শিশুভাইকে বেনগাজীতে আসার অনুরোধ

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি এক রাতে শিশু ভাইকে ফোন করলাম

আসসালাম শিশুভাই, ডালিম হেয়ার, এয়ার চীফ ঘুরে গেলেন। আমাদের সবার ইচ্ছে আপনিও একবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের দেখে যাবার একটা ব্যবস্থা করে চলে আসুন। বিশেষ প্রয়োজন আপনার সাথে দেখা করার যদিও জানি আপনি ভীষণ ব্যস্ত থাকেন আজকাল, তোয়াব তাই বললেন। তার সফরের পর আপনার আসাটা বিশেষ জরুরী হয়ে পড়েছে আমাদের জন্য। I am sure, you know what I mean. Don’t you?

Walaikum Assalam, yes I do. I understand you guys are having a fabulous time out there as State Guests. What a coincidence! Zia has already asked me to visit you all to discuss a very important matter about his plan about your future. He is pressing me hard to take the trip at the earliest. তাই নাকি! তা হলে তো কোন সমস্যাই নেই। Please, come at the soonest. Wilco. I shall be with you all within a week In Sha Allah.
Oh! Shishu Bhai that would be great! We all shall be waiting anxiously for your arrival. Take care, Allah Hafez আল্লাহ্ হাফিজ জানিয়ে ফোন রেখে দিলেন শিশুভাই।

খবরটা জেনে সবাই খুবই খুশি হল, কিন্তু দুই ভায়রা ছিল নির্বিকার। আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম শিশুভাইয়ের আগমনের প্রতীক্ষায়। ইতিমধ্যে হঠাৎ আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে দুই ভায়রা বেনগাজীর বাইরে কোথাও চলে গেলো। জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও তাদের স্ত্রীরা জানালো না তারা কোথায় গেছে। তাদের এই ধরণের ব্যবহারে আমরা কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম। সালেমকে জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন, দুইজনই বিশেষ প্রয়োজনে লন্ডন গেছে। তবে প্রয়োজনটা কি সেটা সে জানে না। উধাও হওয়ার তৃতীয় দিন রাতে হঠাৎ টিভিতে আমরা সবাই দেখতে পেলাম, BBCতে এক টকশোতে রশিদ আর ফারুকের Live Interview প্রচারিত হচ্ছে। Interview নিচ্ছেন অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাস। তারা কথা বলছে ১৫ আগস্ট সেনা অভ্যুত্থান সম্পর্কে। তাদের এ ধরণের হঠকারি উদ্যোগে আমরা হতবাক হয়ে গেলাম! তাদের বক্তব্য শুনে সবাই শঙ্কিত হয়ে দুঃখে ক্ষোভে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। ব্যাংককের ঘটনার পর তাদের কিছুটা শক্তভাবেই বলা হয়েছিলো ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের কোনও প্রচারণা না করে। এরপরেও তাদের এই ধরনের উদ্যোগ নেয়া আমাদের জন্য ক্ষোভের কারণ হয়ে দাড়ালো। ফিরে আসার পর তাদের সাথে আমাদের এই বিষয়ে মনোমালিন্য এবং তিক্ততা সৃষ্টি হয়। দেশে-বিদেশে তাদের ওই ইন্টারভিউ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিলো, এখনও হচ্ছে। দেশের সব রাজনৈতিক দলই তাদের এই Interview থেকে যার যার স্বার্থে ফায়দা নেবার চেষ্টা করছে সত্যের বরখেলাপ করে।

এই হতাশার মধ্যেই খবর পেলাম শিশুভাই ত্রিপোলি এসে পৌঁছেছেন। জমির তাকে নিয়ে আসছে বেনগাজীতে। ত্রিপোলিতে ট্রানজিটে কিছু সময় কাটিয়ে দুপুরে বেনগাজীতে এলেন শিশুভাই। লন্ডন থেকে আসায় কিছুটা ক্লান্ত। তাই প্রথমেই তার বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হল লম্বা সফরের ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য। গোসল করে অল্প কিছু খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত লম্বা ঘুম দিয়ে ফ্রেশ হয়ে উঠলেন শিশুভাই।

স্বাধীনতার পর জিয়াকে যখন সেনাসদরে বদলী করে আনা হয়ে তখন শিশুভাই কিছুদিন কুমিল্লাতে ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। শিশুভাই এর নেতৃত্বে আমরা কুমিল্লাতে ২টি আর্টিলারি ইউনিট ১ম ফিল্ড রেজিমেন্ট এবং তৃতীয় ফিল্ড রেজিমেন্ট গড়ে তুলেছিলাম। তাছাড়া Bangladesh Military Academy এবং Physical Training School গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও তখনই শুরু করা হয়েছিলো। সবাই আমরা দিনরাত অমানুশিক পরিশ্রম করে চলেছিলাম সেই প্রতিষ্ঠান গুলো দার করাবার জন্য।

সেই সময় প্রায় প্রতিসপ্তাহে আমরা সপরিবারে ঢাকায় চলে আসতাম। শিশুভাই এবং টনিভাবী তাদের নিজস্ব বাসায় না থেকে আমাদের বাড়িতে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন পারিবারিক সম্পর্কের কারণে। বিত্তবান বন্ধুদের পার্টিতে যোগ দিয়ে হৈ হুল্লোড় করে কুমিল্লায় সোমবার সকালে ফিরে গিয়ে প্যারেডে উপস্থিত হতাম। রশিদ, ফারুকের সাথে আমাদের ‘নাবালক জেনারেল’ শিশুভাইর তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না। পাশা, শাহরিয়ার, হুদাও তখন কুমিল্লাতেই আমাদের সাথেই। নূরের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ‘৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময় থেকেই। পথে লন্ডনে তিনি খালাম্মাদের সাথেও দেখা করে এসেছেন। খালাম্মা আমাদের জন্য কিছু দেশী মাছ ও চওসা আম, পানের সরঞ্জাম পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া টনি ভাবী দেশ থেকে মেয়েদের জন্য শাড়ি আর ছেলেদের জন্য পায়জামা কুর্তা পাঠিয়েছেন। সাথে পাটালি গুড়, চিঁড়া-মুড়ি- আরো দিয়েছেন পোড়াবাড়ির চমচম আর নাটোরের কাঁচাগোল্লা। শিশুভাইয়ের আগমনে আমাদের ভায়রা ভাইদের প্রতি ক্ষোভ অনেকটাই প্রশমিত হল। আমরা সবাই তার আসায় খুশি হলেও রশিদ, ফারুক তার আগমনকে সন্দেহের চোখে দেখতে লাগলো। আমরা জানতাম, বর্তমানে শিশুভাই জেনারেল জিয়ার একজন আস্থাভাজন পরামর্শদাতা হলেও তিনি এখানে তার পক্ষ থেকে গোয়েন্দাগিরি করতে আসেননি। তিনি এসেছেন আমাদের পুরনো অতি আপন শিশুভাই হিসেবেই। শিশুভাই, জিয়াউর রাহমান, মীর শওকত, মুস্তাফিজুর রহমান সবাই পাকিস্তান আর্মিতে থাকা কালে Intelligence Course করা অফিসার এবং একই সময় ISI-তে তরুণ অফিসার হিসাবে চাকুরি করেছেন। এটাই শিশুভাইয়ের উপর জিয়ার আস্থার কারণ। আসার আগে শিশুভাই আব্বার সাথেও দেখা করে এসেছেন। শিশুভাই পৌঁছার আগেই আব্বা ফোনে আমাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন-শিশু তোদের বর্তমান জটিল অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানাবে যাতে তোরা ভবিষ্যতে তোদের করণীয় বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিস। শিশুভাইকে আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে জমির ফিরে গেলো ত্রিপোলিতে। আমরা ঠিক করে রেখেছি যে সমস্ত জটিল সমস্যা নিয়ে আমরা দিনরাত ভাবছি সেগুলো সম্পর্কে শিশুভাই এর বিশ্লেষণ আমাদের জেনে নিতে হবে। আমরা বলবো কম শুনবো বেশি। আমরা জানতাম রশিদ আর ফারুক আমাদের আসরে অস্বস্তির কারণেই বেশীক্ষণ থাকবে না। তারা চলে যাবার পরই শুরু হবে আমাদের সিরিয়াস আলাপ। তাদের উপস্থিতিতে শিশুভাইও খোলামেলা আলাপ করবেন না। তিনি চাইবেন আমাদের সাথেই মন খুলে আলাপ করতে। ভায়রা ভাইদের ওজন কতটুকু সেটা শিশুভাই ঠিকই জানতেন। সেনা পরিষদ সম্পর্কে বিশদভাবে না জানলেও শিশুভাই জানতেন আমাদের জনপ্রিয়তা এবং শক্তি সামরিক বাহিনীতে কতটুকু। তিনি যুদ্ধকালীন সময় থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন একটা সমঝোতার ভিত্তিতে জিয়াকে বর্মের আবরণে রেখে কি করে সেনা পরিষদ তাঁকে Rallying person হিসাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুভাইয়ের চেয়ে বেশি কেউই জানবে না, ৭ই নভেম্বর কোন শক্তি জিয়াকে মুক্ত করে তাকে চীফের পদে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলো। সেনাবাহিনীতে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়া আনার নামে জিয়া ঐ শক্তির সাথে কি করছেন? তার অপ্রত্যাশিত ন্যক্কারজনক-নৃশংস এই বিশ্বাসঘাতকতার কারণটা কি! জিয়া সম্পর্কে সেনা পরিষদ এবং আমাদের মনে যে অস্বচ্ছতা দেখা দিয়েছে সেটা পরিষ্কার করে নিতে হবে শিশুভাইয়ের কাছ থেকে যাতে স্বচ্ছ ধারণার উপর ভিত্তি করে আমরা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। সন্ধ্যায় শিশুভাই জেগে ওঠার পর চা-নাস্তা সেরে আমরা কনফারেন্স রুমে তাকে নিয়ে বসলাম। রশিদ, ফারুককেও ডেকে আনা হল। বৈঠকের শুরুতেই রশিদ জিজ্ঞেস করলো, শিশুভাইয়ের আগমনের এজেন্ডা কি?

