হংকং হয়ে ফিরলাম ঢাকায়

ঠিক আছে আমি সব ব্যবস্থা করছি। তুমি হোটেলে পৌছে আমাকে ফোন দিও। এর মধ্যেই আমি সব ব্যবস্থা করে নেবো। যথাসময়ে উ আমাকে প্লেনে বসিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। CAAC এর ফ্লাইট- তাই সময়ের তারতম্য হয় না।যথাসময়ে পৌঁছে গেলাম হংকং-এর কাইট্যাক এয়ারপোর্টে। লাম প্লেনের দোরগোড়া থেকেই অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে গিয়ে বসালো VIP Room-এ। পাসপোর্ট, টিকেট এবং লাগেজট্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তার সাথের ভদ্রলোক।

বলো, তোমার সফর কেমন হল? তোমাদের সবার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে না বন্ধু।

জবাব শুনে হেসে উঠল সুদর্শন লাম। অল্পক্ষণ পরই ভদ্রলোক ফিরে এসে সব কিছু ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, মালপত্র গাড়িতে তোলা হয়ে গেছে। চলো, হোটেলে যাওয়া যাক। আমাকে হোটেলে পৌছে দিয়ে লাম বলল আগামীকাল সময়মতো আমি তোমাকে এয়ারপোর্টে নিয়ে গিয়ে প্লেনে তুলে দিয়ে আসবো। চলে গেলো পরম বন্ধু লাম।লাম চলে যাবার পর ফোন করলাম লিন্ডাকে। লিন্ডা জানাল ঠিক হয়েছে আজ রাত ৮টায় সবাই একত্রে রাতের খাবার খাবো। আমি নিজেই এসে তোমাকে নিয়ে যাবো সাড়ে সাতটার দিকে ক্লাবে। তৈরি থাকবে।

দেখতে মিষ্টি প্রাণোচ্ছল মাঝবয়সী লিন্ডা পরম বন্ধু রবিনের স্ত্রী। চীনাদের বয়স বোঝা দুষ্কর।

চৈনিক একটা প্রবাদ আছে, ৪০ বছর না পেরোলে কোনও নারী কিংবা পুরুষকে চীনারা প্রাপ্তবয়স্ক মনে করে না। চীনা নারী-পুরুষের গড় আয়ু হচ্ছে যথাক্রমে ৯৭ এবং ৯৩ বছর। এর কারণ তাদের শরীরচর্চা এবং খাদ্যাভাস। চীনারা বাসী কোনও জিনিষ খাওয়ায় অভ্যস্ত নয়। শিশুকাল থেকেই কঠিন নিয়মানুবর্তিতায় জীবনযাপন করে থাকে চৈনিকরা। দীর্ঘ আয়ুষ্কালের মূলমন্ত্র এটাই।  ঠিক সোয়া সাতটায় লিন্ডা এসে পৌঁছালো। সুঠামদেহিনী লিন্ডা এমনিতেই সুন্দরী। কিন্তু আজ কালো শিফনের পার্টি ড্রেসে লিন্ডাকে একটু বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছিলো। ঘরে ঢুকেই খুশিতে তার পুরনো টেনিস পার্টনারকে জড়িয়ে ধরলো লিন্ডা।
অনেক দিন বে-খবর থাকার পর হঠাৎ তোমার আগমনে বন্ধুরা সবাই ভীষণ খুশি। হংকং এ অবস্থিত সবাই অতি আগ্রহের সাথেই তোমার সাথে দেখা করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত অন্য সব এ্যাপয়েন্টমেন্ট নাকচ করে আমার দাওয়াতে আসছে। চশমার পরিবর্তে ম্যাচিং লেন্স পড়েছে লিন্ডা। ওকে সোফায় বসিয়ে মুখোমুখি বসলাম। স্থিরদৃষ্টিতে আমার দিকে কয়েক লক তাকিয়ে মৃদু হেসে লিন্ডা বলল তোমার তো কোনও পরিবর্তন দেখছিনা! তোমারও কি কোনও পরিবর্তন হয়েছে মক্ষিরাণী? বরং আজকে তো তোমাকে পরীর মতোই লাগছে!

