানোর পর মোশতাক জিয়াকে বলেন, তার হাতকে শক্ত করার প্রয়োজনে আমাদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য। জবাবে জিয়া তাকে কি বলেছিলেন জানেন? বলেছিলেন, এই বিষয় চিন্তাভাবনা করেই নাকি তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী জনাব মোশতাক জবাব শুনেই বুঝতে পারেন বর্তমানের জিয়া আগের জিয়া নয়। এই জিয়া এক অন্য জিয়া। এটাই ছিল অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের মূল কারণ। তার মনে জিয়া সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিয়েছিলো। জেনারেল জিয়া আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনবেন না তার নিজের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার স্বার্থেই। কথাবার্তার ধরনে পরিবেশ গম্ভীর হয়ে উঠেছে। প্রয়োজনে চা, কফি, স্ন্যাক্স পরিবেশন করে যাচ্ছে ওয়েটার। আমি পরিবেশটা হাল্কা করার জন্য হেসে বললাম

এসব প্রশ্নের জবাব আপনার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় সেটা আমরা বুঝতে পারি। এখানে উপস্থিত সবাই সাবালক একমাত্র আপনিই নাবালক। আমার কথায় শিশুভাই সহ সবাই হেসে উঠলো। এবার বলেন নাবালক ভাই, যেখানে জিয়া আমাদের ঘটনাস্থলেই উপস্থিতি চাইছেন না সেখানে তিনি আমাদের সাহায্য চাইছেন। এই ধরনের অদ্ভুত অনুরোধের মোজেজাটা কি?

সেটা আমি জানিনা। আমি শুধু সেটাই তোমাদের বলবো যা তিনি বলতে বলেছেন। জিয়া চাচ্ছেন তোমরা এই মুহূর্তে দেশে না ফিরো। তিনি মনে করছেন, এতে সামরিক বাহিনীতে আর একটি বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সেটা হবে দেশের জন্য মারাত্মক ভাবে ক্ষতিকর। প্রতিবেশী দেশ ভারত তো বাংলাদেশ ঘিরে প্রস্তুত হয়েই আছে ঢুকে পড়ার সুযোগের অপেক্ষায়। তোমাদের এই মুহূর্তে দেশে ফিরিয়ে নিলে শুরু হতে পারে একটি ক্ষমতার লড়াই, আর সেই সুযোগেই ভারত দখল করে নেবে বাংলাদেশ। তাই জিয়া চাচ্ছেন তোমরা আরও কিছুদিন দেশের বাইরে থাকো। অবস্থা যখন স্থিতিশীল এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠবে তখন জিয়া তোমাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। ব্যাংককে তোমাদের অবস্থান নিরাপদ নয়, তাই একটি ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তোমাদের লিবিয়ার কর্নেল গাদ্দাফি রাজকীয় মেহমান হিসাবে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন। এখন তোমরা চাইলেই সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এতক্ষণে জিয়ার দূত হিসাবে আসল বিষয় উত্থাপন করলেন শিশুভাই। Let me be very candid, even now, I am least interested to serve in the army and I had spelled that out to Zia in no uncertain words. I had put up a condition before accepting the responsibility that he bestowed on me that the day immigration papers to States would be in my hand that very day he shall have to release me which he agreed. May I on behalf of all present here take the liberty to ask you what assignment Zia had given you? He asked me to help to organize his political party. There you are, isn’t it a proof that Zia is up to a long haul?

Yes, you are correct. Thanks, for your frank statement.

কথায় কথায় বেলা গড়িয়ে রাত হয়ে গিয়েছে। নিম্মিরা সবাই এসে জানালো, রাতের খাবার পরিবেশিত হয়েছে। শুনে সবাই শিশুভাইকে নিয়ে পৌঁছলাম খাবার ঘরে। প্রিয় শিশুভাই এর জন্য মেয়েরা আজ বিশেষ খাবারের আয়োজন করেছে। খাবারের বহর দেখে শিশুভাই বললেন একি করেছো তোমরা!