জবাবে শিশুভাই বললেন

আমি মূলত এসেছি তোমাদের সাথে দেখা করে খোঁজখবর নিতে। তাছাড়া জেনারেল জিয়ার তরফ থেকে তোমাদের জন্য একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। প্রস্তাবটা কি? ফারুকের প্রশ্ন।

আমি ফিরে যাবার পর জেনারেল জিয়া ডালিম আর রশিদকে ডেকে পাঠাবেন তোমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে আলোচনার জন্য। Why only Dalim and Rashid? ফারুক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। শিশুভাই তার স্বভাবসুলভ স্মিতহাসির সাথে জবাব দিলেন

জেনারেল জিয়ার মনের খবর আমার জানার কথা নয়। তবে ধারণা করছি, দুই ভায়রার তরফ থেকে একজন আর বাকিদের তরফ থেকে একজনকে ডেকে পাঠালেই যথেষ্ট হবে বলে মনে করে থাকতে পারেন জেনারেল জিয়া। ফারুক জবাব শুনে ঠোঁট কামড়াতে থাকল। উত্তেজিত হলে ঠোঁট কামড়ানো তার একটি বদ অভ্যাস। ফারুক বলে উঠলো জিয়া আগস্ট বিপ্লব এবং আমাদেরসহ বিপ্লবীদের সাথে ক্ষমতালিপ্সু হয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমাকে ডেকে পাঠালে আমি তাকে এই সত্যিটা সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতাম। শিশুভাই তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললেন

যা বুঝাবার সেটাতো অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাস-এর সৌজন্যে বিবিসির টক শোতে লাইভ ইন্টারভিউতে প্রচার করে শুধু জিয়াকেই নয়, বিশ্ববাসীকেই বুঝিয়ে দিয়েছো। সেক্ষেত্রে একই কথা শোনার জন্য তোমাকে ডেকে পাঠাবেন কেনো জেনারেল জিয়া? Interview তে রশিদকে কথা বলার তেমন একটা সুযোগ তুমি দাওনি। তাই তার না বলা কথাগুলো হয়তো জেনারেল জিয়া শুনতে চান। বুদ্ধিমান শিশুভাই এমন একটা মোক্ষম উত্তর দেবেন সেটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। ফারুক যথোপযুক্ত জবাবটা হজম করে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলল As far as I am concerned, I am least interested to talk with a traitor. He can go to hell, but let me tell you his heinous injustice and crime shall not go unchallenged. You may convey this to him. I shall do that. Bloody swain bastard Zia! Have you got anything else to communicate?
No, nothing of your interest I presume. Well, then we shall beg your leave. Pleasure is yours. বলতেই রশিদের দিকে তাকাল ফারুক। উঠে দাড়ালো রশিদ। চলে যাচ্ছিলো দুই ভায়রা। হঠাৎ শিশুভাই রশিদের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন

কি রশিদ ডাকলে যাবে তো? স্বভাবসিদ্ধ মিনমিনে গলায় একটু বাঁকা ভাবে রশিদ জানালো

Formal invitation টা এলে ভেবে দেখবো কি করা উচিৎ।

এরপর দুই ভায়রা কনফারেন্সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম! কিছুটা বিব্রতভাবেই আমি বললাম

বিশ্বাস করুন শিশুভাই, তাদের ওই Live Interview সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। হঠাৎ দুই ভায়রাকে TV তে দেখে আমরা সবাই বেকুব বনে গিয়েছিলাম। ব্যাংককে তাদের আমেরিকান এমব্যাসিতে যাওয়াটাও ছিল degrading and we had warned them both not to act like this in future and they agreed. এরপরও এ ধরনের একটা preposterous self-defeating venture তারা করতে পারে সেটা আমরা ভাবতেও পারিনি। তাদের ঐ Interview নিয়ে আমরা সবাই ভীষণ ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আমি জানি এই ধরনের হঠকারি তৎপরতার সঙ্গে তোমাদের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। ধীরে ধীরে পরিবেশ হাল্কা এবং আনন্দমুখর হয়ে উঠলো। পাশাই কথা শুরু করলো

জানতে পারলাম, জিয়ার একান্ত বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি হিসেবে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ‘বাংলাদেশের রাজপুতিন’ নামে খ্যাতি লাভ করে ফেলেছেন, তার পরিণতিটাও কিন্তু রাশিয়ার জারের চেয়েও করুণ হয়েছিলো। তাকেও বিপ্লবীরা জার পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে গুলি করে মেরে ফেলেছিলো। পাশার কথায় সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। পাশার কথার জের ধরে আমি বললাম

আমাদের Happy go lucky type শিশুভাইয়ের পাকিস্তানের জেনারেল জিয়াউল হকের রাজনৈতিক গুরু জেনারেল জিলানীর মতো জেনারেল জিয়াউর রহমানের Political Guru হবার খায়েশ হল কেনো? নামের মধ্যে কিছুটা মিল আছে তার জন্য নাকি Rich and Famous হবার বাসনায়!

হাসির রোল উঠলো আবার।

একটা প্রশ্নের মত প্রশ্ন করেছো মানতেই হবে, তবে জবাবটা দুটোর একটাও নয়। I must clear one thing here that I still stick to what I said to you all in Bangkok. When Zia requested me that he needs me, I very frankly told him that I still maintain my earlier position that I am not at all interested to serve in the army so, I can’t help him in military affairs. Listening to my submission he requested me to help to lay the political platform for him. Considering his mind set and ruthlessness I had thought that it would not be prudent to refuse his request. Therefore, I decided to accept this assignment but on clear terms that the moment my immigration papers would be in my hand I along with my wife and children shall leave for USA to join the rest of my family. That is how got involved in the political affairs. Now, reiterating my position I feel obligatory that I must tell you guys something in confidence as I and Tony love you all and particularly, we are indebted to Dalim and Shapan and their family. The reason is well known to you all.

বুঝতে পারলাম শিশুভাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবেন। আমার বক্তব্যের অনেক কিছুই ডালিমের জানা আছে, তবে তোমাদের অনেকেরই হয়তো অনেকটাই জানা নেই। তরুণ ইন্টেলিজেন্স অফিসার হিসাবে আমি, জিয়া, মীর শওকত, মুস্তাফিজুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে পোস্টেড ছিলাম। কোনও রাজনৈতিক দায়িত্বে আমরা কেউই নিয়োজিত ছিলাম না। তাই জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গন তো দূরের কথা, মাটি আর মানুষের সাথে আমাদের কোনও সম্পর্কই ছিল না। যেমনটি রয়েছে তোমাদের প্রায় সবারই। ছাত্রাবস্থা থেকেই তোমরা সবাই কমবেশি জড়িত ছিলে ছাত্র এবং জাতীয় রাজনীতির সাথে। ফলে বিভিন্ন মত ও পথের রাজনৈতিক দল, নেতা-কর্মীদের সাথে তোমাদের পরিচিতি ও ঘনিষ্ঠতার বলয় বহুল বিস্তৃত। এর জন্যই মূলত ‘৭১ সালে যুদ্ধের সময়কালে এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশকে নিয়ে রুশ-ভারত আধিপত্যবাদী নীলনকশার বিরুদ্ধে তোমরা গোপন সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করার উদ্যোগ নিতে পেরেছিলে। জিয়া ছিল তোমাদের Rallying Point. তোমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর বৈপ্লবিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পুরানো সমাজকে বদলিয়ে এক নতুন গণমুখী, প্রগতিশীল, স্বনির্ভর, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। Am I right? To be honest, very few of us had slightest clue about all such pious dreams. But you know something, at heart I sincerely got fascinated with the courage and commitment of you all and your cause but couldn’t be bold enough to be part of that endeavor. ওই সময় থেকেই আমি তোমাদের মনে মনে শ্রদ্ধা করে এসেছি এবং ভালবেসেছি আন্তরিকভাবে। কিন্তু জেনারেল জিয়াকে যখন তোমরা মধ্যমণি হিসাবে গ্রহণ করেছিলে তখন আমার মনে হয়েছিলো তোমরা ভুল করছো। একদিন আমি এই বিষয়টি ডালিম আর নূরের কাছে উত্থাপনও করেছিলাম, কিন্তু ওরা দু’জনই তখন আমাকে বলেছিলো

