বাংলাদেশে নীতি বিবর্জিত কুটুম্বিতার রাজনীতির স্বরূপ

নীতি বিবর্জিত শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য কুটুম্বিতার রাজনীতির রূপ কতটা কদর্য এবং ক্ষতিকর হতে পারে সেটার কিছু নমুনা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ধারায় তরুণ প্রজন্মের ভাবনার খোরাক হিসাবে তুলে ধরতে চাই যাতে করে তারা বার বার প্রবঞ্চনার শিকারে পরিণত না হয়। জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর ক্ষমতা দখল করে বসলেন তারই নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ। শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানালেন। ভারতের সুতার টানে জেনারেল এরশাদ অনেক চেষ্টা করেও বেগম খালেদার জিয়ার সাথে কোনও রকম বোঝাপড়া করার সুযোগ পেলেন না।

কারণ হিসেবে বলা হয়, খালেদা জানতেন, জিয়ার মৃত্যুতে এরশাদের হাত ছিল। অবশেষে ক্ষুব্ধ এরশাদ বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত, পার্টির এবং সবগুলো অঙ্গ সংগঠনের ব্যাংক একাউন্ট তিনি জব্দ করতে আদেশ দেন। এতে পার্টির কাজ এগিয়ে নেয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। এই ক্রান্তিলগ্নে বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ, মোশাররফ হোসেন সহ অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা এরশাদের সাথে হাত মেলান বেগম খালেদা জিয়াকে ত্যাগ করে।

আশির দশকে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের মনোভাব বুঝে খালেদা জিয়ার বিএনপি, আওয়ামীলীগ এবং জামায়াতসহ অন্যান্য কয়েকটি দলের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী সংগ্রাম শুরু করেন তারা। জনসমর্থনে সেই সংগ্রাম যখন বেগবান হতে থাকে ঠিক তখনই সংগ্রামের পিঠে ছুরি মেরে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত এরশাদের দেয়া ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। যদিও হাসিনা চট্টগ্রামের জনসভায় উচ্চস্বরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘যারাই এরশাদের নির্বাচনে যাবে তারা সবাই হবে জাতীয় বেঈমান’। দেশবাসী হতবাক হয়ে যায় শেখ হাসিনার কুৎসিত আচরণ এবং বিশ্বাসঘাতকতায়। দুঃখজনক হলেও গোপন বোঝাপড়ার মাধ্যমে জেনারেল এরশাদের দেয়া টোপ গিলে কর্নেল ফারুক কর্নেল রশিদের পরামর্শে জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তৃতীয় স্থান দখল করে এরশাদের নির্বাচনকে বৈধতা দানে সাহায্য করে।

আমাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের অবস্থানে কোনও হেরফের হয়নি। চট্টগ্রামের জনসভায় শেখ হাসিনার ঘোষণার পর একরাতে এরশাদের নিমন্ত্রণে শেখ হাসিনা এক লং ড্রাইভে এরশাদের সফর সঙ্গিনী হয়েছিলেন। সেই লং ড্রাইভ কালেই ১৭ কোটি টাকার লেনদেনের মাধ্যমে হাসিনা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওয়াদা করেছিলেন। জামায়াতকেও কিছু উচ্ছিষ্ট দিয়ে লাইনে আনা হয়েছিলো। নির্বাচন হয়েছিলো, কিন্তু বিএনপি জোট সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় পাতানো নির্বাচন বৈধতা পেতে ব্যর্থ হয়। ফলে আওয়ামীলীগ এবং জামায়াত কর্মীদের চাপে সংসদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়ে আন্দোলনে ফিরে আসে পালের বাতাস দেখে যাতে খালেদা জিয়া একাই সেই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে না পারেন।