আশ্চর্য! তোমার কথাবার্তার ধরনটাও ঠিক আগের মতোই আছে। জানো, তুমি চলে যাবার পরও অনেকেই তোমাকে বিশেষভাবে মনে রেখেছে। প্রায়ই তোমাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়। আমিও কি তোমাদের ভুলতে পেরেছি! পারিনি বলেই অতি অল্প সময়ের যাত্রা বিরতির মাঝখানে তোমাকে ফোন করেছি সবার সাথে দেখা করার জন্য।

তা বটে। কিন্তু লিন্ডা আজকে তোমাকে যেমন সুন্দরী আর মোহময়ী দেখাচ্ছে, ভাবছি নিজেকে সংযমের আওতায় রাখতে পারবো তো?

দুষ্ট কোথাকার! কাছে এসে হাত ধরে উঠিয়ে বললো

যথেষ্ট হয়েছে দুষ্ট হৃদয়হরণ। এবার যাওয়া যাক। দু’জনই নিচে নেমে এলাম। চাবি নিয়ে ভ্যালে চলে গেলো গাড়ী পোর্চে নিয়ে আসার জন্য। ত্বরিত ফিরে এল একটা সিলভার কালারের চকচকে মার্সিডিজ ৬০০ কনভার্টেবল স্পোর্টস কার নিয়ে। কি ব্যাপার? ইতিমধ্যেই গাড়ী বদলিয়ে ফেলেছো দেখছি! দুই তিন বছরের মধ্যে গাড়ী বদলানোটা আমার অভ্যেস।

শুনে বিরবিরিয়ে স্বগতোক্তি করলাম।

কি বললে? না কিছু না, বুঝতে চাচ্ছিলাম বন্ধু বদলানোর সময়সূচিটা কি? লিন্ডা বললো

অন্যদের সাথে তুমি নিজেকে তুলনা করবে না, তুমি আমার চিরকালের বন্ধু।

তাই বুঝি? হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। অল্প সময়েই রিপালস বেতে সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে অবস্থিত হংকং-এর সবচেয়ে অভিজাত মিলনস্থল কান্ট্রি ক্লাবে পৌঁছে গেলাম। এই ক্লাবের বিশেষত্ব হল, শুধু ‘রিচ এন্ড ফেমাস’ হলেই এই ক্লাবের মেম্বার হওয়া যায় না। বংশের আভিজাত্যও সাথে থাকতে হবে। তাই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা সর্বমোট দুই শত পরিবারের অধিক নয়। একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে হংকং-এ নিয়োগপ্রাপ্ত মিশন প্রধানগণ। ইচ্ছে করলে, শুধুমাত্র তারাই এর সদস্য হতে পারেন। সেই সুবাদেই এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের মেম্বারশিপ লাভ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। এর ফলে হংকং-এর বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সবার সাথেই পরিচিত হতে পেরেছিলাম। ক্লাবের কর্মচারীদের সবাই আমাকে ভালোভাবে চেনে। কারণ হচ্ছে, বাৎসরিক ইন্টার ক্লাব টেনিস প্রতিযোগিতায় ক্লাবের টিমে আমি নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছি যতদিন হংকং-এ ছিলাম। গাড়ী পার্কিং এ রেখে মেইন বিল্ডিং এর দিকে এগুচ্ছিলাম, পথে দেখা হলো টেনিস কোচ ওয়াং-এর সাথে। সহাস্যমুখে আমাদের দেখে এগিয়ে এসে ওয়াং জিজ্ঞস করলো

কেমন আছো তুমি? অনেকদিন পর তোমাকে দেখে অনেক খুশি হলাম। নিম্মি আর সস্তি কেমন আছে, সস্তি টেনিস খেলছে তো? ওয়াং-এর কাছেই সস্তির টেনিস খেলার হাতে খড়ি। জবাবে বললাম

ওরা সবাই ভাল আছে, সস্তি টেনিস খেলছে। জবাব শুনে খুশি হল ওয়াং। এরপর আমরা গিয়ে ঢুকলাম চিনিজ রেস্তোরাঁয়। বিশাল আয়োজন! দেখলাম ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবদের প্রায় সবাই উপস্থিত। দরজায় ক্লাব ম্যানেজমেন্ট-এর তরফ থেকে ম্যানেজার একটি সুন্দর ফুলের বুকে উপহার দিয়ে সবার সাথে স্বাগত জানালেন। খাওয়ার সাথে সবাই চুটিয়ে ঘণ্টা দুয়েক আড্ডা দিলাম।এক ফাঁকে জর্জকে প্রস্তাব দিলাম তোমার নিজস্ব জেটে করে সবাইকে নিয়ে আসো নাইরোবিতে সাফারি ট্রিপে আমার মেহমান হয়ে। সিসিল বললো অতি উত্তম প্রস্তাব! জর্জ, তোমার বদৌলতে আশেপাশের সব দেখার মতো জায়গাগুলোতো প্রায় সবই দেখা হয়ে গেছে, এবার আফ্রিকায় VIP সাফারি ট্রিপের দাওয়াতটা হেলায় হারানোটা ঠিক হবে না, কি বলো তোমরা সবাই?
সবাই একসাথে বিশেষ করে বারট লেভিনের স্ত্রী লিলি জর্জকে ধরে বসলো, ঠিকই বলেছে সিসিল।