শিশুভাই, মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদের মন-মানশিতার অনেক পরিবর্তন এনেছে। সেই ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন জেনারেল জিয়ার মধ্যেও তো আসা সম্ভব। তাছারা তিনি কোরআন শপথ নিয়ে আমাদের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী হয়েই আমাদের সাথে ভবিষ্যতের সংগ্রামে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাকে কি করে অবিশ্বাস করা যায় বলুন? এর জবাব আমার কাছে ছিল না তাই চুপ করে গিয়েছিলাম। ডালিম, নূর তোমরা দু’জনেই এখানে উপস্থিত, বল আমি সত্যি বলছি কিনা।

আপনি সত্যিই বলছেন।

এতদিন যে কথাগুলো মনে চেপে রেখেছিলাম সেগুলোই আজ তোমাদের কাছে বলে নিজেকে একটু হালকা করতে চাচ্ছি যদিও আমার এই বক্তব্য তোমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে। Hope, I am not boring you all?না, শিশুভাই মোটেও না, বরং ভালোই লাগছে আপনার স্পষ্ট অভিব্যক্তি। আপনি বলুন নিঃসংকোচে।

Thanks. আবার বলা শুরু করলেন শিশুভাই

যদিও ১৯৭১ সাল থেকেই আমি আর্মি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম মনেপ্রাণে তবুও আমি কিন্তু দেখছিলাম স্বাধীনতার পর কি অসাধারণ প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, সাহস আর বুদ্ধিমত্তার সাথে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবিশ্বাস্য দক্ষতার সাথে তোমরা নিজেদের সংগঠিত করছিলে। Being a man trained in intelligence I was simply dazed! এতে তোমাদের জন্য আমার মনে শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছিল। মনে করো না শিশুভাই তেল দিচ্ছেন, কিন্তু দেখলাম সব চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যখন তোমরা জেনারেল জিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসালে তখনই মানুষটি তোমাদের পিঠে ছোরা মেরে অন্য পথে যাত্রা শুরু করলো! এতে তোমাদের কোনও দোষ নেই As, it is most difficult thing to read human mind and psychology. I was simply shocked and I cried believe it or not! এ ধরনের মোনাফেকি জিয়া কেনো করলো সেটা এখনও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তোমরাতো তাকে একজন জনদরদী বড় মাপের জাতীয় নেতাই বানাতে চেয়েছিলে, সেই ক্ষেত্রে সে কাদের পরামর্শে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরে বসলো এটাও একটি রহস্য! সময়ই একদিন এই রহস্য উদ্ঘাটন করবে। আমরা উপস্থিত সবাই শিশুভাই-এর স্বগতোক্তি নিশ্চুপ হয়ে শুনছিলাম। জিয়ার একজন বিশেষ আস্থাভাজন জেনারেল হয়েও এতোটা আন্তরিকতার সাথে তিনি এত খোলাখুলি ভাবে আমাদের বিশ্বাস করে এভাবে নিজের অন্তরটাকে আমাদের কাছে মেলে ধরবেন এতোটা প্রত্যাশা আমাদের ছিল না। এ যেন এক অচিন্তনীয় বিস্ময়! তার আন্তরিকতা আমাদের সবার মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো। আমরা আজ অজানা অন্য এক শিশুভাইকে আবিষ্কার করে আবেগে আপ্লুত হলাম। আন্তরিকভাবে শিশুভাই যা বলছিলেন তাতে আমরা অনেক জটিল প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাচ্ছিলাম। তার বক্তব্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার খোরাকও রয়েছে আমাদের জন্য।

পাশা বললো

আচ্ছা, শিশুভাই আপনি বললেন জেনারেল জিয়া কেনো এমন বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, তার জবাবটা এখনও আপনার কাছে স্পষ্ট নয়। আমার বিশ্বাস জেনারেল জিয়াকে আপনি যতটুকু জানেন সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে একটা ধারণা আপনার নিশ্চয়ই আছে। আমার অনুরোধ আপনি সেটাই আমাদের বলুন।

পাশা, তুমি ঠিকই বলেছো। সহকর্মী হিসাবে জেনারেল জিয়ার চরিত্র এবং মানসিকতা সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত একটা মূল্যায়ন অবশ্যই আছে। জানিনা আমার এই মূল্যায়নের সাথে তোমাদের মূল্যায়নের মিল থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। তবু পাশা যখন জানতে চাইলো তাই বলছি।

পাকিস্তান আমলে সামরিক বাহিনীতে আমরা যারা ভর্তি হয়েছিলাম তারা সবাই প্রায় উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত থেকে আগত। রাজনৈতিক সচেতনা এবং জাতীয় রাজনীতির সাথে আমাদের বেশীর ভাগ সদস্যদের কোনও যোগাযোগ তেমন একটা ছিল না। তাই সমাজিক শোষণ-বঞ্চনা সম্পর্কে আমরা ছিলাম অসচেতন। আর্মি পাকিস্তানের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই ছিল শাসকগোষ্ঠীর মেজর পার্টনার। তাই আমরা সবাই হয়ে উঠি Part of ruling elites. দেশের অনান্য শ্রেণী বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আমরা সর্বদাই অবজ্ঞার চোখেই দেখেছি। তাইতো আমাদের সবার মুখে মুখে একটি প্রবাদ বহুলভাবে উচ্চারিত হতো ‘Damn Politician!’ আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ এবং সুশীল সমাজপতিদেরও আমরা তেমন কোনও পাত্তা দিতাম না। এর জন্য চকচকে বন্দুকের নলের ভয়ে ওদের নতজানু ‘জি হুজুর’ মানসিকতাই ছিল প্রধান কারণ। আমাদের একটা জ্ঞান দেয়া হয়েছিলো, দেশের উন্নয়নে এদের তুলনায় আমরাই বেশি contribute করতে সক্ষম because, we are relatively more cohesive disciplined force, more focused about the modern world affairs and technology besides, the vested interested feudal landlords. এই complex-এর ফলেই পাকিস্তানে দীর্ঘকাল সামরিক শাসন কায়েম থাকে। জেনারেল জিয়া comes from a very humble middle class family. গাবতলিতে জন্মালেও করাচির জ্যাকব লেনে থেকে মানুষ। তার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে। একজন Section Officer. করাচীর জ্যাকব লাইনের বাসিন্দা ইসলামিয়া কলেজ থেকে পাশ করে সোজা PMA তে। ছাত্র জীবনে রাজনীতির ধারে কাছেও ঘেষেননি জেনারেল জিয়া। পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম হলেও পূর্ব পাকিস্তানের মাটি আর মানুষের সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিল না। ঠিকমত বাংলাও বলতে অভ্যস্ত ছিলেন না জেনারেল জিয়া। রাজনৈতিক জ্ঞানের দৌড় ঐ পর্যন্ত, দেশের কল্যাণে সামরিক বাহিনীকেই হতে হবে মেজর প্লেয়ার। বাকিরা থাকবে তাদের অধীনস্থ। প্রগতিশীল কিংবা বামপন্থীদের তো আমরা জাতীয় শত্রুই মনে করতাম সে কারণেই পাকিস্তানে বাম রাজনীতি ছিল ব্যান্ড। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে দ্বিধা নেই, সাম্যবাদ কিংবা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের আকর্ষণ বা জ্ঞান ছিল শূন্যের কোঠায়। বেশিরভাগ অফিসারই ছিলাম চাকুরিতে কি করে উন্নতি করা যায় সেই প্রচেষ্টায় নিয়োজিত। ‘৭১ সালে আর্মি ক্র্যাকডউনের পর সবকিছুই ওলটপালট হয়ে যায়। মুজিব বা জিয়া কেউই জানতেন না, কি করে এ ধরনের শ্বেতসন্ত্রাস থেকে নিজেদের বাঁচানো যায়। ফলে নিজের অজ্ঞতা এবং অধীনস্থদের চাপ থেকে বাঁচার জন্য মুজিব স্বেচ্ছায় আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আর জিয়া অধীনস্থ অফিসার আর সৈনিকদের চাপে নিরুপায় হয়ে অনেকটা প্রাণের দায়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই স্বাধীনতার ঘোষণা রাতারাতি জিয়াকে পরিণত করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে একজন সাহসী যোদ্ধা ও দিকনির্দেশক হিসাবে। জিয়ার এই পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা তাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো জনগণের চোখে সে সম্পর্কে জিয়া সেই সময় নিজেও বুঝতে সক্ষম হননি, কিন্তু ভারত ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো। পরে ভারতের চাপে তার ঘোষণায় পরিবর্তন এনে মুজিবের নামটাও যুক্ত করা হয়। জিয়া তার প্রথম ঘোষণায় নিজেকেই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রচার করেন। তার সেই ঔদ্ধত্যকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেনি রুশ-ভারত অক্ষশক্তি এবং তাদের দোসর এবং মনোনীত অস্থায়ী আওয়ামীলীগ সরকার। As a logical conclusion he was admonished and removed from the post of Sector Commander of No1 Sector thus withdrawing from the main stream of the freedom struggle and was dumped at the Mujib Nagar Headquarters at 8 Theater Rd in Calcutta. In other words, he was literally being thrown into dustbin. কিন্তু তোমাদের চাপে তাকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেয়া সম্ভব হয়নি। Rest is history. আমি যতটুকু জানি তার চেয়ে অনেক বেশি জানো তোমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করার সাথে সাথে সেনা পরিষদের ভিত্তি তৈরি করছিলে। যোগাযোগ বৃদ্ধি করছিলে অনান্য দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের সাথে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ভারতের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের স্বাধীনতার যুদ্ধে রত ‘Seven Sisters’ এর নেতা-কর্মী এমনকি নকশালবাড়ি আন্দোলনের চারু মজুমদারের সাথেও তো তোমাদের যোগাযোগ ছিল। বন্ধু হিসেবে বিভিন্ন ভাবে তোমরা তাদের সংগ্রামে সাহায্য-সহযোগিতাও করেছো। এই ধরনের দূরদর্শিতা একমাত্র রাজনৈতিকভাবে সচেতন ব্যক্তিদের পক্ষেই সম্ভব হয়।