‘৯১-এর নির্বাচনে জামায়াত খালেদার নেতৃত্বে নির্বাচনী মোর্চায় শরিক হয়। তাদের মূল দাবি ছিল নির্বাচনে বিজয়ী হলে তাদের আমীর প্রফেসর গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। নির্বাচনে হেরে গিয়ে আওয়ামীলীগ নেত্রী হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, একদিনের জন্যও খালেদা সরকারকে তিনি শান্তিতে থাকতে দেবেন না, করেছিলেনও তাই।
হাসিনার মদদে জাহানারা ইমাম এবং কর্নেল নুরুজ্জামান বীর উত্তমের নেতৃত্বে হঠাৎ করেই রাতারাতি গজিয়ে উঠল ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ সংক্ষেপে ‘ঘাদানিক’। তারা প্রকাশ্য জনসভায় গণআদালতের রায় মোতাবেক প্রফেসর গোলাম আযমের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। বিচলিত জামায়াত বিএনপি সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি করে গোলাম আজমের নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে। সৃষ্টি হল টানাপড়েনের। সেই মোক্ষম সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে হাসিনা গিয়ে মিলিত হলেন গোলাম আজমের সাথে ইন্দিরা রোডের এক বাড়ীতে গোপন বৈঠকে। উছিলাটা ছিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি তাদের দল সমর্থিত প্রার্থী জাস্টিস বদরুল হায়দার চৌধুরীর জন্য তার আশির্বাদ চান। এই প্রসঙ্গের আড়ালে আসল বিষয়টি উত্থাপন করলেন হাসিনা। তিনি বললেন, ‘ঘা দা নির্মূল কমিটি’ তারই প্রসূত। জামায়াত যদি আওয়ামীলীগের সাথে একজোটে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে রাজি হয় তাহলে তিনি ‘ঘা দা নির্মূল কমিটির’ পিঠে ছুরি চালিয়ে কোর্টের মাধ্যমে গোলাম আজম সাহেবের নাগরিকত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবেন। জামায়াত খুশি মনে সব নীতি-আদর্শ জঞ্জালের মতো বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে হাসিনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো।

সিদ্ধান্ত হল, যুগপৎ সরকার বিরোধী আন্দোলন দুই দলের বিশেষ করে আওয়ামীলীগের পক্ষে বিব্রতকর হবে। তাই জামায়াত সরকার বিরোধী আন্দোলন করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন আগামীতে নির্বাচন করার দাবিতে, আর আওয়ামীলীগ একই সাথে আন্দোলন করবে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির সরকার যেটা তার প্রয়াত পিতাই সংবিধান পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেটা নাকচ করে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবিতে। ক্রমে এই দুই ইস্যুতে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত করে তোলা হবে। হাসিনা আরও জানালেন, জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টির সমর্থন সুনিশ্চিত। সুবিধাবাদী জামায়াত হাসিনার টোপটি গলাধঃকরণ করলো। RAW-এর এই কূটচালে জামায়াত বিএনপির নির্বাচনী মোর্চা থেকে বেরিয়ে আসায় আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করে দেয়া হল জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর। ১৯৯৬ সালের জুন মাসের সাধারণ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার প্ররোচনায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সংক্ষেপে ‘ঘাদানিক’ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়। পরবর্তী সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সুবিধাবাদী জামায়াতে ইসলামের সাথে আওয়ামীলীগের চূড়ান্ত সমঝোতা এবং বোঝাপড়ার পর আওয়ামী ঘরানার ধর্মনিরপেক্ষ, সুশীল সমাজের মহারথী খ্যাত প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রফেসর গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বহাল রাখার ব্যবস্থা করে দেন। এই হাবিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি থাকার সুবাদে পরবর্তীকালে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলটি পাশ করিয়ে নেয়া হয় বিএনপি সরকারের মাধ্যমে।১৯৯৬ এর ২৮শে মার্চ বিএনপি সরকার পদত্যাগ করলে আওয়ামীলীগের আশীর্বাদপুষ্ট প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্তি পান এবং তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামীলীগ। ভোট বেশি পেয়েও বিএনপি পায় ১২০ টি সিট আর জামায়াত-এর সিট সংখ্যা ১৭ থেকে কমে ৩-এ এসে দাড়ায়। সেই সময় ক্ষমতার জন্য নিরুপায় হয়ে এরশাদের সমর্থন চেয়ে খয়রাত পেতে ব্যর্থ হন খালেদা জিয়া। জেলবন্দী এরশাদ ভারতের সুতোর টানে আওয়ামীলীগকেই সমর্থন দিয়ে হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