হংকং-এর বিশিষ্ট ধনকুবের এবং সৌখিন পাইলট জর্জ আমাকে নিমন্ত্রণের জন্য সবার তরফ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে জানতে চাইলো, বছরের কন সময়টা নাইরোবিতে সাফারি ট্রিপে যাবার জন্য সর্বোত্তম? জবাবে বললাম কেনিয়া চির বসন্তের দেশ। তাই যেকোনো সময়ই উত্তম সময়। তবে আগস্টে এলে মাইগ্রেশনটা দেখতে পারবে। এটা সৃষ্টিকর্তার এক অভাবনীয় বিস্ময়! তাহলে আমরা সবাই সদলবলে আগামী আগস্টেই আসছি তোমার নিমন্ত্রণ রক্ষা করে।

লিন্ডা তোমার সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করবে সমন্বয়কারী হিসাবে। বললো, জর্জ।

হ্যাঁ, নিশ্চয়। সমস্বরে বলে উঠল উপস্থিত সবাই। লিন্ডাই সবাইকে জানালো আমি এবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে বেইজিং সফরে গিয়েছিলাম এবং কালই দেশে ফিরে যাচ্ছি। বার্ট কাছে এসে শুধালো কেমন হল সফর? সংক্ষেপে ফলদায়ক। কালই হক ফিরে যাচ্ছে। তাই এবার আমাদের ওঠা উচিৎ। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো পলিন

হ্যাঁ, সেটাই করা উচিৎ। যদিও এতদিন পর হককে পেয়ে ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না বলল বন্ধু লোউই। আমারও তোমাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তবু যেতে হচ্ছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লিন্ডার সাথে বেরিয়ে আসলাম। চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত রাত। পরিষ্কার নীল আকাশ ভরা তারা। নিঃশব্দ চারিধার। লিন্ডা প্রস্তাব রাখলো তুমি যদি ক্লান্ত না থাকো, তবে চলো স্ট্যানলি বিচ অব্দি ঘুরে হোটেলে ফিরি। এমন সুন্দর চাঁদনী রাতে তোমার মতো সুন্দরী যদি এমন ইচ্ছে প্রকাশ করে তখন ‘আমায় ক্ষমা করো প্রভু’ বলে মৃত যেকোনো ব্যক্তিই চাঙ্গা হয়ে উঠবে প্রিয়ে, তাই উপেক্ষা করার প্রশ্নই ওঠে না! চলো। লিন্ডা আমার কথা শুনে বলে উঠলো জানো, তোমার এমন দুষ্টুমি ভরা চটুল রসিকতাগুলো প্রায়ই মনে পড়ে। Then I really miss you a lot. লক্ষণটা ভালো নয় প্রিয়ে, রবিন ডাক্তারকে জানান দিতে হয় যাতে এই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা ও করতে পারে। কি বলবো নাকি?

তুমি ভালো করেই জানো আমি কারও পরওয়া করিনা। তা অবশ্য ঠিক। দু’জনই হেসে উঠলাম। স্ট্যানলি সৈকতের অপূর্ব নৈসর্গিক শান্ত পরিবেশে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে। বিদায়ের আগে লিন্ডাকে বললাম নাইরোবি আসার ব্যাপারে তোমাকেই উদ্দগ নিতে হবে। আসবে কিন্তু, আমি আর নিম্মি অপেক্ষায় থাকবো। বলে আমার ব্যক্তিগত টেলিফোন নম্বরসহ একটা ভিজিটিং কার্ড ওর হাতে তুলে দিলাম। এরপর আলতো জড়িয়ে ধরে বললাম