এবার স্বল্পভাষী নূর মুখ খুললো

আচ্ছা শিশুভাই! বলুন তো, আমরাও তো উচ্চ বা মধ্যবিত্ত ঘরেরই সন্তান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জিয়ার সাথে আমাদের তফাৎটা কিভাবে দেখেন আপনি?

এখানে তোমরা যারা রয়েছো, শ্রেণীগত ভাবে তাদের অনেকেই জিয়ার চেয়ে উচ্চতর শ্রেণী কিংবা তার মত শ্রেণী থেকেই আগত। কিন্তু তফাৎটা হল, তোমাদের সাথে মাটি ও মানুষের সম্পর্ক রয়েছে বরাবর। তাছাড়া, তোমরা পারিবারিকভাবে কিংবা ব্যক্তিগত ভাবে রাজনীতির সাথে পরিচিত কিংবা জড়িত। তাই তোমাদের সবাই শৈশব থেকেই রাজনৈতিক ভাবে সচেতন। এখানেই হচ্ছে তোমাদের মননশীলতা আর জিয়ার চিন্তা চেতনার তফাৎ। এ ছাড়াও আর একটি Deference আছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তোমরা নিজেদের যতটুকু De-class করতে পেরেছো সেটা জিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়নি, হবেও না কখনোই। মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দুঃখ, কষ্ট, শোষণ, বঞ্চনা, প্রত্যাশা তোমাদের মনকে নাড়া দিয়ে তোমাদের মধ্যে যে ধরনের পরিবর্তন এনেছে, তেমন কোনও পরিবর্তন জিয়ার মধ্যে আসেনি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, সব সেক্টর থেকে Careerist Officer দের সবাইতো রীতিমত পাল্লা দিয়ে গেরিলা যুদ্ধের ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টের জীবন ছেড়ে ‘Z’,’S’, ‘K’, ফোর্স নামের তিনটি Regular Brigade এ ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ঢুকে পড়েছিলো লিন্তু কই, তোমাদের কেউই তো সাথী মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ করে গিয়ে ঢুকলে না ঐ নিয়মিত বাহিনীর খোঁয়াড়গুলোতে সব অনুরোধ-উপরোধ উপেক্ষা করে। থেকে গেলে সহযোদ্ধাদের সাথেই লুঙ্গি আর গামছা পরেই। বিভেদটা এখানেই। জিয়া নিজেকে তোমাদের মতো শ্রেণীচ্যুত করে জনতার কাতারে কখনোই সামিল করবেন না। ব্যক্তিগতভাবে জেনারেল জিয়া কোনও বিপ্লবী নন। তিনি একজন উচ্চাভিলাষী নকরিবাজ আর্মি অফিসার। চতুর এবং সুযোগ সন্ধানী জিয়া অতি সহজেই হাতের মুঠোয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেতে সক্ষম হয়েছেন তোমাদের বদৌলতে কিন্তু তার রাজনীতি হবে পাকিস্তানী সেনাশাসকদের মতোই। কারণ, জিয়া সেই ধরণের রাজনীতির সাথেই পরিচিত। তার রাজনীতি হবে সমঝোতা এবং দেয়ানেয়ার গণ্ডিতে, কোনোক্রমেই বৈপ্লবিক নয়। জিয়া এবং তার রাজনীতি সম্পর্কে শিশুভাই এর অভিমত যদিও হতাশাব্যঞ্জক কিন্তু সারগর্ভ। আমি জিজ্ঞেস করলাম

What about Genera Guderian Mnzoor? শিশুভাই মৃদু হেসে বললেন

You know the answer I am sure. If you have asked my opinion just to reassure then I may say, slightly better but not much difference except Manzoor being known as ‘Guderian’ is much more ambitious than Zia. Should he get any chance then he wouldn’t do anything radical as well. কি ডালিম, am I too far away from your assessment?

Really, don’t know as you yourself had said, it is hard to read any one’s mind. Besides, once bitten twice shy! সবাই আমার জবাবে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। নতুন একটা সিগারেট ধরিয়ে একটা সুখটান দিয়ে শিশুভাই নিজের থেকেই বলতে শুরু করলেন

কি জানো, ছাপোষা পরিবারে জেনারেল জিয়া বড় হয়েছেন হিসাব নিকাশ করেই। তাই সব ব্যাপারেই তিনি লাভ-লোকসানের খতিয়ানটা খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেই পা ফেলায় অভ্যস্ত। তার মধ্যে উদারতা, আবেগ, অনুভূতি, রোমান্টিকতা বা রোমাঞ্চ বলে কিছু নেই। পক্ষান্তরে, তোমাদের মতো Affluent পরিবারে যারা জন্মেছো তাদের মন আর হাত দুটোই থাকে অবারিত। লাভক্ষতির হিসাব করতে তাই তোমরা খুব একটা অভ্যস্ত না। তাছাড়া যারা গোয়েন্দা হিসাবে কাজ করে তাদের মধ্যে কতগুলো Character traits develop করে automatically. যেমনঃ- সন্দেহ প্রবণতা, কান কথায় বিশ্বাস করা, পারস্পরিক সম্পর্কে বিশ্বাসের ঘাটতি, মেপে কথা বলা, প্রাণখুলে হাসতে না পারা ইত্যাদি। সহজ সরল ভাবে কোন কিছুকেই তারা গ্রহণ করতে পারে না। সবকিছু মিলিয়ে তাদের অন্তরটা হয়ে ওঠে খুঁতখুঁতে এবং সংকীর্ণ। আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই কথাগুলো বললাম।

বলুন তো শিশুভাই, বর্তমানে জিয়া সামরিক বাহিনীকে কতভাগে বিভক্ত করে তার একছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছেন? প্রশ্ন করলো নূর।

তিন-চার টি ভাগ সুস্পষ্ট। একদিকে রয়েছে Repatriated Lot, অন্যদিকে রয়েছে মঞ্জুরকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধারা, তৃতীয় ভাগে রয়েছে inducted Rakkhis and left over Awami Bakshalites. চতুর্থ ভাগে রয়েছে তোমাদের সংগঠনের বেঁচে থাকা সদস্যবৃন্দ এবং তাহেরের গুটিকতক অনুগামী।

এদের মধ্যে কাদের তিনি সবচেয়ে বেশী নির্ভরশীল ও বিশ্বাসী মনে করছেন? হুদার প্রশ্ন।

কাউকেই না। কারণ, তিনি মনে করছেন তাদের সবার অস্তিত্বই তার করুণার উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা এবং Chain of Command ফিরিয়ে আনার ধুয়া তুলে জেনারেল মহব্বতজানের তত্ত্বাবধানে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ১৮-১৯ টা অভ্যুত্থানের নাটক সাজিয়ে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশী অফিসার আর সৈনিক নিধন করার পর তার সেই প্রত্যয় আরও পোক্ত হয়েছে। Now he thinks he is the king of the kings. Therefore, he can easily fire any one at any time at his whims, remaining as strong as ever.