জামায়াতের রাজনীতি জন্মের পর থেকেই বিভ্রান্তিকর। পাকিস্তান আন্দোলন কালে জামায়াতের তাত্ত্বিক গুরু মাওলানা মওদুদী দ্বিজাতি তত্ত্বের সমর্থন কিংবা বিরোধিতা না করে তার জন্মভূমি ভারতের দাক্ষিণাত্যেই থেকে যান। পরে তিরিশের দশকে হিজরত করে ভারত ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবে পাড়ি জমিয়েছিলেন মাওলানা ডঃ ইকবালের আমন্ত্রনে। পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই কাদিয়ানীদের অমুসলমান বলে ফতোয়া জারি করায় এক রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা-ফ্যাসাদের সূত্রপাত ঘটে পাকিস্তানে। অনেক নিরীহ লোকের প্রাণহানি ঘটে সেই দাঙ্গায়। এই দাঙ্গায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে মাওলানা মওদুদীকে বন্দী করা হয় এবং বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তবে কাকতালীয় ভাবে তিনি সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান। এরপর থেকে পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট রাজনীতি করে চলেছে। এর ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে।

ভারতের সাথে সমঝোতার ফলে হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার পর ব্যালেন্সিং এ্যাক্ট হিসাবে জেনারেল জিয়া প্রফেসর গোলাম আজমকে দেশে ফিরে আসার অনুমতি প্রদান করেন। প্রফেসর গোলাম আজম শেখ মুজিবের মতোই পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়েই পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ফেরার পর জনাব গোলাম আজম জামায়াত-এর আমীর পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দলের সাংগঠনিক তৎপরতায় মনোনিবেশ করেন।সেই প্রক্রিয়ার একপর্যায়ে জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর ক্ষমতাগ্রাসী জেনারেল এরশাদ ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগে এবং জামায়াত এর সাথে সমঝোতা করে নির্বাচনের প্রহসনের মাধ্যমে তার অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণকে বৈধ করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এর পেছনেও কলকাঠি নেড়েছিল ভারত। কারণ, জেনারেল এরশাদ এবং আওয়ামীলীগের গলায় বাঁধা সুতো ভারতীয় চাণক্যদের হাতে। এরশাদের আনুকূল্য এবং আওয়ামীলীগের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা পাবার অভিপ্রায়ে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে অনুসরণ করে অংশগ্রহণ করেছিলো জামায়াতে ইসলামী। ক্ষমতা গ্রহণ করেই হাসিনা পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই অবৈধ ভাবে একটি সাধারণ বিলের মাধ্যমে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর অংশ ‘ইনডেমনিটি এ্যাক্ট’ টি বাতিল করে সংবিধান লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে ‘মুজিব হত্যা’ এবং ‘জেল হত্যা’ নামে দুইটি প্রহসনমূলক মামলা দায়ের করিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেককেই কারাবন্দি করে শেখ হাসিনার সরকার। প্রথমে দুটি মামলাতেই আসামীদের তালিকায় এক নম্বর আসামী ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জনাব খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং দুই নম্বর আসামী ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তাদের মৃত্যুর পরে মৃত বিধায় দু’জনের নামই আসামীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। রহস্যজনক ভাবে যখন অসাংবিধানিকভাবে ‘ইনডেমনিটি এ্যাক্ট’ বিলটি সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বাতিল করা হয় তখন জামায়াতসহ বিএনপি জোট কোন প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে সংসদ থেকে বেরিয়ে আসে। প্রহসনমূলক এই বিচার প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য হয়নি দেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীর কাছে। ৫ বছরের শাসনকাল সম্পূর্ণ করেও হাসিনা সরকার এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে সক্ষম হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিমের অধীনে লাঠি মিছিল, উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রতি সরকারের তরফ থেকে হুমকি-ধামকি এবং নানাবিধ চাপ প্রয়োগ করার পরও উচ্চ আদালতের বিবেকবান কয়েকজন বিচারক এই বিচার কাজ পরিচালনা করতে বিব্রত হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া অসমাপ্ত রেখেই সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছিলো। বিদায়ের আগে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গোলাম আজমের নাগরিকত্বের বিষয়টির সমাধান অবশ্য করে দিয়েছিলো শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে। ১৯৯৬ সালের শিক্ষা নিয়ে ২০০১ সালে জামায়াত আবার বিএনপি-এর জোটে যোগদান করায় বিএনপি জোট দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সিটে বিজয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসীন হয়। কিন্তু ক্ষমতায় এসেও তাদের তরফ থেকে ১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে সংবিধান বিরোধী যে অন্যায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল তার কোনও প্রতিকার করা হল না ‘ইনডেমনিটি এ্যাক্ট’টিকে পুনর্বহালও করা হল না।‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’কে নতুন করে ইনডেমনিটি দেয়া হলেও ৫ম সংশোধনীর অংশ ইনডেমনিটি এ্যাক্টটি পুনর্বহাল করা থেকে বিরত থাকলো বিএনপি জোট সরকার। শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালতের দেয়া রাজনৈতিক আসামী হিসেবে তাদের ক্লাস দেবার আদেশটাও কার্যকর করা থেকেও বিরত থাকে বেগম খালেদা জিয়ার জোট সরকার। এভাবেই দেশপ্রেমিক জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বিপ্লবী সেনা অফিসার যারা দেশ ও দেশবাসীকে বাকশালী একদলীয় স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে জীবনবাজি রেখে মুক্ত করে মানবিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের সূর্যতোরণ খুলে দিয়েছিল নির্মোহ হয়ে তাদের ফাঁসিতে ঝোলাবার পথটি খোলা রেখে পাঁচ বছর ক্ষমতা ভোগ করে মেয়াদ শেষে বিদায় নিয়েছিল ‘জাতীয়তাবাদ আর ইসলামী মূল্যবোধের চ্যাম্পিয়ন’ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেই হাসিনা সরকার সর্বপ্রথম যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলেন সেটা হল বিডিয়ার হত্যাযজ্ঞ। পরিকল্পিত ভাবে বিডিআর হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় ভাড়াটে ভারতীয় কমান্ডো আনিয়ে। চাকুরিচ্যুত করা হল দুই শতেরও বেশি প্রতিবাদী সেনা অফিসারকে। এরপর বয়োজ্যেষ্ঠতার তোয়াক্কা না করে পছন্দসই জুনিয়র দু’জন উকিলকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দিয়ে চীফ জাস্টিস সমেত ৫ সদস্যের একটি বেঞ্চ গঠন করা। সেই বেঞ্চের ৫ জনের মধ্যে ২ জনই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাদের একজন ছিল সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বেঞ্চ আসামীদের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়ে একই দিনে তড়িঘড়ি করে আইন বহির্ভূত ভাবে বিচার কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা না করেই ২৮ শে জানুয়ারি ২০১০ সাল, প্রত্যুষে একে একে ৪ জন সূর্যসন্তানকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়েদিয়ে হত্যা করা হয়। হাসিনার উপস্থিতিতেই তারই আদেশে কাশিমপুর থেকে আনা জল্লাদের দ্বারা নৃশংসভাবে জবাই করে মেজর বজলুল হুদাকে শহীদ করা হল কারাগারের একটি কামরায়। এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডকে বিশ্বপরিসরে শীর্ষস্থানীয় প্রচার মাধ্যমগুলো আখ্যায়িত করেছিলো, ‘Political trail, miscarriage of justice and Judicial Murder of Hasina’.