প্রিয়জনকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

রান্নাবান্না ভালোই। তাই সবাই তৃপ্তির সাথেই খাওয়া শেষে ফিরে এলাম বসার রুমে আবার। পান সিগারেটের সাথে শুরু হল দ্বিতীয় পর্ব রিল্যাক্সড পরিবেশে। আমি শুরু করলাম এবার।

শিশুভাই, আপনি আমাদের সবারই অতিপ্রিয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই আপনি চাকুরি ছেড়ে দেবার চেষ্টা করছিলেন। এখনও সেই সিদ্ধান্তে আপনি অটল বল্লেন, তবে বাস্তবতা হচ্ছে জিয়া আপনাকে ব্যবহার না করে রেহাই দেবেন না। ভবিষ্যতে ঘটনা প্রবাহ যেভাবেই এগোক না কেনো আপনাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেই হবে। আপনার উপর অর্পিত দায়িত্বের পরিপ্রেক্ষিতে কতগুলো কথা আমি বলবো যার অনেকটাই আপনি জানেন আবার অনেকটা জানেন না। অজানা বিষয়গুলো জেনে নিলে আপনার দায়িত্ব পালনে সুবিধা হবে। স্বাধীনতার পর জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেবার কয়েক বারই মুজিব সরকার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল কাদের চাপে সেটাও আপনার জানা আছে। এরপর শফিউল্লাকে পদোন্নতি দিয়ে জিয়াকে সুপারসিড করে সেনা প্রধান বানিয়ে সরকার মনে করেছিল, এই অপমান সইতে না পেরে জিয়া নিজেই চাকুরিতে ইস্তফা দিবেন। জিয়া নিজেও তেমনটিই ভাবছিলেন। সেইক্ষণে হঠাৎ করে DCAS-এর একটি পদ সৃষ্টি করে সেই পদে জিয়াকে শফিউল্লার সমপদমর্যাদায় নিয়োগ দিতে কেনো বাধ্য হয়েছিলেন শেখ মুজিব সেটাও আপনার এবং জিয়ার জানা আছে। এরপর ঘটে ঐতিহাসিক ১৫ই আগস্টের অবিস্মরণীয় সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা। যার ফলে পতন ঘটে বাকশালী স্বৈরতন্ত্রের। এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জিয়াকে আমরাই অধিষ্ঠিত করেছিলাম সেনাপ্রধান হিসাবে। আগস্ট বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় খালেদ-চক্র ঘটিয়ে বসে ২-৩ নভেম্বরের প্রতিক্রিয়াশীল ক্যু’দাতা, বন্দী করা হয় জেনারেল জিয়াকে। ক্যু’ শুরু হয় রাত ১২টায়। খবর পাওয়া মাত্রই আমি আর নূর গিয়ে উপস্থিত হই ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল হেডকোয়ার্টারে। সেখানে পৌঁছেই আলোচনায় বসি ব্রিগেডিয়ার খালেদ, কর্নেল শাফায়াত, মেজর হাফিজ ও তাদের দোসরদের সাথে।

ম্যারাথন সেশনের মাধ্যমে জেনারেল জিয়ার প্রাণ এবং দেশকে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচিয়ে স্বেচ্ছায় ৩রা নভেম্বর রাত ১০টায় রুবি ভাবী ও নিলু ভাবীকে সাথে করে দেশ ত্যাগ করেছিলাম কৌশলগত কারণে। আসার আগে কর্নেল তাহের জানালেন, খালেদের বিরুদ্ধে যে কোন উদ্যোগে তিনি ও তার অধীনস্থ বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে সেনা পরিষদের সাথে সহায়ক শক্তি হিসাবে যোগ দিতে ইচ্ছুক। সেই প্রেক্ষাপটে গণভবনে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদ বিরোধী অভ্যুত্থানের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছিল দুইপক্ষের সর্ব সম্মতিক্রমে। এই পটভূমিকায় সুপরিকল্পিত ভাবেই ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার আর একটি সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। আপনি কি মনে করেন এ সমস্ত ঘটনাগুলোর সব কয়টি ঘটনাই ছিল দৈবক্রমে ঘটে যাওয়া ঘটনা? আপনার মতো একজন বিচক্ষণ বুদ্ধিমান মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের পক্ষে বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে এসব ঘটনাগুলো ছিল একই সূত্রে গাঁথা এবং এর পেছনে মুখ্য ভূমিকায় কাজ করেছে শক্তিশালী সংগঠন সেনা পরিষদ। মুজিবনগর সরকার যখন শফিউল্লাহ আর খালেদের নেতৃত্বে শুধুমাত্র দু’টি নিয়মিত ব্রিগেড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় তখন কোন শক্তির চাপের মুখে সেই সিদ্ধান্ত বদলিয়ে জিয়ার নেতৃত্বেও আর একটি ব্রিগেড গঠন করতে বাধ্য হয়েছিলো প্রবাসী সরকার? মেজর জলিলকে সেক্টর কমান্ডারের পদ থেকে সরিয়ে নেবার জারিকৃত আদেশ কাদের চাপে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলো তাজুদ্দিনের সরকার? এবার একটা মজার কথা শুনুন। ৭ই নভেম্বর যখন মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে বিপ্লবীদের একটি দল জিয়াকে মুক্ত করার জন্য ট্যাঙ্কসহ মইনুল রোডের বাসায় যায় তখন জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়া ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বিপ্লবীদের কাছে মিনতি করছিলেন, তাকে নিয়ে আর টানাহ্যাঁচড়া না করতে আর অনুরোধ জানাচ্ছিলেন পদত্যাগী চীফ হিসাবে তার পেনশনের ব্যবস্থাটা করে দেয়ার জন্য।