Excellent! হুদা মন্তব্য করল জবাব শুনে। এবার শাহরিয়ারের প্রশ্ন

আচ্ছা শিশুভাই, এতক্ষণ যে সমস্ত বিষয়ে খোলাখুলি আলাপ হল তাতে তো মনে হয় আজঅব্দি জিয়া আমাদের সাথে ছলনা করে আমাদের ব্যবহারই করে এসেছেন তার আখের গোছাতে। বর্তমানে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণের পথে তো কোনও বাধাই নেই মনে হচ্ছে। তিনি সেনা পরিষদের শক্তি প্রায় নির্মূল করে দিয়েছেন, তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। জাসদের অন্যান্য নেতাদের সাথে আপোষ করে ছেড়ে দেবেন কিছুদিন জেলে রেখে। তাদের অনেককেই হয়তো ভবিষ্যতে তার দলেও দেখা যাবে। কিন্তু তিনি তার রাজনীতির মূল আদর্শ জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে প্রচার করছেন এতে একটা দ্বৈততা রয়েছে না? কর্নেল তাহের এবং মেজর জলিল বুঝতে পেরেছিলেন দেরিতে হলেও যে জাসদ আওয়ামী লীগেরই ‘B’ টিম, তাই তারা নিজেদের চেষ্টায় জনযুদ্ধের স্বার্থে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছিলেন নিজেদের উদ্যোগেই। আমাদের সাথে দুইজনেরই প্রায় নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আমাদের মধ্যে তাত্ত্বিক দিক দিয়ে একটাই পার্থক্য ছিল। আমরা বিশ্বাস করতাম, ইসলামিক দর্শন ঐশ্বরিক বিধায় মার্ক্সীয় দর্শনের চেয়েও উত্তম। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং অনুশাসন ছাড়া অন্য কোন ‘ইজমই’ গ্রহণীয় নয় এই সত্যটা অনেক আগেই প্রমাণিত। এই দেশের ৮ কোটি মুসলমানের মন ভিজবে না কোন দর্শনের জিকির তুলে যেখানে ইসলাম থাকবে না। তাহের এবং জলিল কিন্তু আমাদের এই যুক্তি খণ্ডাতে পারেননি। যখন তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তাদের তথাকথিত ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ নামক উদ্ভট দর্শন দেশের সাধারণ জনগণ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা এবং সামরিক বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে কোনদিনই গ্রহণযোগ্য হবে না এবং আমাদের নীতি-আদর্শই যে সঠিক ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন ও প্রত্যাশার রিপ্রেক্ষিতে সেটাও তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন সেনা পরিষদের জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক শক্তি দেখেই। ফলে এক সময় তারা আমাদের সাথে একযোগে রাষ্ট্রীয় এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রগতিশীল, সুখী, সমৃদ্ধশালী, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যেতে রাজি হয়েছিলেন। সবকিছু বিস্তারিতভাবে জানার পরও জিয়া কেনো এইভাবে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলেন আর আমাদের এতদিনের সব প্রচেষ্টাকে পণ্ডশ্রমে পরিণত করলেন! এর পরিণতি কখনই ভালো হতে পারে না। যেদিন জিয়ার মুখোশ উন্মোচিত হবে সেদিন দেশবাসী তাকে মুজিবের চেয়েও বড় গিরগিটি আর বিশ্বাসঘাতক হিসাবে দেখবে। আল্লাহ্ পাকও মোনাফেকি পছন্দ করেন না। আপনি দেখবেন, অসৎ নিয়তের পরিণাম জিয়ার জন্য ভয়ংকর হবে, বুচ্ছেননি দাদা? জিয়ার যাই হউক না কেন সেটা আমাদের ভাবার বিষয় নয়, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়নের যে সুবর্ণ সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করেছিলাম তা থেকে জিয়া দেশ ও জাতিকে বঞ্চিত করলেন এই সত্যটা অবশ্যই একদিন দেশবাসী জানতে পারবে। ফলে জিয়া চিরস্থায়ী ভাবে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়েই ঠাঁই পাবেন ইন শাহ আল্লাহ!

শিশুভাই শাহরিয়ারের খেদোক্তির পুরোটাই শুনলেন কিন্তু জবাবে কিছুই বললেন না। এবার আমি তার কাছ থেকে আর একটু পরিষ্কার ভাবে জানতে চাইলাম

শিশুভাই, আপনি কি মনে করেন না যে জিয়া সম্পূর্ণভাবেই অবগত কি করে কাদের বলে আজ তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত? ১৫ই আগস্ট আর ৭ই নভেম্বর-এর অভ্যুত্থানের মূলশক্তি এবং অগ্রণী কারা? তারপরেও কেনো তিনি আমাদের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ভিন্ন পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের, দেশ ও জাতির সর্বনাশ করতে চলেছেন! জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে এই বিষয়টা কখনো কি আপনি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন?

হ্যাঁ করেছিলাম, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।

কেনো?

রাজনৈতিক ক্ষমতা সম্পর্কে জিয়া উচ্চাভিলাষী, তবে তিনি কোনও ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত নন। অন্যভাবে বললে বলতে হয়, তিনি তোমাদের মতো রেডিক্যাল নন। তিনি তার রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করবেন তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য সামরিক শাসকদের মতো সমঝোতার রাজনীতির মাধ্যমেই। তার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হবে পরোক্ষভাবে বৈদেশিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দ্বারাই। সেই ক্ষেত্রে তাকে সমঝোতা করতে হবে দেশের কায়েমী স্বার্থবাদীগোষ্ঠী এবং তাদের প্রসূত রাজনৈতিক দল এবং তাদের বিদেশী প্রভুদের সাথে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকেই প্রণীত তোমাদের জনপ্রিয় কর্মসূচী এটা বুঝেই জিয়ার আদেশেই আমাকে তোমাদের নীতি-আদর্শ এবং কর্মসূচির ভিত্তিতে তার ১৯ দফা এবং পার্টি ম্যানিফেস্টো তৈরি করতে হয়েছে। সঙ্গত কারণেই তোমরা মনে করো বৈপ্লবিক পদক্ষেপ ছাড়া এই ম্যানিফেস্টো কার্যকরী করা সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি মনে করেন, সেটা প্রচলিত পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর মতো গণতান্ত্রিক ধারায় বোঝাপড়ার রাজনীতির মাধ্যমেই করা সম্ভব। তার জন্য মূল সমস্যা হচ্ছে, এই ধরনের রাজনীতি করতে গেলে আওয়ামীলীগ এবং রুশ-ভারত চক্রের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতার স্বার্থে একটা কার্যকরী সম্পর্ক তাকে অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। আর এই দুটো লক্ষ্য অর্জনের পূর্বশর্ত হচ্ছে, যে ভাবেই হউক তাকে প্রমাণ করতে হবে যে ১৫ই আগস্ট এর অভ্যুত্থান এবং মুজিব হত্যার সাথে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন এবং ছিলেন না। জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে, মোশতাক সরকার তার পেশাগত যোগ্যতা এবং সেনাবাহিনীতে তার জনপ্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে চীফ অফ স্টাফ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আরও প্রচারণা করা হচ্ছে ১৫ই আগস্ট আর ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থান দু’টি ছিল সম্পূর্ণভাবে যোগসূত্র বিহীন বিচ্ছিন্ন দুইটি ঘটনা। ৭ই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের সাফল্যের পর জেনারেল জিয়ার জনপ্রিয়তার কারণেই বিপ্লবীরা তাকে আবার ক্ষমতার কেন্দ্রে উপবিষ্ট করেছিলো। ঘটনা দু’টি যে একই সূত্রে গাঁথা সে সম্পর্কে সাধারণ জনগণের কোনও ধারণাই নেই। তাই তারা জিয়ার প্রচারণাকেই সত্য বলে মেনে নিচ্ছে। আমার বিশ্বাস, ভারতকে খুশি করার জন্য তিনি নিজের উদ্যোগেই ভারতে আশ্রিতা হাসিনাকে সাদরে ডেকে এনে বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারায় তার নেতৃত্বে বিলুপ্তপ্রায় আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসিত করবেন। এই বাস্তবতায় তোমাদের সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নেয়া, একসাথে রাজনীতি করা কিংবা তোমাদের আলাদাভাবে রাজনৈতিক মোকাবেলা করতে দেয়া কি সম্ভব? উত্তরটা অতি সহজ, না। আমার তো ধারণা খন্দকার মোশতাককেও তিনি রাজনৈতিক ময়দানে নিজের এবং ভারত সমর্থিত আওয়ামীলীগের স্বার্থে দাড়াতে দেবেন না কোনক্রমেই। বাকি না বলা কথাগুলো বুঝবার ক্ষমতা তোমাদের সবারই আছে। আরও কিছু কথা আমি তোমাদের জানাবো আমার বিবেকের তাড়নায়। তোমাদের এইভাবে একত্রে খোলা ছুট দিয়ে রাখাটাকেও জিয়া নিরাপদ মনে করছেন না। তাই তিনি চাইছেন তোমাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে তবে তার নাগালের মধ্যে। এই লক্ষ্য হাসিলের একমাত্র উপায় হল তোমাদের কূটনৈতিক দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে পাঠাবার ব্যবস্থা করা। খন্দকার মোশতাকের জারি করা Indemnity Ordinanceকে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে বৈধতা তাকে দিতে হবেই। এটাও তার একটি বাধ্যবাধকতা। এটাও তোমাদের আমি জানিয়ে দিলাম। এ ভাবেই সবদিকে একটা ব্যালান্স বজায় রেখে তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করবেন। তিনি যে দল তৈরি করাচ্ছেন সেটা কোনও নীতি-আদর্শ ভিত্তিক দল হিসাবে গড়ে তুলবেন না জেনারেল জিয়া। সেটার রূপ হবে একটা জনপ্রিয় গণ-প্ল্যাটফর্ম। এই দলটির একমাত্র দায়িত্ব হবে তার গায়ে গণতন্ত্রের নামাবলি পরিয়ে দিয়ে জেনারেল জিয়ার একনায়কত্বকে বিশ্বপরিসরে বৈধতা প্রদান করা। নানামতের নানাপথের জড়ো করা বাস্তুঘুঘু এবং দুর্নীতিপরায়ণ, সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদদের একত্রিত করা হয়েছে সুচিন্তিতভাবে। জেনারেল জিয়া তাদের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়ে দেবেন খোলা দুর্নীতি করার রাস্তা খুলে দিয়ে। একই সাথে তিনি দুর্নীতিবাজ প্রত্যেকের নামেই একটি ফাইল বানিয়ে নিজের কাছে রাখবেন যাতে করে সবাইকে তার পোষা ‘জি হুজুরে’ পরিণত করা সম্ভব হয়। তিনি নিজেকে রাখবেন সব দুর্নীতির ঊর্ধ্বে। এ ভাবেই তিনি তার ক্ষমতাকে নিরংকুশ করে নেবেন। তারপর কর্তার ইচ্ছায় চলবে তালুকদারি আর বাকিরা পালন করবে পারিষদের ভূমিকা। সিগারেটের বাটটা ছাইদানিতে ফেলে বক্তব্য শেষ করলেন শিশুভাই। এরপর সবার তরফ থেকে আমিই বললাম