এই দুইটি ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতির মেরুদণ্ড সামরিক বাহিনীতে দেশপ্রেম, ’৭১ এর চেতনা, নৈতিকতা, দেশবাসীর প্রতি সহমর্মিতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের অবসান ঘটানো যাতে করে নতজানু সামরিক বাহিনীকে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে দেশ ও জনস্বার্থের বিপরীতে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীসমূহ এবং তাদের বিদেশী প্রভুদের স্বার্থরক্ষার্থে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

এটাকে সমঝোতার রাজনীতির একটি জ্বলন্ত দেশ বিরোধী নিদর্শন বললে কি ভুল বলা হবে? এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভেবে দেখতে হবে। এই সমস্ত দল আর এদের নেতা-নেত্রীরা নিশ্চয়ই দেশের জনগণকে গরু-ছাগল ভাবেন। তারা মনে করেন, দেশের জনগণকে বেকুব বানিয়ে ফায়দা হাসিল করা অতি সহজ। কিন্তু তারা ভুলে যান সাধারণ মানুষদের কিছু সংখ্যক লোককে কিছুদিনের জন্য বোকা বানানো সম্ভব হলেও সর্বকাল সবাইকে বোকা বানানো সম্ভব নয়। দুর্নীতিবাজ নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিচারের কথা উঠলে, বিদেশে টাকা পাচারের বিচারের কথা উঠলে এরা সবাই থাকেন নিশ্চুপ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তারা সভা, মিটিং মিছিল, প্রেস কনফারেন্স করে মাঠ গরম করে ফেলেন। কিন্তু দেশ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে থাকবেন নিশ্চুপ কিংবা দেবেন একে অপরকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সমর্থন যদি সেটা তাদের গোষ্ঠীস্বার্থ এবং তাদের বিদেশী প্রভুদের জন্য প্রয়োজন হয়!

আওয়ামী জোট ছাড়াও চারদলীয় বিএনপি জোটের এই ধরণের দ্বৈততা দেশবাসী এবং দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যে কারণে এখন মুখে মুখে শোনা যায় খালেদা জিয়া আর শেখ হাসিনা ‘মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ’। চারিত্রিকভাবে এই দুই জোটের রাজনীতিতেও কোনও পার্থক্য নেই। এই ধরনের মনোভাবের কারণেই বেগম খালেদা জিয়াকে যখন তার শহীদ মইনুল রোডের বাড়ী থেকে হেস্তনেস্ত করে বিব্রতকর ভাবে উৎখাত করা হয় তখন সামরিক বাহিনীতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।

দেশবিরোধী এই ধরনের ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ বসে থাকা সম্ভব হয়নি সেনা পরিষদের নেতৃবৃন্দের পক্ষে। কয়েকজন নেতা প্রবাসে ফেরারী হয়ে থাকা অবস্থাতেও তাদেরই উদ্যোগে বিডিআর এর হত্যাযজ্ঞের পর সর্বপ্রথম তথ্যবহুল একটি লিফলেট ‘জাগো দেশবাসী বাঁচাও বাংলাদেশ’ ও একটি ভিডিও ডকুমেন্টারির সিডি দেশবাসী এবং বিদেশের মিডিয়া জগতে বিলির ব্যবস্থা করা হয়। ইমেইল করা হয় ৫ হাজারেরও বেশি অ্যাড্রেসে।বিডিআর চক্রান্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি খোলা চিঠিও পাঠানো হয় তাকে জবাবদিহি করে। সেটার কপিও দেশবাসীর মধ্যে হ্যান্ডবিল আকারে বিতরণ করা হয়। কাজগুলো খুব বড় না হলেও সেই সন্ধিক্ষণে এই দায়িত্বটি গ্রহণ করা খুব একটা সহজ ছিল না। এর জন্য অনেক তরুণ-তরুণীকে লাঞ্ছনা ও নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। ঐ সব দেশপ্রেমিকদের তাদের দুঃসাহসিকতা ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে শুধু লেখককেই নয়, দেশবাসীকেও। এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য যে সমস্ত তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিলেন তাদের সবাই বর্তমান প্রজন্মের। তাই যারা হতাশায় ভোগেন আর ভাবেন বর্তমান প্রজন্মের সবাই পচে গেছে তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

