২৮শে জানুয়ারি ২০১০ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ

‘৭১ সালে সেনা বাহিনীর চৌকস অফিসার এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা, ’৭৫ সালের ঐতিহাসিক ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের সফল বৈপ্লবিক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবের একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসনে পিষ্টশ্বাসরুদ্ধ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করা এবং প্রতিক্রিয়াশীল খালেদ-চক্রেরচক্রান্তকে পরাস্ত করার মূলশক্তি সেনা পরিষদের শীর্ষ নেতাদের সংবিধান বিরোধী ‘মুজিব হত্যা’ বিচারের প্রহসনের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় কারাপ্রকোষ্ঠের মৃত্যুগুহায় রাখার পর দেশপ্রেমিক সূর্য-সন্তানদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে ফাঁসির হুকুম জারি করানো হয়। সেই অবৈধ রায় কার্যকর করা হয় ২৮শে জানুয়ারি সুবহে সাদেকে ২০১০ সালে। সেইদিনই খবরে প্রকাশিত হয়, ‘‘লে.কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ যিনি ৭ই নভেম্বর ৭৫ সালে সিপাহী জনতার সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের পর জেনারল জিয়াউর রহমানকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে ২য়ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টারসে নিয়ে এসেছিলেন, ল্যান্সারের মেজর মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মেজর বজলুল হুদাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডকার্যকর করা হয়েছে। বাকিরা রয়েছেন পলাতক।’’

কিন্তু উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী, বিভিন্ন মাধ্যম এবং বিদেশের কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের সূত্রে জানা যায় সেই দিন প্রত্যুষে ৪ জনেরফাঁসি কার্যকর করা হলেও মেজর হুদাকে কিন্তু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয়নি। হাসিনার হুকুমে মেজর বজলুল হুদার বুকের উপর পা চেপে ধরে রেখে জবাই করে তাকে হত্যা করেছিল জল্লাদ। হঠাৎ এমন কথা শুনে অনেকেই চমকে উঠবেন! আজ আপনাদেরকে জানাবো সেই অপ্রকাশিত সত্য। অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল, তবে সংক্ষেপেই জানাচ্ছি সেই লোমহর্ষক হত্যার উপাখ্যান।মেজর বজলুল হুদাকে ফাঁসি দেওয়া হয়নি। যার কথা লিখছি সেই মহান বীর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে যে কয়জন সেনা অফিসার পালিয়ে এসে অসীম সাহসিকতার সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অন্যতম মেজর বজলুল হুদা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল বীর সেনানী জাতিকে দিয়েছিল এক ‘ডিভাইন জাস্টিস’। জাতিকে মুক্ত করেছিল এক রাহুগ্রাস থেকে। ’৭৫ -এর ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন খন্দকার মোশতাক সরকার একটি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স (দায়মুক্তি অধ্যাদেশ) জারি করেছিলো জানবাজ মুক্তিদাতাদের কার্যক্রমকে বৈধতা দান করে। (এই মোশতাক সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছিলো হাসিনার বর্তমান উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম)। পরবর্তীকালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল বিএনপি সরকার গঠনের পর সংসদে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোটে পাশ হওয়ায় মোশতাক সরকার প্রদত্ত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সটি ইনডেমনিটি অ্যাক্ট হিসেবে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর অংশে পরিণত হয়। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগসরকার সংবিধান পরিবর্তনের জন্য অতি আবশ্যকীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট ছাড়াই দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করে ঐতিহাসিক ১৫ই আগস্টের সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানকে একটি ‘সাধারণ হত্যাকান্ড’ হিসেবে পরিগণিত করে ‘মুজিব হত্যা’ এবং ‘জেল হত্যা’ নামের দুটি বিচারের প্রহসন শুরু করে। প্রায় দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় এই বিচার কার্যক্রমের তামাশা চলে। রাষ্ট্রপতি মোশতাক, জেনারেল জিয়াউর রহমান সহ বিশ জনকে ‘মুজিব হত্যা’ এবং ‘জেল হত্যা’ মামলার আসামি করা হয়েছিল। পরে মৃত বিধায় রাষ্ট্রপতি মোশতাক এবং জেনারেল জিয়া এই দুই আসামীর নাম অভিযুক্তদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। বিচারকালে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে ক্লাস চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করলে আদালত অভিযুক্তদের ক্লাস দেবার রায় দিয়ে প্রশাসনকে সেই রায় কার্যকরকরার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু খালেদা জিয়া কিংবা হাসিনা সরকার সেই রায় বাস্তবায়ন করেনি। এরই মধ্যে সাবেক মন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও মেজর (অব) খায়রুজ্জামানসহ পাঁচজনকে খালাস দেন আদালত। শেষঅব্দি ১৫ জনকে ফাঁসিরআদেশ দিলেও রিভিউতে তিন জনের ফাঁসির আদেশ বাতিল করে উচ্চ আদালত। বাকি বারোজন হচ্ছেনঃ মেজর (অব) বজলুল হুদা, মেজর (অব) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব) আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব) শরিফুল হক ডালিম, লে.কর্নেল (অব) এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, রিসালদার (অব) মোসলেম উদ্দিন, মেজর (অব)রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ, লে. কর্নেল (অব) আব্দুল আজিজ পাশা। শেষের ছয় জন বিদেশে নির্বাসনে আছেন। তাদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে। দণ্ডিত অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে নির্বাসনে মারা যান কর্নেল আব্দুল আজিজ পাশা।