কারণ, ২-৩রা এবং ৭ই নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে তার কোনও ধারণাই ছিল না। প্রিয় শিশুভাইকে আমাদের তরফ থেকে অনুরোধ করবো এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে। আমাদের বিশ্বাস, আন্তরিকভাবে সত্যের অনুসন্ধান করলে সব জটিল রহস্যই উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে আপনার পক্ষে। শিশুভাই, আপনি একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিসাবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, পরিকল্পিতভাবে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার ফলেই জেনারেল জিয়া আজ ক্ষমতার কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছেন, শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণে নয়। আপনি অবগত আছেন যে যুদ্ধের আবরণে রাজনৈতিকভাবে সচেতন আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ নিয়ে ভারত যে সুদূরপ্রসারী নীলনকশা প্রণয়ন করেছিল তার বিরোধিতায় এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সুচিন্তিত নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে যখন সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলো তখন আজকের জেনারেল জিয়া ভারতীয় এবং প্রবাসী সরকারের চক্ষুশূল হয়ে ডাস্টবিনে ছিলেন নিক্ষিপ্ত। সেই বৈরি, কোণঠাসা অবস্থায় আমাদের নীতি-আদর্শ মেনে নিয়েই জিয়া শপথ নিয়েছিলেন আমাদের সাথে একযোগে কাজ করতে। এরপর থেকে তার সাথে ওয়াদা মোতাবেক আমাদের সম্পর্কটা গোপন রেখেই আমরা সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছিলাম।দেশবাসী এ সমস্ত বিষয়ে অজ্ঞ হলেও জেনারেল জিয়া কিন্তু ঠিকই জানেন, কারা তার চারপাশে বর্ম হয়ে ধাপে ধাপে তাকে ক্ষমতার কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত করেছে। একই সাথে তিনি ভালোভাবেই অবগত আছেন সেই শক্তিকে সংগঠিত করে দৃঢ়ভিত্তির উপর দাড় করিয়েছিল কারা। কি ছিল তাদের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা। জিয়া কি করছেন বা কি করবেন সে সম্পর্কে আপনাকে প্রশ্ন করে বিব্রত করবো না। তবে একটি কথা বিনয়ের সাথেই না বলে পারছিনা বলে ক্ষমা করবেন, প্রাণের দায়ে যারা ‘৭১-এ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো তাদের থেকে আমরা কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী। আমরা সবাই পাকিস্তান আর্মিতে কাজ করেছি। তাই একে অপরের মেধা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে অনেকটাই অবগত। ১৯৭১ সালে ২৫-২৬ শে মার্চ কালরাতে পাক আর্মি যখন আচমকা পূর্ব পাকিস্তানে ‘অপারেশান সার্চ লাইট’ শুরু করে তখন আমরা সবাই পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন ইউনিটে চাকুরিরত ছিলাম। আমাদের কিন্তু গুলির নিশানা বানানো হয়নি। প্রত্যাগত সবাই প্রায় যুদ্ধের পুরোটা সময় বহাল তবিয়তেই চাকুরি করেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। পরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফিরে এসে প্রায় সবাই সামরিক বাহিনীতে পুনর্বাসিত হয়েছিলেন। আমাদের জন্যও তেমনটি করা সম্ভব ছিল।আমরা কিন্তু ভবিষ্যতে কি হবে তার তোয়াক্কা না করে যুদ্ধের প্রারম্ভেই স্বেচ্ছায় পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলাম জীবনের ঝুঁকি নিয়েই। যুদ্ধকালীন পুরো সময়টাই আমরা কাটিয়েছি দেশের মাটি আর সাধারণ মানুষের সাথে। অতএব জেনারেল জিয়াকে বলবেন দেশ আর জনগণের স্বার্থে ভবিষ্যতে ইতিবাচক কোনও অবদানের সুযোগ না পেলেও দেশ ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কোনও হঠকারি পদক্ষেপ কখনোই আমরা নেবো না। এর প্রমাণ আজঅব্দি আমরা দিয়ে আসছি। নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে কিংবা ক্ষমতার লোভে আমরা কিন্তু কিছুই করিনি, কখনো করবোও না। মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে, নেয়ার চেয়ে দেয়ার আনন্দ অনেক বেশি। ব্যক্তিস্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের ফসল ব্যবহার করা মোনাফেকির সমতুল্য। আল্লাহ্ শঠতা এবং মোনাফেকি পছন্দ করেন না। যুদ্ধের সময় থেকেই যারা জিয়াকে সুরক্ষিত রেখে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসিয়েছে আজ তিনি তাদের নিরাপত্তা দিতে উদ্যোত হয়েছেন! আমাদের নিরাপত্তার জন্য জেনারেল জিয়ার উৎকণ্ঠার কথা শুনে খুশি না হয়ে বরং অস্বস্তি বোধ করছি। এই বুদ্ধি নিয়ে তিনি দেশের ভাগ্যবিধাতা হবার চেষ্টা করছেন! এ ভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা না করলেই তিনি পারতেন। তিনি যেখানে নিজস্ব নিরাপত্তার আতঙ্কে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আমাদের সুদূর মরুভূমিতে নির্বাসিত করার বন্দোবস্ত করছেন সেখানে আমাদের নিরাপত্তার কথাটা মানায় না। সে যাই হোক, তাকে বলবেন আমাদের নিয়ে তার দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। তার ঘরের শত্রু বিভীষণরাই তাকে নিরাপত্তাহীন করে তুলবে এক সময়। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে আমাদের রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে লিবিয়াতে পাঠানোর যে ব্যবস্থা তিনি করছেন, সেটা আমরা গ্রহণ করবো কি করবো না, সেই সিদ্ধান্তটা আমরা পরে আপনাকে জানিয়ে দেবো। পরিবেশ হাল্কা করার জন্য বললাম শিশুভাই আমার একটা প্রস্তাব আছে। যদি অনুমতি দেন তবে বলি। নিশ্চয়ই। Guys’ attention please, tonight is very special for all of us as our dear Shishu Bhai is here us so, let’s take him to Pat Pong to enjoy Bangkok by night, what do you say? সবাই উল্লসিত হয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠল

Great!
What do you say Shishu Bhai? Absolutely fantastic idea indeed!

তার জবাব শুনে মেয়েরা বলে উঠলো

What about us?

Sorry madams, men only. So, allow me to say on our behalf a very good night and sleep tight. আমার কথায় মেয়েরা মুখ টিপে হেসে শিশুভাই-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শুভরাত্রি জানিয়ে বেরিয়ে গেলো। পরদিন বিকেলের ফ্লাইটে শিশুভাই ঢাকায় ফিরে যাবেন। তাই আমি ওই প্রস্তাবটা করেছিলাম। রশিদ এবং ফারুকের সাথে শিশুভাই-এর তেমন কোন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। তাই তাদের ব্যবহারে তেমন উষ্ণতা দেখা যায়নি। শিশুভাইকে বিদায় দিয়ে ফিরে এসে আমাদের নিজস্ব আলোচনা শুরু হল। আলোচনার শুরুতেই রশিদ আর ফারুক টিপ্পনি কেটে বললো

তোমাদের জিয়া এমন গাদ্দারি করতে পারে ভেবেছিলে কখনো? কর্নেল তাহেরের সাথে তোমাদের ঘনিষ্ঠতার ফলাফলও তো সুখকর হল না। তাহেরের সাথে আমাদের সম্পর্কের কথা ‘যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি’-তে বিস্তারিত লিখেছি।সেনা পরিষদের সাংগঠনিক তৎপরতা, জিয়ার সাথে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক এবং দেশব্যাপী রাজনৈতিক দল গ্রুপ ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে সেনা পরিষদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যোগাযোগ সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না দুই ভায়রার। এমনকি তারা ১৫ই আগস্টের আগ পর্যন্ত এটাও জানতো না যে, খোন্দকার মোশতাক আব্বার ছাত্রকালের বন্ধু। যুদ্ধের শেষ লগ্নে রশিদ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ছুটিতে দেশে আসার পর বর্ডার পেরিয়ে এবং ফারুক কুয়েতে ডেপুটেশনে থাকা অবস্থায় চাকুরিস্থল থেকে পালিয়ে এসে নভেম্বর-ডিসেম্বরে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। সেই কারণেই যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের সাথে আমাদের তেমন ঘনিষ্ঠতার সুযোগ হয়নি। তবে তারা দু’জনই ছিল নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক। স্বাধীনতার পর তাদের প্রস্তাবেই সেনা পরিষদ একটি ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ১৫ই আগস্টের সফল অভ্যুত্থানের জন্যই একত্রে কাজ করতে রাজি হয়েছিলো। সেনা পরিষদের নীতি-আদর্শ এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই ছিল না। তাদের সাথে ১৫ই আগস্ট অভ্যুত্থানের আগে এক মিটিং-এ আমরা পরিষ্কার করে বলেছিলাম, অভ্যুত্থান সফল হলে খন্দকার মোশতাককে রাষ্ট্রপতি বানাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে সেনা প্রধান হবেন জেনারেল জিয়া, নৌ বাহিনী প্রধান থাকবেন ভাইস এডমিরাল এম এইচ খান আর এয়ার চীফ হবেন এয়ার কমোডোর বাশার।এয়ার চীফের পদে রশিদ দাবি করে এয়ার কমোডোর তোয়াবকে নিয়োগ দিতে হবে। তাদের প্রস্তাবটা চিন্তাভাবনার পর মেনে নেয়া হয়েছিলো।