আজকের এই সুন্দর রাতের জন্য ধন্যবাদ তোমাকে জানাবো না, ভাল থেকো। এবার এসো রাত অনেক হল, তোমার তো আবার রাত জাগার অভ্যেস নেই। হ্যাঁ তাই। তুমিও ভালো থেকো আর নিম্মি ও স্বস্তিকে আমার আদর দিয়ো। বিদায় দুষ্টু রিদয়হরণ বলে গালে চুমু দিয়ে হাত নাড়িয়ে গাড়ী চালিয়ে বাড়ী ফিরে গেলো লিন্ডা।

পরদিন যথাসময়ে লাম এসে থাই-এর একটা ব্যাংককগামী ফ্লাইটে তুলে দিলো আমাকে। ট্রানজিটে দেড়ঘণ্টা তারপর ঢাকার ফ্লাইট।VIP Lounge থেকে শ্রী কাসম শ্রীকে ফোন করে জানালাম

এক্সেলেন্সি, বিশেষ তাড়াহুড়োয় ফিরতে হচ্ছে। তাই এবার দেখা হল না ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও। এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবে শীঘ্রই দেখা হবে কথা দিলাম। সময় মতই থাই বিমান পৌঁছে দিলো ঢাকায়। কামালের প্রেরিত প্রোটোকল অফিসার আমাকে বাসায় পৌঁছে দিলেন। কামাল বাসাতে ফোন করলো পৌঁছে গেছিস? হ্যাঁ। ঠিক আছে, আমি ম্যাডামের সাথে আলাপ করে তোকে জানাচ্ছি কোথায় কখন সাক্ষাত হবে।তুই বিশ্রাম কর। নিম্মি জানতে চাইলো সফর কেমন হল আর বন্ধু-বান্ধবীদের কে কেমন আছে? সফর ফলপ্রসূ হয়েছে, আর সবাই কুশলেই আছে। চীনাবন্ধুরা দাওয়াত করেছে তোমাকে আর সস্তিকে নিয়ে বেড়াতে যেতে সুবিধে মতো। লিন্ডারা সদলবলে আসবে নাইরোবিতে আগামি আগস্টে জর্জের ব্যক্তিগত প্লেনে করে আমাদের অতিথি হয়ে। পড়ন্ত দুপুরে আবার কামালের ফোন এলো। ম্যাডাম রাত ১০টায় ক্যান্টনমেন্ট-এর বাসায় একান্তে আমার সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তোর ম্যাডাম তার প্রয়াত স্বামীর কাছ থেকে রাজনীতির কূটকৌশলগুলো ভালোই রপ্ত করেছেন দেখছি। তোর আর সাব্বির বদৌলতে সবকিছু হল, আর তোদের বাদ দিয়েই তিনি সফরের ফলাফলটা আমার কাছ থেকে একান্তে জেনে নিতে চাচ্ছেন! অনুরোধ করার সময় কিন্তু তোদের উপস্থিতির প্রয়োজন হয়েছিলো। এমনটি কেনও ব্রাদার?

তাতো বলতে পারছিনা, জানিও না।

জেনে রাখ। তিনি কোনও সাক্ষী মৌজুদ রাখতে চাচ্ছেন না। অনুরোধ কালে তোমাদের সঙ্গে রেখেছিলেন যাতে আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে না পারি। আমার কথা শুনে একটু চুপ থেকে কামাল জিজ্ঞেস করলো, সফর কেমন হয়েছে?

ভালোই বলতে পারিস। তোদের মনোবাঞ্জা পূর্ণ হয়েছে, সেই বিচারে সফলই বলতে হবে।

জানতাম সাফল্য ছাড়া তুই ফিরবি না।

তুই অনেক কিছুই জানিস। তাই আমাকে বেচে নিজের ক্রেডেন্সিয়াল বাড়িয়ে নিচ্ছিস। যাক সে কথা, যে সমস্ত বন্ধুদের সাথে দেশে ফিরে আসার আগে তোর পরিচয় হয়েছিল তারা সবাই তোকে অভিনন্দন আর তোর পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
তাই নাকি? সত্যি তোর অনুরোধে ওরা আমাদের জন্য আন্তরিকভাবে যা করেছে তাতে আমরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

হবারই কথা। কারণ, তাদের বন্ধুত্বের অভিধানে শঠতা এবং নিমকহারামী শব্দ দুটো নেই। শোন কামাল, একটা বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে কিন্তু এভাবে আমাকে আর এমন কোনও বিষয়ে জড়িয়ে বিব্রত করবি না, যতক্ষণ না তোর ম্যাডাম তার দেয়া ওয়াদা পূরণ না করেন। মানে, তিনি আমাদের স্বাধীন ভাবে দেশে ফিরে বসবাসের সুযোগ না করে দেন।

এখন পর্যন্ত তুই তার জন্য যা করেছিস তারপরও কি তুই মনে করিস, তিনি তার কথার বরখেলাপ করবেন?