১৯৯৬-তে মেজর বজলুল হুদাকে গ্রেফতারের পর তার বৃদ্ধামাকে আওয়ামীলীগের পাণ্ডারা লাঞ্ছিত করে ঘর থেকে রাস্তায় টেনে এনে ফেলে। তখন থেকেই বৃদ্ধা মহিলা অসুস্থ হয়ে যান।

২০০০ সালের ১৫ই মার্চ বজলুল হুদারবৃদ্ধা মা ইহজগৎ ছেড়ে চলে যান। মায়ের জানাজায় অংশ নিতে বজলুল হুদার প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানায় তার পরিবার। কিন্তু মায়ের জানাজায় অংশ নিতেঅনুমতি পায়নি হুদা। অতপর তার মায়ের লাশ জেল গেটে দেখার আবেদন করেন পরিবারের সদস্যরা। জেল গেটে ৭ ঘন্টা তার মায়ের লাশ রেখে অনেক তালবাহানা ও নাটক করে বজলুল হুদাকে ১ মিনিটের জন্য তার মায়ের লাশ দেখতে দেয় জেল প্রশাসন। ২০১০ সালের ২৮শে জানুয়ারী প্রত্যুষে মেজর (অব) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনেরমৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরই মধ্যে আরেকটা লোমহর্ষক কথা বলি।

২৭জানুয়ারী লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদের কারাবন্দি দুই ছেলে নাজমুল হাসান সোহেল ও মাহাবুবুল হাসান ইমুকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা জেলে আনাহয় যাদের আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস ‘হত্যা চেষ্টা’ র সাজানো অভিযোগে আটক করা হয়েছিল। তাদেরকে যে প্রিজন ভ্যানে আনা হচ্ছিল সেই একই ভ্যানে আনা হয়েছিল এক হিন্দু জল্লাদকে যে কিনা তাদের বাবাকে পরেরদিন ফাঁসিতে ঝুলাবে। প্রিয় পাঠকগণ! এই ধরনের লোমহর্ষক ব্যপার ভাবতে পারেন কি! এই জল্লাদের কথা পরে বলছি।

সে আওয়ামী লীগেরই সমর্থক যার স্বল্পমেয়াদি সাজা হয়েছিলো। ধরে নেয়া যাক তাদের বাবা ফাঁসির আসামি। তাই বলে একই ভ্যানে তার বাবার জল্লাদকেও সাথে করে আনতে হবে! একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন তো ঐ দুই ছেলের কি মানসিক অবস্থা ছিল তখন!