কর্নেল তাহেরের সাথে আমি, মতি ও নূর কোয়েটা থেকে একসাথে পালিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম। এই ব্যাপারে বিস্তারিত আমার আগের বইতে লিখেছি। নিপীড়িত জনগণের হকের জন্য ন্যায়ভিত্তিক সুষম, প্রগতিশীল রাষ্ট্র এবং সামাজিক ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এ সম্পর্কে আমাদের মধ্যে কোনও দ্বীমত ছিল না। সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বকীয়তা সমুন্নত রেখে আত্মনির্ভর একটি সুখী,সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলবো আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সব বাধা পেরিয়ে, এটাই ছিল সেনা পরিষদের প্রত্যয়।মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও লাখো শহীদের আত্মত্যাগ এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা-প্রত্যাশার ব্যাপারেও আমাদের মধ্যে কোনও মতপার্থক্য ছিল না। পার্থক্য ছিল রাজনৈতিক দর্শন এবং পথের। কিন্তু এই পার্থক্য আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ফাটল ধরাতে পারেনি শেষ দিন পর্যন্ত। কর্নেল জিয়াউদ্দিন, কর্নেল তাহের এবং মেজর জলিল হঠাৎ করেই আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে।’ সেনা পরিষদের রাজনৈতিক দর্শন ছিল নৈতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এই প্রেক্ষিতে কর্নেল তাহের যখন প্রস্তাব রাখেন দেশ ও জাতীয় স্বার্থে তিনি এবং তার অধীনস্থ বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ভারতীয় চাণক্যদের হাতে ক্রীড়নক খালেদ-চক্রের বিরুদ্ধে সেনা পরিষদের সাথে যেকোনো বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, তার সেই অঙ্গিকারের ভিত্তিতেই বঙ্গভবনে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে খালেদ-চক্রের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের রূপ-নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছিলো। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে কৌশলগত কারণেই সেনা পরিষদের প্রকাশিত শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের দেশত্যাগ করে ব্যাংককে অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই প্রেক্ষাপটেই সেনা পরিষদ এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে সংগঠিত হয়েছিলো যুগান্তকারী ৭ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার সফল অভ্যুত্থান। মত ও পথের ভুল আর কিছু হঠকারি পদক্ষেপের মাশুল হিসেবে কর্নেল তাহেরকে যেভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছিলো সেটা একটি বিতর্কিত বিষয়।

অবশই কর্নেল তাহের ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ বীর মুক্তিযোদ্ধা, এক সাহসী দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং নিপীড়িত বঞ্চিত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে একজন আপোষহীন সাচ্চা বিপ্লবী। হেডকোয়ার্টারের কাগুজে বাঘরা এবং ইতিহাস তাকে যে ভাবেই মূল্যায়ন করুক না কেনো, মানুষ হিসাবে আমরা কেউই দোষ-গুণের ঊর্ধ্বে নই। এই সত্যকে মেনে নিয়েই অতিচেনা ক্র্যাচের কর্নেল তাহের, সিরাজ সিকদার, মেজর জলিল, কর্নেল জিয়াউদ্দিনকে জানাই সশ্রদ্ধ সালাম। তাদের সবাই হলেন দেশের অমূল্য রতন, নিখাদ জনদরদী দেশপ্রেমিক।

আগেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, রশিদ-ফারুকের সাথে বৈঠকে আমাকেই হতে হবে সেনা পরিষদের মুখ্য ভাষ্যকার। আমাদের আজকের এজেন্ডাতে তিনটি বিষয়

১। জেনারেল জিয়া সেনা পরিষদের সাথে তার সম্পর্ককে অস্বীকার করার পর বিপ্লবীদের আহ্ববানে সাড়া দিয়ে জিয়ার বিনা অনুমতিতে আমাদের দেশে ফেরা উচিৎ কি উচিৎ নয়।

২। ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বর সম্পর্কে জিয়ার সাথে আমাদের যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে সেটা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এখনই প্রকাশ করা যুক্তিসঙ্গত হবে কিনা।

৩। জেনারেল জিয়ার ব্যবস্থাপনায় লিবিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে, না তার ব্যবস্থা নাকচ করে দিয়ে তৃতীয় কোনও দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করাটা কি যুক্তিসঙ্গত হবে?

প্রথম বিষয়ে রশিদ এবং ফারুকের বক্তব্য ছিল, এখনো জিয়া সামরিক বাহিনীতে তার ভিত মজবুত করতে সক্ষম হয়নি। তাই আমরা একত্রে ফিরে গিয়ে অতি সহজেই জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবো। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে, তার স্থলে এমন একজনকে যিনি আমাদের নীতি-আদর্শে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন তেমন কাউকে চীফ বানালে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সহজেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করা বাস্তবসম্মত নয়। যুক্তি হিসাবে বলা হয়-

আজকের জিয়া আর ১৫ই আগস্টপূর্ব জিয়ার মধ্যে অনেক তফাৎ। বর্তমানে জিয়া শুধু সামরিক বাহিনীর মধ্যেই জনপ্রিয় তাই নয়, তার মেকি চমকপ্রদ জনপ্রিয়তা আজ দেশব্যাপী। কোন শক্তি কোন প্রক্রিয়ায় তাকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে সে সম্পর্কে দেশবাসীর বেশিরভাগ এবং সামরিক বাহিনীর অনেকেই অবগত নন। জেনারেল জিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্রে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পর তিনি ক্রমান্বয়ে নিজেকে সেনা পরিষদ এবং বিপ্লবীদের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক খেলায় নেমেছেন। এটাও এখনঅব্দি কারো জানা নেই। এই অবস্থায় ভারতীয় আগ্রাসনের সম্ভাবনা থাকুক বা না থাকুক, এই বাস্তব পরিস্থিতিতে আমরা যদি তার প্রতিপক্ষ হয়ে তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হই তবে সামরিক বাহিনী এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। কারণ, এখনো তারা মনে করছেন জিয়া আমাদেরই একজন। এই ধারণা সত্য হলেও জেনারেল জিয়া আজ নিজেই সেটাকে মিথ্যায় পরিণত করতে চাচ্ছেন। তাদের কথায় ওজন আছে। এখনও আমরা শক্তির দিক দিয়ে জেনারেল জিয়াকে অনায়াসেই পরাস্ত করতে সক্ষম। কিন্তু ভারত যদি ‘৭১ এর মত প্রবাসে বাকশালী সরকার বসিয়ে ২৫ বছরের স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় সেই সরকারের ডাকে বাংলাদেশে ঢুকেই পরে সেই আগ্রাসনের মোকাবেলা করা কি সম্ভব হবে আমাদের পক্ষে বিভক্ত সামরিক বাহিনী আর জাতিকে নিয়ে? তারপরও কথা থাকে। যদি সেই প্রক্রিয়ায় দেশ ভারতের করদ কিংবা অঙ্গরাজ্য এবং জনগণ দাসে পরিণত হয় তবে তার সব দায়দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। আমরা চিহ্নিত হবো দেশদ্রোহী এবং জাতীয় বেঈমান হিসাবে। খালেদ আর তাহেরের চেয়েও ঘৃণ্য হব আমরা। এটাই কি আমাদের প্রত্যাশা যে দেশবাসী আমাদের জানুক ক্ষমতালিপ্সু একদল উচ্চাভিলাষী বিকৃত মস্তিষ্কের নরকের কীট হিসাবে? তাছাড়া যুক্তির খাতিরে যদি ধরেও নেয়া যায় যে আমরা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর অন্য কাউকে বিশ্বাস করে জিয়ার স্থলাভিষিক্ত করলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করে স্বেচ্ছায় আমাদের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী একজন হয়ে এই পর্যন্ত আসার পর জিয়াই যদি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তাহলে নতুন করে যাকে জিয়ার স্থলাভিষিক্ত করা হবে সেও ক্ষমতায় আসীন হবার পর সময় সুযোগ পেলে তেমনটি করবে না তার নিশ্চয়তা কি? এর বিকল্প হিসেবে জেনারেল জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আমাদের চেয়ে সিনিয়র সব অফিসারদের সামরিক বাহিনী থেকে অবসরে পাঠিয়ে লিবিয়ার মোয়াম্মর গাদ্দাফির মতো ২৮ বছর বয়স্ক আমাদের মধ্য থেকেই কাউকে চীফের পদে উপবিষ্ট করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করতে হবে নিজেদের। এমন পদক্ষেপ বর্তমানের বাংলাদেশে নেয়া কি সম্ভব? এমনটি লিবিয়াতে সম্ভব হয়েছিলো পার্শ্ববর্তী দেশ মিসরের শক্তিধর রাষ্ট্রপতি জামাল নাসেরের প্রত্যক্ষ সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতায়। আমাদের জন্য তেমন একজন জামাল নাসের আছে বলে আমাদের জানা নেই। তাই যেকোনো সশস্ত্র সংঘাত হবে আত্মঘাতী। তারপরও কথা থাকে, জিয়া তার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য কোরআন শপথ নিয়েও কেনো আমাদের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন? জবাবটা পরিষ্কার, তিনি কখনোই মন থেকে আমাদের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি আমাদের শুধুমাত্র সুযোগ পেয়ে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন নিজের উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য। জিয়াকে জাতীয় পরিসরে জনপ্রিয়তার সাগরে আমরা ভাসালেও তিনি আইয়ুবি স্টাইলের রাজনীতিই করবেন তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ভারতের সাথে সমঝোতা করেই, আমাদের উপর নির্ভর করে নয়। এই অবস্থায় আমাদের একটি বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে। সেটা হল, ভাগ্যচক্রে বর্তমানে সশস্ত্রভাবে জিয়ার মোকাবেলা করা সম্ভব নয়, রাজনৈতিকভাবেও ঠিক এই সময় জিয়া আমাদের কিংবা মোশতাককে সহ্য করবেন না ভারতের স্বার্থের অনুকূলেই। তবে সময়েতে অবস্থারও পরিবর্তন ঘটে, সৃষ্টি হয় নতুন সুযোগ। আল্লাহ্র উপর ভরসা রেখে আমাদের সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে ধৈর্যের সাথে।