আমাদের মতো দেশে যারা ক্ষমতার রাজনীতি করেন তাদের বেশিরভাগই মনে করেন তারা হচ্ছেন জিয়ল মাছ। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল ক্ষমতার বলয়ে বেঁচে থাকা। এই স্বার্থে এবং নিজেদের সব অপকর্ম এবং মিথ্যাচারকে বৈধতা দানের জন্য দুইটি বহুল প্রচলিত প্রবাদে তারা খুবই আস্থাশীল।

প্রথমটি হল, ‘কাজের বেলায় কাজি কাজ ফুরালেই পাজি’। আর দ্বিতীয়টি হল, ‘রাজনীতিতে কোন শেষ কথা নেই’। তোমাদের ম্যাডাম তো মাত্র ক্ষমতার গদিতে আসীন হয়েছেন। ক্ষমতার শক্তি কি সেটা তাকে বুঝতে দাও। তারপরই তার স্বরূপটা প্রকাশ পাবে। আমি কি মনে করি সেটা ধর্তব্যের বিষয় নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ঘনিষ্ঠ চৈনিক বন্ধুদের মনে খালেদার প্রতিজ্ঞার বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারা মনে করেন, খালেদা জিয়া ঠিক তার স্বামী জেনারেল জিয়ার মতোই ১৫ই আগস্টের সাথে তার কোনও রকমের সম্পৃক্ততা স্বীকার করবেন না এবং আমাদের দেশে ফিরে স্বাধীনভাবে জাতীয় রাজনীতিও করতে দেবেন না। তাহলে তার নিজের এবং বিএনপির রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে কর্নেল রশিদ এবং কর্নেল ফারুককে নিয়ে এরশাদের মতো খালেদারও তেমন মাথাব্যথা নেই। কারণ, তিনি ভালো করেই জানেন যে, সেনা পরিষদের মূল সংগঠক হচ্ছি আমরা। সেনা পরিষদের সাথে রাজনৈতিক ভাবে ফারুক ও রশিদ জড়িত নয়। মুজিব বিরোধী অভ্যুত্থানে তাদের সাথে সেনা পরিষদ একটি কৌশলগত ঐক্য গড়ে তুলেছিল মাত্র। খালেদা জিয়া আরও জানেন, যুদ্ধকালীন সময় যেই সংগঠন অতি গোপনে গড়ে তোলা হয়েছিল সেটাই স্বাধীনতার পর সেনা পরিষদে পরিণত হয়। সেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হবার জন্য আমিই জিয়াকে রাজি করিয়েছিলাম সেটাও তার অজানা নয়। তাই আমাদেরকে তিনি নিজের আওতার বাইরে কখনোই রাজনৈতিক অঙ্গনে বিচরণ করতে দিতে পারেন না। তিনি অবশ্যই মনে করবেন সেটা হবে তার এবং তার দলের জন্য আত্মঘাতী। এটা চৈনিকদেরও আশংকা। তাদের এই আশংকা ঠিক হতেও পারে আবার নাও হতে পারে, সময়েতেই সেটা নির্ধারিত হবে। চৈনিক বন্ধুদের আশংকাটাকে অবশ্য উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ নিয়ে পরে কোনোদিন যদি বিশদ আলোচনার ইচ্ছে রাখিস তবে করবো। রেখে দিলাম ফোন।

রাত দশটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে খালেদা জিয়ার বাড়ীর গেইটে গিয়ে পৌঁছালাম। মিনু ফুপ্পুর বাসা থেকে কাছেই শহীদ মইনুল রোড, তাই নিজেই গাড়ী চালিয়ে এসেছি। গেটের রক্ষীদের কমান্ডার এগিয়ে এলো পরিচয় জানতে। আমি ড্রাইভিং সিটে বসেই সাইড উইন্ডোর কাঁচটা নামাচ্ছিলাম হঠাৎ কমান্ডার উচ্চস্বরে কমান্ড দিল রক্ষীদের- ‘গার্ডস পিজেন্ট আর্মস।’ মুহূর্তে কমান্ডারসহ পুরো চৌকস কন্টিনজেন্ট সাল্যুট করে দাড়াল। আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে তাদের সাল্যুট গ্রহণ করলাম। এরপর রক্ষীরা গেইট খুলে দিলো। আমি গাড়ীতে বসেই গার্ড কমান্ডারকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম

আপনি আমাকে ‘পিজেন্ট আর্মস’ এর সম্মান দিলেন কেনও? আমিতো সাধারণ পোশাকে গাড়ী নিজেই চালিয়ে এসেছি। আপনি আমাকে চিনলেন কি করে? আগে দেখেছেন নাকি? একসাথে চাকুরি করেছি বলেও তো মনে হচ্ছে না!

হ্যাঁ স্যার, আপনাকে চীনে দেখেছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে সর্বপ্রথম যে দলটি ‘লাইট উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিক্স’ কোর্সের জন্য পাঠfনো হয়েছিল ক্যাপ্টেনসৈয়দ ইস্কান্দারের নেতৃতে তাতে আমিও ছিলাম। আপনি বেইজিং থেকে এসেছিলেন আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে। এরপর অনেক বারই প্রশিক্ষণকালে এসেছেন আমাদের খোঁজ-খবর নিতে। আমাদের সুবিধা-অসুবিধা এবং অন্যান্য সমস্যাদি নিয়ে আপনি আমাদের সবার সাথে যে আন্তরিকতার সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন আর সেই সমস্ত সমস্যাদি দূর করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন, বিদেশের মাটিতে আপনার মতো এতো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন আন্তরিক ব্যবহার পাওয়ায় আপনি আমাদের সবার কাছেই বিশেষভাবে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। অতি সহজ সরলভাবে যেভাবে আপনি বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ কথাগুলো আমাদের বোঝাতেন সে সমস্ত কথা আমাদের কেউই ভুলে যায়নি। আবেগপ্লুত সুবেদার আন্তরিকভাবেই কথাগুলো বলেছিলো।

আমাদের হাতে বানানো এই আর্মিতে আপনার মতো চরিত্রের লোকেরা বিশ্বপরিসরে আর্মির সম্মান বৃদ্ধি করুক, বলে গাড়ী বারান্দায় গিয়ে গাড়ী থেকে নামলাম। একজন ড্রাইভার গাড়ী পার্কিং-এ নিয়ে গেলো। জনাব ফালুকেই অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। সে আমাকে একটি বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে আমাকে বসিয়ে জানতে চাইলো, আমি কি পছন্দ করবো চা, কফি না কোল্ড ড্রিংস।

কিছু না আপনি বেগম জিয়াকে খবর দিন। বেরিয়ে গেলো ফালু।

এলেন খালেদা জিয়া, পান মশলা চিবুতে চিবুতে। কুশলাদি বিনিময়ের পর দু’জনই বসলাম সোফায়। তিনি ইন্টারকমে ফালুকেই বোধকরি হুকুম দিলেন যতক্ষণ আমি তার সাথে বৈঠকে আছি ততক্ষণ তাকে কোনও ইনকামিং ফোনকল না দিতে, সাক্ষাৎও নয়। একই সাথে চা-নাস্তা পাঠিয়ে দিতে বললেন। চা-নাস্তার প্রয়োজন ছিল না ভাবী, আমি রাতের খাবার খেয়েই এসেছি।
কোথায় থাকছেন?

ডেরা ফেলেছি মিনু ফুপ্পুর বাসায়। সেখান থেকেই আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুদের বাসায় বাসায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।

স্বাভাবিক, আপনারা খাস ঢাকাইয়া, তাই নিকট আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও আপনার পরিচিত জন এবং বন্ধু-বান্ধবদের বলয়ের পরিসীমাটা অস্বাভাবিক ভাবে ব্যাপক শুনেছি। বলুন, কেমন হল আপনার সফর? ফলাফলটা কি ইতিবাচক? আসল বিষয় উত্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী।