একই অভিযোগে বন্দী করে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিল আমার ছোট ভাই কামরুল হক স্বপন বীর বিক্রমকেও। ২৭শে জানুয়ারী,২০১০ রাত ১১টায় কারাগারে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, কারামহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকার জেলা প্রশাসকজিল্লার রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ সরকার, ডিএমপি কমিশনার একে এম শহীদুল হক, ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মুশফিকুর রহমানসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, পুলিশ এবং র্যাহবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।১১টা২০ মিনিটে পাঁচটি কফিন বক্স কারাগারের ভেতরে ঢোকানো হয়। (এদের নাম ও পদবি উল্লেখ করে রাখলাম। বিশেষ কারণে র্যাবের কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করলাম না যাতে করে এদেরকে যেকোনো এক সময় সাক্ষী হিসাবে ডাকা যেতে পারে)। জেল কোডে “হিংসা-বিদ্বেষ বা আবেগের বশবর্তী হয়েকোনো কাজ করবো না” কিংবা এর কাছাকাছি ভাষায় এটাই লেখা থাকে যেটা মেনে চলতে বাধ্য থাকেন জেল কর্তৃপক্ষ। কিছুক্ষণের মধ্যে দুইটি একই রকম টিনটেড গ্লাস লাগানো ল্যানডক্রুজার দ্রুতগতিতে জেলের ভেতর ঢুকে পড়ে। একটিতে ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার আগেই মেজর হুদাকে জেলের একটি কামরায় গোপনে নিয়ে এসে তাকে ফ্লোরের উপর চিত করে ফেলে দেয়া হয় হাত পা বাঁধা অবস্থায়। এরপর হাসিনার নির্দেশে তার গলাটা যখন ছুরি চালিয়ে অতি নিষ্ঠুর ভাবে কেটে দিচ্ছিল কাশিমপুর থেকে আনা হিন্দু জল্লাদ তখন স্বয়ং শেখ হাসিনা জিঘাংসায় উন্মত্ত হয়ে পেত্নির মতো মেজর হুদার বুকে পা রেখে তৃপ্তির হাসি হাসছিলেন। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্তে হাসিনার শাড়ি ভিজে যায়। এভাবেই, শেখ হাসিনা তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী রক্তপিপাসু জিঘাংসা চিরতার্থ করেছিলেন। একটি সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের নায়কদের যখন বেআইনি ভাবে সাধারণ খুনের আসামী হিসাবে বিচারের প্রহসনের মাধ্যমে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন হয়তো তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে সত্য চিরকাল লুকায়িত থাকে না। মেজর হুদার গলা কেটে খুন করার অভিযোগে খুনি হিসাবে হাসিনার বিচার বাংলাদেশের আইনি আদালতেই একদিন হবে নিয়তির বিধান মতোই ইন শা আল্লাহ।

যখন জাতীয় বীরদের এক এক করে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ডেথসেল থেকে, তখন দু’পাশের সেলগুলোতে বন্দী কয়েদীরা সবাই ডুকরে কেঁদে উঠে দু’হাত উপরে তুলে আল্লাহ্‌র দরবারে চিৎকারকরে ফরিয়াদ জানাচ্ছিল হে রাব্বুল আলামিন, এ তোমার কেমন বিচার! দেশের স্বাধীনতা রক্ষা আর দুঃখী বঞ্চিত দেশবাসীর হক প্রতিষ্ঠা করতে, জালিমের হাত থেকে মুক্ত করার অপরাধে কেনও অন্যায়ভাবে অবিচারের রায়ে তাদের মতো বীরদের ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে? দেশকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে স্বাধীন করার জন্য জানবাজি রাখা পরীক্ষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে জনস্বার্থে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামী দেশপ্রেমিক সেনাসদস্য ছিলেন এরা সবাই! আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব মালেক উকিলের লন্ডনে উচ্চারিত উক্তি অনুযায়ী, ১৫ই আগস্টের সফল বৈপ্লবিক সেনা অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ফেরাউন শেখ মুজিবের স্বৈরাচারী বাকশাল সরকারের পতন ঘটানোর মাধ্যমে শ্বাসরুদ্ধকর একনায়কত্বের স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে জনগণ নাজাত লাভ করেছিলো। নাজাত দানকারী দেশ মাতৃকার এই অগ্রণী বীরদের ‘সাধারণ খুনি’ হিসেবে কোন আইনে বিচার করলো শেখের বেটি হাসিনা? জিয়ার বউ খালেদাই বা কেনোও এই অন্যায় বিচারের প্রতিবাদ করলো না? ২০০১ সালে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া আর তার জোটের শরিক জামায়াত এবং অন্যরা কেনও এই বীরদের মিথ্যা মামলার হাত থেকে মুক্তি দিলো না? তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার বিচার আল্লাহ্‌পাক নিশ্চয় করবেন, ছাড় পাবেনা এইসব জাতীয় বেঈমানদের কেউই। সবাই ডুকরে ডুকরে কাঁদছিল আর এইসব খেদোক্তি করছিল অন্তর থেকে। নিগৃহীত মানুষের ফরিয়াদে আল্লাহর আরশও কেঁপে ওঠে। বীররা সবাই ঐশ্বরিক শক্তিবলে ছিলেন শান্ত এবং জ্যোতির্ময়। কারও মুখে ভয়-ভীতি কিংবা কোনও উৎকন্ঠার লেশমাত্র ছিল না। দেশি-বিদেশী বিভিন্ন সূত্রে এবং ফাঁসির সময় যে সমস্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কয়েকজনের কাছ থেকেই হৃদয় বিদারক এইসব তথ্য পরে জানা সম্ভব হয়েছে। দেশের সূর্যসন্তান বীরদের ফাঁসিতে বিএনপি এবং জামায়াতের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বিএনপি জোটের নেতাদের ন্যক্কারজনক উত্তর দেশবাসীর অজানা নয়। কিন্তু যাদের জানা নেই তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি।