একজন একান্ত আপনজন, অন্তরঙ্গ শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহযোদ্ধা হিসাবে আপনি যা কিছু আমাদের জানালেন কোন রাখঢাক না রেখে তার জন্য আমরা উপস্থিত সবাই আপনার কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আলোচনার ইতি টানার আগে আমরা আপনার কাছ থেকে জানতে চাই এই বাস্তব অবস্থায় আমাদের করণীয় কি হওয়া উচিৎ? একটু চিন্তা করে নিয়ে আর একটি সিগারেট ধরিয়ে শিশুভাই বললেন

For the time being Paradise is lost but it certainly does not mean Paradise does not exist, I would say. এবারের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলেও ভবিষ্যতে আবারও সুযোগ আসতে পারে দেশ ও জনস্বার্থে ইতিবাচক অবদান রাখার। বিশেষ করে নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধা, নিঃস্বার্থ, ত্যাগী, জনদরদী, জাতীয়বাদী, ধর্মপ্রাণ সূর্যসন্তান হিসাবে দেশব্যাপী তোমাদের সুখ্যাতি সর্বমহলে তোমাদের প্রত্যেককেই পরিণত করেছে কিংবদন্তীর নায়কে। এটা তোমরা অর্জন করেছ দীর্ঘদিনের আপোষহীন সংগ্রামের মাধমে। Carefully preserve it and get yourselves more enriched and matured. একদিন দেশবাসী তোমাদের খুঁজবে দেশের কাণ্ডারি হবার জন্য। যদি এমনটি নাও হয়, আজঅব্দি তোমরা যতটুকুই অর্জন করেছো সেটাই বা কতজনের ভাগ্যে জোটে! All of you are exceptional sons of the soil. তোমরা সবাই শুধুমাত্র তিহাসের উপাদানই নও, ইতিহাস সৃষ্টিকারীও বটে। তাই ১৫ই আগস্ট অভ্যুত্থান, ২-৩রা নভেম্বরের ঘটনার মোকাবেলায় তোমাদের অবদান, ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লব, ১৫ই আগস্ট আর ৭ই নভেম্বর-এর মধ্যে যোগসূত্র, সেনা পরিষদের এবং এই সংগঠনের সাথে জেনারেল জিয়ার সম্পর্ক এই সমস্ত বিষয়ে যেসব অবমিশ্রতা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে দেশবাসীর অবগতির জন্য দলিল লিখে যাও। সময়-সুযোগ মতো জনগণ যাতে সত্য জানতে পারে। এটা জাতি তোমাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে। তোমাদেরও নৈতিক দায়িত্ব উপাদানগুলো ইতিহাসবিদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের জন্য রেখে যাওয়া যাতে করে সত্য এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্যসামগ্রী থেকে তারা সঠিক ইতিহাস লিখতে পারেন। সত্যভিত্তিক দলিল তোমরা না লিখলেও সত্য একদিন উদ্ভাসিত হবেই ইতিহাসের কষ্টিপাথরে যাচাইয়ের পর। ভবিষ্যতে আল্লাহপাক যদি কোনও সুযোগ নাই দেন, সেটাকে ইমানদার হিসাবে মেনে নেয়ার হুকুমইতো আল্লাহ্পাক দিয়েছেন তাইনা শাহরিয়ার? তবে আমার অনুরোধ, কারো প্ররোচনায় উত্তেজিত হয়ে তোমরা কখনোই এমন কিছু করবে না যাতে কষ্টার্জিত বিশ্বাসযোগ্যতা এবং অপরিমেয় ভালবাসা আর সম্মান খোয়াতে হয়। চোখ-কান খোলা রেখে চলতে হবে তোমাদের সতর্কতার সাথে। ৮-১০ কোটি বাংলাদেশীদের মধ্যে কয়েকটি অমূল্য রতন তোমরা। তোমাদের মতো রতন তৃতীয় বিশ্বে বিরল। কথাগুলো তোমাদের খুশি করার জন্য বললাম না। এগুলো অকাট্য সত্য। যে যত চেষ্টাই করুক, যত বিরূপ অপপ্রচারই চালাক লোকজনের মনে তোমাদের যেই ভাবমূর্তি খচিত হয়ে গেছে সেটা মুছে ফেলা সম্ভব হবে না কারো পক্ষেই। তোমাদের আওয়ারা শিশুভাই আর একটা কথা বলবে। ‘আওয়ারা’ শব্দটা শুনে মনে পড়ে গেল, একবার কুমিল্লাতে Officer’s Club এ new year’s eve এর পার্টিতে Dress as you like fancy ball এর আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে শিশুভাই সেজেছিলেন এক আওয়ারা যুবক। আমি আর নিম্মি সেজেছিলাম সাঁওতাল দম্পতি। আমাদেরই দেয়া হয়েছিল First Prize. শিশুভাই শুরু করলেন

ভবিষ্যতে দেশ এবং জাতীয় স্বার্থে সংগ্রাম করার যদি সুযোগ আসে তবে সেই সংগ্রাম হতে হবে রাষ্ট্রীয় পরিসরে আর একটি জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম গড়ে তোলা। শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীকে কেন্দ্র করে কোনও মুক্তিসংগ্রামই ফলপ্রসূ হবে না। ভূটান কিংবা নেপালের মতো ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করার আগ্রাসী থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে একটি পথই বেছে নিতে হবে। ভারতের রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করেই তোমাদের প্রণীত নীতি-আদর্শের ভিত্তিতে শুরু করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে আর একটি মুক্তিযুদ্ধ। ঐ বিপ্লবটা সহজ হবে না। কারণ, যদি বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন, স্বনির্ভর এবং সমৃদ্ধশালী দেশ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় তাহলে ভারতীয় ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস এ ধরণের সংগ্রামে বর্তমানে যে সমস্ত দল ময়দানে রয়েছে তারা কেউই শরিক হবে না নিজেদের কায়েমী স্বার্থের খাতিরেই। সেই শক্তি তোমাদের সংগঠিত করতে হবে চলমান সংগ্রামের দুর্গম পথেই রাজনৈতিক ভাবে সচেতন তরুণ প্রজন্ম থেকে কর্মী সংগ্রহ করে। যদিও আমার ধারণা বর্তমানের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নয়। তবে অতি অল্প সময়ে বর্তমানের সব কয়টি রাজনৈতিক দলের আপোষকামিতা, দুর্নীতি এবং অপশাসনের চরিত্র প্রকাশিত হয়ে পড়বে। একইসাথে আগ্রাসী ভারতের নীলনকশাও তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সেই সময় তারা রাজনীতির মূলধারায় নতুন পরীক্ষিত এবং বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বের সন্ধান করবে। সেই বিকল্প নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা তোমাদের সবারই আছে। আমি কিন্তু দুই ভায়রাকে সামিল করছিনা। কারণ তাদের সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা, তেমন কোনও ঘনিষ্ঠাও নেই।