এর পর দ্বিতীয় বিষয়, আমাদের পক্ষ থেকেই আলোচনা শুরু করা হল। উপস্থাপনায় বলা হল, বর্তমানে আমদের পক্ষে নিশ্চুপ থেকে দূর থেকেই সব ঘটনা প্রবাহের উপর তীক্ষ্ন দৃষ্টি রেখে চলতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হবে সেনা পরিষদ এবং সামরিক বাহিনীতে আমাদের সমর্থকদের বাঁচিয়ে রেখে নিজেদের শক্তিকে সুসংহত করা। আজঅব্দি অর্জিত সুনাম ও সমর্থনকে মসিলিপ্ত করা চলবে না কোনও হঠকারি পদক্ষেপ নেবার মাধ্যমে। আমাদের সম্পর্কে জনগণের কৌতূহল, ভালোবাসা, দোয়া এবং প্রত্যাশা বজায় রাখতে হবে নিজেদের মেধা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে। অসময়ে সব কৌতূহলের সমাপ্তি ঘটিয়ে ইতিহাস হয়ে যাওয়াটা সমীচীন হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আমাদের তরফ থেকে কোনও বিবৃতি বা সাক্ষাতকার মিডিয়াকে দেয়া হবে না। এতে কোন উপকার তো হবেই না, বরং দেশে-বিদেশে আমাদের প্রতি আকর্ষণ কিংবা ঔৎসুক্য যতটুকুই আছে সেটাও খুইয়ে বসবো। অতএব, সর্ব বিবেচনায় বর্তমানে নিজেদের লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে গিয়ে চুপচাপ থাকাটাই হবে যুক্তিসঙ্গত। উপস্থিত সবাই এই প্রস্তাবনা সমর্থন করে কিন্তু রশিদ আর ফারুক রহস্যজনক ভাবে নিশ্চুপ থাকে। এরপর তৃতীয় বিষয়ে আলোচনা সেনা পরিষদের পক্ষ থেকে আমিই আবার শুরু করলাম।