বর্তমান প্রজন্মের প্রতিজনের বিবেকেই রয়েছে একটি স্ফুলিঙ্গ। দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে পরীক্ষিত নেতৃত্বের অধীনে জাতীয় স্বার্থে তারাও সৃষ্টি করতে পারে দাবানল। যার লেলিহান শিখায় পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে পারে ঘুণেধরা রাষ্ট্রীয় এবং আর্থ-সমাজিক ব্যবস্থা। একই সাথে দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে বিদেশী সুতোর টানে নেচে চলা নট-নটীরাও চলে যেতে পারে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এভাবেই একদিন সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি প্রতিশ্রুতিশীল নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার যার ভিত্তি হবে ‘৭১-এর প্রকৃত চেতনা, স্বকীয় জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ। সম্ভব হবে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের আলোকে প্রতিষ্ঠিত করা আইনের শাসন, মানবধিকার, সুষম রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ ব্যবস্থা। বিশ্ববাসীর কাছে নিজেদের পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে স্বকীয় ঐতিহ্যবাহী, স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদাশীল, সুখী-সমৃদ্ধশালী এবং প্রগতিশীল একটি জাতি হিসাবে।

বিডিআর এর বর্বরতার পর সবকিছু জানা সত্ত্বেও বিএনপি এবং জামায়াত দু’টি দলই রহস্যজনকভাবে এই ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া থেকে বিরত থাকে। ঐতিহ্যবাহী এই বাহিনীটিকে বিলুপ্ত করে বিজিবি নামের এক নব্য ‘রক্ষী বাহিনী’ গড়ে তোলা হল দলীয় ক্যাডার দিয়ে তারও কোনও জোরালো প্রতিবাদ শোনা গেলো না বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে। তাদের এই ধরনের নীরবতায় দেশবাসীর কাছে তাদের প্রচারিত নীতি-আদর্শ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।

এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে সাংবাদিক সম্মেলনে খোলাখুলিভাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা এই বলে, ‘I am not unhappy’. রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জেনারেল নাসিম যখন ক্যু’ করছিল তখনও শেখ হাসিনা তাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন। দেশজুড়ে লগি-বৈঠার তাণ্ডব সৃষ্টি করে জবরদস্তির মাধ্যমে জরুরী অবস্থা জারি করিয়ে ইন্দো-আমেরিকান বলয়ের প্রত্যক্ষ সমর্থনে যখন জেনারেল মইন বন্দুকের জোরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে ফখরুদ্দিনের সরকার কায়েম করে সেই ক্ষমতা দখলকেও সমর্থন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই পরিবর্তন নাকি তাদের সংগ্রামেরই ফসল।সরকার বদলের পর দেশে জরুরী আইনের আওতায় নির্বাচন করা হয় বিদেশী প্রভুদের অঙ্গুলি হেলনে ২০০৮ সালে। পাহাড়সম কারচুপির নির্বাচনে বিশাল বিজয়ের পর ‘উদ্দিনদের’ সরকারের সব ক্রিয়াকর্মকে সাংবিধানিক বৈধতাও প্রদান করেছিলো হাসিনার সরকার। জনগণ তখন ঠিকই বুঝে নিয়েছিল কেনো এই জরুরী অবস্থা, কেনো এই সরকার পরিবর্তন এবং কাদের স্বার্থে এই নির্বাচন। কিন্তু জনগণ অবাক বিস্ময়ে দেখলেন এই সব ঘটনার মোজেজাটা বুঝতে পারলেন না খালেদা জিয়াসহ তার জোটভুক্ত শীর্ষস্থানীয় নেতানেত্রীরা! ষড়যন্ত্রমূলক সেই নির্বাচনের বিরোধিতা না করে খালেদা জিয়ার জোট সেই পাতানো খেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন সব বুঝেশুনেই যে এই নির্বাচনের একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো। ফলে অতি সহজেই সম্ভব হয়েছিল ২০০৮ সালের পাতানো খেলার নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সিটে জিতিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয় ভারতের স্বার্থে। সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার জন্যই দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সিটে জিতিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই নির্বাচনের পরিণতি আজ দেশবাসী শুধু যে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তাই নয়, দেশের মেরুদণ্ড সামরিক বাহিনীকেও নির্জীব ও পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজ অনেকাংশে লুটিয়ে দিয়েছে ভারতের নিকট নব্য লেন্দুপ দর্জি সম্প্রদায়।সর্ববিবেচনায় একটি অপরিমেয় সম্ভাবনার দেশ ও জাতিকে সুপরিকল্পিত ভাবে ধংসের মুখে ঠেলে দিয়ে পরভৃত করদ কিংবা অঙ্গরাজ্যে পরিণত করে তোলার চক্রান্ত বাস্তবায়নের পথে এগুচ্ছে ভারতীয় চাণক্যরা প্রণীত নীলনকশা অনুযায়ী। মদদ যোগাচ্ছে তাদের বিদেশী শক্তিধর দোসররা। কিন্তু লেখকের অভিমত, ‘জাতীয়তাবাদ আর ধর্মীয় মূল্যবোধের চ্যাম্পিয়ন’ বিরোধীজোট যদি ওই পাতানো খেলার নির্বাচনের বিরোধিতা করে নির্বাচন বয়কট করতো তাহলে কোনোক্রমেই আওয়ামীলীগকে এ ধরণের বিজয় পাইয়ে দেয়া সম্ভব হতো না। বিরোধী জোটের সেই ধরণের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভারত ও তার বিদেশী মুরব্বীরা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে  আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করতো বটে তবে সেই সরকার বৈধতা পেতো না, জনগণও মেনে নিতো না সেই উদ্ভট নির্বাচনের ফলাফল। এই সামান্য বিষয়টি বোঝার মতো প্রজ্ঞার অভাব ছিল কি বিরোধী জোটে? এটা মেনে নেয়া দুষ্কর, কারণ এই সাধারণ কথাটা বোঝার জন্য কোনও রকেট সায়েন্সের দরকার হয় না। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, কোনও স্বার্থ কিংবা লেনদেনের কারণেই শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের বিজয় এবং বিজিত সরকারকে বৈধতা প্রদানের জন্যই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী জোট ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল? এই প্রশ্নের জবাবও খুঁজে পেতে হবে দেশবাসীকে।