আপনি কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে চাই। শাহরিয়ার আবার আবেদন জানালো।

নিশ্চয়ই!
আচ্ছা শিশুভাই, জেনারেল জিয়া যখন অতি নিষ্ঠুরতার সাথে নির্বিচারে আমাদের সংগঠনের হাজারও নেতা-কর্মীকে নির্মম এবং পাশবিকভাবে হত্যা করছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি পদোন্নতি নিয়ে কোন প্রতিবাদ না জানিয়ে জিয়ার একজন আস্থাভাজন উপদেষ্টা হয়ে তার পাশে দাড়ালেন। আপনার এই সিদ্ধান্তে আমি ব্যক্তিগতগতভাবে খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম।

স্বাভাবিক এই বিষয়ে অনেকেই আমার কাছে এসে আক্ষেপ করছে। জেনারেল জিয়া যখন আমাকে তার পাশে থেকে তাকে সাহায্যের প্রস্তাব দেন তখন আমি তাকে পরিষ্কার ভাবে বলেছিলাম, আর্মির চাকরি ছাড়ার চেষ্টা করে চলেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের কাল থেকেই। তাই সেনাসদরের ভেতরে গিয়ে আপনার পাশে বসতে পারা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। জবাব শুনে তিনি আমাকে তার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম দাড় করাবার দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কি শর্তে আমি সেটা গ্রহণ করেছিলাম কি পরিস্থিতিতে সেটা আগেই বলেছি। তোমাদের শিশুভাই সাহসী না হতে পারে, তবে অমানুষ নয়। জেনারেল জিয়া আজ আমার চোখে একজন ঘৃণিত প্রতারক। শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য যেই ব্যক্তি তার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাদের রক্তে নিজের হাত রঞ্জিত করতে পারে, তাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করতে পারা যায় না। আমার এই বক্তব্য তোমরা বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, But that’s a fact. শিশুভাই এর কথা শেষ হতেই ওয়েটার এসে আমাকে নিচু গলায় জানালো খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। শিশুভাই আর একটা সিগারেট প্যাকেট থেকে বের করতে যাচ্ছিলেন দেখে আমি বললাম

শিশুভাই, Dinner has been layed. ডাক পরেছে উঠুন। এতক্ষণ তো অনেক Brain storming হল, এখন পেটপূজাটা সেরে আসা যাক। শিশুভাই উঠে দাঁড়ালেন সাথে আমরাও। ডাইনিং রুমে নিম্মি, লিজি, রানু, সালমা এবং রশিদ আর ফারুকের স্ত্রী জোবায়দা ও ফরিদা সবাই উপস্থিত। মেয়েদের তত্ত্বাবধানেই আজকের রান্না হয়েছে। নানা ধরণের ব্যঞ্জনে ভরা টেবিল দেখে শিশুভাই বললেন, এযে দেখছি রাজকীয় ব্যাপার স্যাপার! লিজি বয়সে সবার ছোট, তাই সবারই অতি আদরের। একটা প্রজাপতির মতো সব ফ্ল্যাটে ঘুরে বেড়ায় স্বচ্ছন্দে। উচ্ছ্বলিত এক জীবন্ত প্রাণের উচ্ছ্বাসের মূর্ত প্রতীক লিজি তাৎক্ষণিক ভাবেই ফোড়ন কেটে জবাব দিলো

শিশুভাই আপনি তো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বর্তমানে শুনি একজন বিশেষ VVIP. তাই আপনার প্রাপ্য সম্মানটা বজায় রাখার যথাসাধ্য চেষ্টাতো আমাদের করতেই হবে তাই না নিম্মি ভাবী?

ওরে বাবা, ইতিমধ্যেই অনেক পরিপক্ব হয়ে উঠেছো দেখছি!

এতে আশ্চর্য হচ্ছেন কেনো শিশুভাই! একদিকে লিজি হুদার বোন অন্যদিকে পাশার স্ত্রী সেটা ভুলে যাচ্ছেন আপনি।

শিশুভাই যখন আমাদের সাথে কুমিল্লায় ব্রিগেড কমান্ডার, তখনই ধুমধাম করে পাশার আর লিজির বিয়ে হয়। আমি আর নিম্মি ছিলাম কনেপক্ষের মুরুব্বী আর শিশুভাই আর শাহরিয়ার বরপক্ষের। সবাই বসে পরলাম নির্ধারিত চেয়ারে। এরপর খোশ আলাপের সাথে খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা সবাই গিয়ে বসলাম এন্টি রুমে চা, কফি আর পানের সরঞ্জাম নিয়ে আড্ডার আসর জমাতে। ভায়রা ভাইরা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

হাসি, ঠাট্টা, চুটকি, রসালো Jokes, শাহরিয়ারের গানের সাথে সবার ঐক্যতানের মাধুর্যে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে শিশুভাইকে তার স্যুইটে পৌঁছে দিয়ে সবাই শুভরাত্রি জানিয়ে বিদায় নিয়ে যার যার ফ্ল্যাটে ফিরলাম। বিদায় নেয়ার আগে নিম্মি আগামী দিনের প্রোগ্রাম জানিয়ে দিল সবাইকে। নাস্তার পর ১১টায় লাঞ্চবক্স সহ Sight Seeing এ বেরিয়ে পড়বো শিশুভাইকে নিয়ে। সেই সফর শেষ হবে ফন্দুক ওমর খৈয়ামে High Tea এর মাধ্যমে। এরপর সন্ধ্যায় যাওয়া হবে হোটেলের কাছেই Shopping Mall এ কিছু কেনাকাটার জন্য। অবশেষে আস্তানায় ফিরে গার্ডেনে Bar-B-Queue Party. পরের দিন লন্ডন হয়ে ফিরে যাবেন শিশুভাই। আমাদের সাথে সালেমও যাবেন লিবীয় সরকারের পক্ষ থেকে VVIP শিশুভাইকে Airport এ See Off করতে। সবকিছুই Meticulously arranged and executed.পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সবাই শিশুভাইকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে গেলাম। গেলো না দুই ভায়রা রশিদ আর ফারুক। তাদের এই ব্যবহার দৃষ্টিকটু হলেও শিশুভাই কিংবা আমরা ওদের ব্যবহারকে ধর্তব্যের মধ্যেই নিলাম না। এর মূল দুটো কারণ ছিল প্রথমতঃ তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল জিয়ার বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে সব অপকর্মের নাটের গুরুদের একজন ছিলেন শিশুভাই। দ্বিতীয়তঃ তারা জানতো না যুদ্ধকালীন সময় থেকে তার সাথে বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে আমাদের কি ধরনের আন্তরিক ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে কোলকাতায় পৌঁছেছিল রশিদ, ফারুক। তাই তাদের কোনও ধারণাই ছিল না আগামী দিনের বাংদেশের অরক্ষিত স্বাধীনতা নিয়ে ভারতীয় চাণক্যদের সুদূর প্রসারী নীলনকশা সম্পর্কে। আমাদের সাংগঠনিক কৌশল এবং তৎপরতার বিষয়ে এবং পরবর্তী কালে আমাদের গড়ে তোলা গোপন সংগঠন সেনা পরিষদ সম্পর্কে তারা কিছুই জানতো না। এই তথ্যও দুই ভায়রার অজানা ছিল যে যুদ্ধের সময় থেকেই শিশুভাই চাকরি ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। তাদের এটাও জানা ছিলনা আমার ছোটভাই স্বপন বীরবিক্রম, কাজি বীরবিক্রম, বদি বীরবিক্রম ঢাকায় খান সেনাদের হাতে বন্দী শিশুভাই এবং খালেদ ভাই-এর পরিবারকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছিল দুঃসাহসিক গেরিলা অভিযান চালিয়ে। আমার সাথে শিশুভাইয়ের পারিবারিক সম্পর্কের ব্যাপারেও তাদের কিছুই জানা ছিল না। সর্বশেষে তাদের কোনও ধারণাই ছিল না সেনা পরিষদের সাথে জেনারেল জিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল কতটুকু। জেনারেল জিয়াকে শিশুভাই কি চোখে দেখতেন সেই বিষয়েও তারা ছিল অজ্ঞ। আমরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম শিশুভাই এসেছিলেন নিজস্ব উদ্যোগেই। জেনারেল জিয়ার পয়গাম পৌঁছানোর বিষয়টি ছিল উপলক্ষ মাত্র। তিনি এসেছিলেন আমাদের সব ভেতরের খবর জানাতে যাতে আমরা কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে জেনারেল জিয়ার পাতা ফাঁদে জড়িয়ে না পড়ি। আমি ফোন না করলেও শিশুভাই নিশ্চয়ই আসতেন। তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন আমাদের নিয়ে, রশিদ কিংবা ফারুকের জন্য নয়। তার এই আন্তরিক স্নেহ ও ভালোবাসার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবো আজীবন। শিশুভাই এসে পূর্বে গৃহীত আমাদের সিদ্ধান্তগুলোর যথার্থতা প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন। জিয়া তার ভবিষ্যৎ রাজনীতির খেলাটা কি করে খেলবেন সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিশদভাবে আমাদের জানিয়ে গেলেন আমাদের প্রিয় শিশুভাই। একটা সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার কোনও পদক্ষেপ না নিয়ে এক ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিলো ভারতের বসিয়ে দেয়া শেখ মুজিবের আওয়ামী-বাকশালী সরকার আর জিয়া রাজনীতির ক্ষেত্রে শুরু করেন Intellectual Corruption. ‘টাকা কোন সমস্যা নয়’ বলে রাজনীতিকদের দুর্নীতির অবাধ সুযোগ দিয়ে তাদের দুর্বল করে তার মুঠোয় ধরে রাখার যে কূটকৌশল গ্রহণ করেছেন, তাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে দুর্নীতির ক্যান্সার। যুদ্ধকালে জনগণের মধ্যে যে একাগ্রতা এবং কর্মোদ্যম সৃষ্টি হয়েছিল সেটা বিলুপ্ত হবে সেই দুর্নীতির রাহুগ্রাসে। অন্যদিকে, জেনারেল জিয়া নিজে ছেঁড়া গেঞ্জি, ভাঙ্গা স্যুটকেস আর কোদাল কাঁধে নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে চমক সৃষ্টি করে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে নিজেকে রাখছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এভাবেই ধূর্ত জিয়া নিজেকে একজন সৎ জনদরদী, কর্মক্ষম নেতা হিসাবে একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি ইতিমধ্যেই সৃষ্টি করে নিতে সমর্থ হয়েছেন আমজনতার কাছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে নানা দলের নানা মতের সুযোগ সন্ধানীদের সাদরে ঢোকানো হয়েছে ‘জাগোদল’ নামের সূতিকাগারে। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দল’ ওরফে বিএনপি নামে সৃষ্টি করা হবে তার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ ভিত্তিক দলের পরিবর্তে একটি প্ল্যাটফর্ম শুধুমাত্র তার একনায়কত্বের গায়ে গণতান্ত্রিক নামাবলি জড়ানোর জন্য। বিএনপি-র সুবিধাবাদী দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-নেত্রীরা থাকবে তার অনুকম্পার পাত্র হয়ে অনুগত পারিষদ হিসাবে। সাদামাটাভাবে উচ্চাভিলাষী জিয়ার ছলচাতুরির রাজনীতির দর্শনটা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন শিশুভাই।