বিএনপি বলে, ‘‘মওদুদ ম্যাডামকে বিভ্রান্ত করে বীরদের মুক্ত করতে দেয়নি।’’ আর জামাত দায় এড়ায় এই বলে আমরা জোটের জুনিয়ার পার্টনার হিসেবে ম্যাডামকে অনুরোধ করেছিলাম বীরদের ফাঁসি বন্ধ করতে। কিন্তু ম্যাডাম জবাবে বলেছিলেন, ‘‘এইবিষয়ে সিদ্ধান্তের দায়িত্বটা তার।’’ ম্যাডাম এখনও শিশু, বোতলে দুধ পান করেন!দেশের সংবিধান অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকায় সংরক্ষিত কবরস্থানে তাদের অন্তিম শয়ানে শায়িত করার কথা। কিন্তু জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে হাসিনা ও তার সরকার জাতীয় বীরদের সেই ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করে। সব কয়টি শহীদের লাশ কড়া নিরাপত্তার সাথে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয় নিকট আত্মীয়-স্বজন এবং প্রিয়জনদের আপত্তির কোনও তোয়াক্কা না করেই। এতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি প্রতিহিংসা পরায়ণ শেখ হাসিনা।

স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আদেশ জারি করা হয়, যাতে শহীদদের জানাজায় লোকসমাগম না ঘটতে পারে। কিন্তু সচেতন মানুষের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার ঠেকাতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন, সরকারী বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডাররা। প্রতিটি শহীদের জানাজায় সব বাধা উপেক্ষা করে দেশের হাজার হাজার আবাল বৃদ্ধ বণিতা শরিক হয়েছিল তাদের প্রিয় নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক, নির্ভীক, প্রতিবাদী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বুক ভরা দোয়ার সাথে শেষ বিদায় জানাতে।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, কয়েকশত সরকারী অস্ত্রধারীদের হুমকি-ধামকিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন পূর্বক মেজর হুদার গ্রামের বাড়িতে হুদার জানাজায় পাঁচ লক্ষেরও অধিক জনসমাগম হয়। ঠিক এমন ভাবেই লক্ষ জনতার ঢল নেমে ছিল সব বাধা অতিক্রম করে অন্যদের জানাজায়ও।

শহীদের মৃত্যু নেই। তারা বেঁচে থাকে চিরজাগরূক হয়ে জন্ম-জন্মান্তরের প্রজন্মের চেতনায় সত্যপথের দিশারী হয়ে। তাদের মহত্ত্ব এবং আত্মত্যাগের বীরগাথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় লক্ষ কোটি সাহসী বীর, যারা লড়ে চলে ন্যায় ও সত্যের জন্য যুগে যুগে। স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের প্রত্যেকেই হচ্ছে তিতুমীর, হাজি শরিয়তুল্লাহ, মাস্টারদা, ক্ষুদিরাম, তোরাব আলি, ভগত সিং-এর মতোই বিপ্লবী।

ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এদের বীরত্বগাথা, দেশবাসী গাইবে তাদের জয়গান। তাই নশ্বর এই পৃথিবীতে মরেও তারা হয়ে থাকবে অমর আগামীদিনের প্রজন্মের মধ্যেই।