এখনঅব্দি আমাদের দেখাশোনার সব দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সরকার এবং ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল সেনাসদর। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার কোনও গ্রহণযোগ্য যুক্তি আমাদের নেই। তাছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে যে সমস্ত খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এখনঅব্দি ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের শিকড় সন্ধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তাই আমাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। তা নাহলে যথেষ্ট ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় ভবিষ্যত চিন্তা করে আমাদের আসল পরিচয় এবং ভিতরের কথা গায়ে পড়ে তাদের জানিয়ে দিলে সেটা হবে মস্ত বোকামি। নিজেদের উলঙ্গ করলে ভবিষ্যতে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা মোতাবেক কোনও কিছুই করা সম্ভব হবে না। তাদের সুতোর টানে পুতুলনাচ নাচতে হবে। সেটা কাম্য হতে পারে না। নিজস্ব বলে ক্ষমতা গ্রহণের পর বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্বের জোরে ক্ষমতায় আরোহণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিদেশী কোনও শক্তি নিজ স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেয় না তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আজকের নিও-ঔপনিবেশিকতাবাদের যুগে অনুন্নত দেশগুলোকে যে আর্থিক সাহায্য করা হয়, সেটা দেশগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষে নয়, তাদের উপর নির্ভরশীল করে তোলার জন্যই। এই কাজটি করার জন্য স্থানীয় তল্পিবাহকদের গরুখোঁজা করে মসনদে বসিয়ে দেয়া হয়। সেইসব স্বার্থপর গোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেয় অতি অল্পমূল্যে। পুতুল খোঁজার সাথে সাথে তারা সম্ভাব্য প্রতিবাদীদেরও চিহ্নিত করে তাদের নির্মূল করে দেয় অঙ্কুরেই। অতএব কোনও বিদেশী শক্তির আশ্রিত হয়ে নিজেদের বিকিয়ে না দিয়ে জিয়ার প্রস্তাব মেনে নিয়ে সময় কাটানোর সাথে সাথে সাধ্যমতো দেশ ও জাতীয় স্বার্থে ভূমিকা রাখার চেষ্টায় ব্রতী হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। এই যুক্তিও সবাই মেনে নেয়। কিন্তু নিরব থাকে ভায়রাদ্বয়। তাদের নীরবতা কিসের লক্ষণ সেটা বোঝা গেলো না। আমাদের প্রথম বিষয়ের সিদ্ধান্তটিও তাদের কাছে গ্রহণীয় হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কেও সন্দেহ থেকে গেলো। বৈঠকের পর কথামতো আমরা শিশুভাইকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলাম। জেনারেল জিয়ার প্রস্তাবে লিবিয়াতে রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে যেতে আমরা রাজি। জবাবে শিশুভাই জানালেন, অতিসত্বর প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশে সেনা পরিষদের নেতাদেরও জেনারেল জিয়ার প্রস্তাব এবং আমাদের সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বুঝিয়ে বলায় তারা আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলো। এরপরই আচমকা দুই ভায়রা ঘটিয়ে বসলো অপ্রত্যাশিত বিভ্রাট!কাউকে কিছু না বলে দুই ভায়রা বৈঠকের পর অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাংককে আমেরিকান দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে অর্বাচীনের মতো রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসলো। যুক্তিসঙ্গত কারণেই তাদের সেই আবেদন নাকচ করে দেয় দূতাবাস। খবরটা তারা আমাদের কাছে চেপে গেলেও আমরা সেটা জানতে পারি। যদিও এই ধরনের কীর্তিতে আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম তবুও এ নিয়ে তিক্ততা না বাড়িয়ে আমরা চুপ থাকি।

পরে একই ভাবে লিবিয়াতে অবস্থান কালে কারো সাথে কোনও পরামর্শ ছাড়াই লন্ডনের একটি লাইভ টিভি শো-তে দুই ভায়রা রশিদ আর ফারুকের এক সাক্ষাতকারের ব্যবস্থা করেন এক পাকিস্তানী নাগরিক ব্রিটিশ সাংবাদিক অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাস। সেই সাক্ষাতকারে দু’জনই দম্ভের সাথে বোকার মতো জানান দেয়, ১৫ই আগস্ট সেনা অভ্যুত্থানের মূল নেতা ছিল তারাই। তাদের নেতৃত্বেই পতন ঘটে স্বৈরাচারী মুজিবের বাকশাল সরকারের ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাদের এই ধরনের গোপন তৎপরতার ব্যাপারেও আমরা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই বিষয়ে তাদের সাথে বাকবিতণ্ডা করা থেকে এবারও বিরত রইলাম।

s leo.