প্রেসিডেন্ট হবার পর চরিত্রহীন, দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী জেনারেল এরশাদকে জেনারেল জিয়া নিজেই সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ দিয়ে ভেবেছিলেন চারিত্রিকভাবে দুর্বল দুর্নীতি পরায়ণ এরশাদ তার ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে তার অনুগত পোষা হয়েই থাকবেন। কিন্তু জিয়া বুঝতে পারেননি কিংবা তাকে বুঝতে দেয়া হয়নি যে ভারতে NDC Course করাকালেই তার রুমমেট এক ভারতীয় কূটনীতিক মুচকুন্দ দুবের মাধ্যমে এরশাদ নিজেকে RAW-এর কাছে বিকিয়ে দিয়ে দেশে ফিরেছেন। জিয়া যখন দেশের একছত্র অধিপতি হয়ে ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন তখন তারই বিশ্বস্ত সেনাপ্রধান এরশাদ পর্দার অন্তরালে সামরিক বাহিনীতে জিয়া বিরোধী উষ্মাকে বিভিন্নভাবে হাওয়া দিয়ে উস্কে দিচ্ছিলেন নাটের গুরু হয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর সহায়তায়। ভারত সরকার আর RAW-এর মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আওয়ামী-বাকশালীদের সাথেও জেনারেল এরশাদের গাঁটছড়া বেঁধে দেয়া হয়। জিয়া ভারতের সাথে ডঃ কামাল হোসেন, তোফায়েল আহমেদ এবং ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মাধ্যমে গোপন সমঝোতা করার পরও, RAW তাকে হত্যা করার একটা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধীর অনুমতিক্রমে। কিন্তু ভারতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করায় নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর শ্রী মোরারজী দেশাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে ‘জিয়া হত্যা’ পরিকল্পনা স্থগিত রাখার জন্য RAW-কে নির্দেশ প্রদান করেন। এ সমস্ত তথ্য ভারতের প্রচার মাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে RAW বেছে নেয় বিকল্প পথ এরশাদের মাধ্যমে। ক্ষমতার ঘোরে আচ্ছন্ন জিয়া এতোটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে এই সমস্ত ষড়যন্ত্রের কিছুই তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলো না।