শিশুভাই ফিরে যাবার পর কয়েকটা দিন বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। যাওয়া আসাটা একটি প্রাকৃতিক নিয়ম! তাই কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলাম। এরই মধ্যে হুদার নব পরিণীতা বউ নাফিজা এবং মহিউদ্দিনের স্ত্রী হেনা তার শিশু সন্তানদের সাথে এসে পৌঁছালো দেশ থেকে। এদের নিয়ে হই হুল্লোড়ে কেটে গেল কয়েক দিন। শিশু ভাইয়ের ফেরার পর দেখলাম রশিদ আর ফারুক ঘন ঘন বিদেশে যাচ্ছে। জোবায়দা কিংবা ফরিদাকে জিজ্ঞেস করলে জবাব পাওয়া যাচ্ছে কাজে জার্মানিতে যাচ্ছে দুইজনই। জবাবটা কি সে সম্পর্কে জানা থাকলেও সঠিক জবাবটা পাওয়া যাবে না সেটা আমাদের জানাই ছিল। হঠাৎ অদ্ভুত একটা খবর পেলাম দেশ থেকে। ইদানিং এয়ার ভাইস মার্শাল তোয়াব নাকি কিছু আলেম-মাশায়েখ জমা করে সামরিক বাহিনী এবং দেশের বিভিন্ন জায়গাতে ‘সিরাত মাহফিল’ এর ব্যবস্থা করে দেশবাসীকে ধর্মীয় চেতনায় উদবুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন মাথায় টুপি পরে। এই মোজেজার সাথে দুই ভায়রার ঘন ঘন জার্মানি যাওয়ার একটা যোগাযোগ থাকলেও থাকতে পারে। জেনারেল জিয়া যে এই ধরণের উদ্যোগ নিবেন না সেটা বলাই বাহুল্য। একদিন কথাচ্ছলে সালেমই জানালেন, আমাদের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর গাদ্দাফি এবং Revolutionary Command Council এর নীতিনির্ধারকরা বুঝতে পেরেছেন রশিদ, ফারুক নিজেদের ১৫ই আগস্ট বিপ্লবের মূল নেতা হিসাবে জাহির করার চেষ্টা করলেও ঐ বিপ্লবের মূল শক্তি ছিলাম আমরা এবং আমাদের সংগঠন সেনা পরিষদ। তারা আরও বুঝতে পারেন, রশিদ আর ফারুকের সাথে আমাদের একটা ব্যবধান রয়েছে, সেটা আদর্শিক না অন্য কোন কারণে সেটা তাদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। তবে তারা কথাবার্তা থেকে বুঝে নিয়েছিলেন আমরা তাদের তুলনায় রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সচেতন। আমাদের উপস্থাপনার যৌক্তিকতার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বাংলাদেশে বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক ভাবেই এগুতে হবে। তাই আগামীতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কার্যক্রমের অর্থায়নের জন্য রশিদকে কিছু থোক টাকা দিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, ইউরোপে তাদের কয়েকজন বিশ্বস্ত Contact ব্যাক্তিদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে ওই টাকা বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন- স্টক এক্সচেঞ্জ, অয়েল এক্সপোর্ট, শিপিং, রিয়াল ষ্টেট, কমোডিটি ট্রেডস ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করার জন্য। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে বাছাই করে বেশিরভাগ সামরিক এবং বেসামরিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০০০ থেকে ৫০০০ শ্রমিকও আমদানি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সালেমের কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়ে পাশাই তাকে জানালো এ সবের কিছুইতো রশিদ আমাদের এখনঅব্দি জানায়নি। আমি অবস্থাকে সহজ করার জন্য বললাম সবই প্রাথমিক পর্যায়ে, তাই হয়তো সে জানায়নি। উপযুক্ত সময়ে জানাবে নিশ্চয়ই। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীদিনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, লগ্নিপুঁজি কিংবা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আদম সন্তান আনার ব্যাপারে আমরা কিছুই রশিদ কিংবা ফারুকের কাছ থেকে জানতে চাইবো না। সালেম আমাদের যা বলেছে সে সম্পর্কেও তাদের কিছুই বলা হবে না। আমরা দেখবো তারা এই ব্যাপারে আমাদের কি বলে। বেনগাজী ফিরে নির্বিকার রশিদ কিছুই বললো না কোনও ব্যাপারেই। আমরাও নিশ্চুপ থাকলাম। এই অবস্থায় একদিন জমির এসে জানালো, ঢাকা থেকে তাকে বলা হয়েছে আমার আর রশিদের ঢাকা যাবার সব ব্যবস্থা করার জন্য। সেই বিষয়ে আলোচনা করতেই এবারের আসা। রশিদ জানাল, ও জার্মানি হয়ে পৌঁছাবে ঢাকায়। আমি জানালাম, নিম্মিকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডন হয়ে আমি ঢাকায় যাবো। কবে কে যাবে সেটা ঠিক করে জমিরকে জানিয়ে দেয়া হল যাতে, জমির সেইভাবেই সব ব্যবস্থা করতে পারে। জমির সিদ্ধান্ত জেনে ফিরে গেল ত্রিপোলি। আবার বিভ্রাট!দুই ভায়রা কাউকে কিছু না জানিয়ে আবার উধাও হল বেনগাজী থেকে। কর্নেল রশিদের স্ত্রী জোবায়দা জানালো তারা ত্রিপোলি গিয়েছে। ত্রিপোলি যাওয়া নিয়ে এ ধরনের রহস্য তামাশারই সমতুল্য।