ইতিবাচকই বলা চলে। চীনা নেতৃবৃন্দ আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাষ্ট্রীয় সফরের নিমন্ত্রণ জানাতে রাজি হয়েছেন। আপনার সুবিধামতো যেকোনো দিন আপনি চীন সফরের প্রস্তাব জানালে চীন সরকার সেটাই গ্রহণ করবেন। আমার মনে হয় চীনা রাষ্ট্রদূত ইতিমধ্যেই জরুরী ভিত্তিতে নির্দেশ পেয়ে থাকবেন আপনার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে এই সফরের বিষয়ে সবকিছু জেনে নিতে। আর এজেন্ডার প্রস্তাবগুলোও মেনে নিয়েছেন চীনা কর্তৃপক্ষ। শুধু প্রযুক্তি, কারিগরি তদারকি এবং রসদই চীন প্রদান করবে না, প্রতিটি প্রোজেক্টের জন্য আর্থিক সংকুলানও করবে গণচীন সরকার। আপনার সফরকালেই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হবে। খুশিতে তার চোখে চমক দেখা দিলো। নিজের অজান্তেই তার মুখ থেকে বেফাঁস বেরিয়ে পড়লো কামালের কথাই ঠিক হল!
কিছু বললেন? না, আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দেবো সেটাই ভাবছি।

একজন সরকারি চাকুরে হিসাবে আমি আমার সাধ্যমতো দেশ ও জাতীয় স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ধন্যবাদ আমার প্রাপ্য নয়। জবাবটা শুনে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

আপনার আত্মমর্যাদাবোধ এবং বাচনভঙ্গি খুবই তীক্ষ্ণ বলে, এক কাপ চা নিজ হাতে বানিয়ে জিয়ার মতোই আমার হাতে তুলে দিলেন। ভাই, আপনি সিনিয়র মিনিস্টার হিসাবে আমার পাশে দাড়ান। অস্বস্তিকর আবার সেই একই পুরনো কাসুন্দি! চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম কি জবাব দেবো। একটু ভেবে নিয়ে চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে তার দিকে দৃষ্টি মেলে দেখি, একরাশ প্রত্যাশা নিয়ে তিনি আমার দিকে চেয়ে আছেন জবাবের প্রতীক্ষায়। তার সেই চাহনি আমাকে আরও বিব্রত করে তুললো।

ভাবী, কিছু মনে করবেন না, এই অনুরোধটা আপনি আগেও করেছেন, জবাবটাও যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার করে আমি দিয়েছি। এটা অবাস্তব প্রস্তাবনা। এতে হিতে বিপরীত হবে দুই পক্ষের জন্যই। বরং আপনি স্বেচ্ছায় যে ওয়াদা করেছেন, আমাদের স্বাধীনভাবে দেশে ফিরে নিজেদের মতো রাজনীতি করার সুযোগ করে দেবেন তার বাস্তবায়ন কোরলে তাতে দুই পক্ষেরই মঙ্গল হবে। দেশপ্রেম, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং প্রগতিশীল ইসলামী মূল্যবোধ ভিত্তিক রাজনৈতিক ধারাকে চিরন্তন রাখার অন্য কোনও বিকল্প নেই।

আমার জবাবে উনার মুখাবয়বে হতাশার একটা ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দেখতে পেলাম। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম, যদি অনুমতি দেন তবে একটা পরামর্শ দিতে চাই যদিও জানি বিজ্ঞ পরামর্শদাতার অভাব আপনার নেই।

বলুন।

ভাবী, সব ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক সময় আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটাতে পারে যেটা ফরমাল সম্পর্কের মাধ্যমে সম্ভব হয় না।
সরকার প্রধান হিসেবে আপনারও উচিৎ হবে পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা বলয়ের অদৃশ্য প্রভাবশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সম্পর্ক গড়ে তোলা। এর জন্য যা খরচ হবে সেটার শতগুণ আপনাকে পাইয়ে দেবে বন্ধুরাই। কারণ, কি করে কন পথে সেই অর্থ অর্জন করা সম্ভব সেটা কোনও রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্র বিশারদের পক্ষেও জানা সম্ভব নয়। এইসব চোরাগলিগুলো ঐ সমস্ত অদৃশ্য ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নখদর্পণে। তাছাড়া আমেরিকাতেও রাষ্ট্রীয় এবং প্রশাসনিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম যে একেবারেই হয় না সেটাও ঠিক নয়। যেমন ধরুন, আপনার আমেরিকা সফরের আবেদন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে যে জবাব নিয়ে ফিরে এসেছেন সেটা প্রচলিত প্রথা বটে, তবে ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যতিক্রম যে একেবারেই অসম্ভব সেটাও ঠিক নয়। তাই যদি হয়, তাহলে কোথা থেকে কি ভাবে এই উদ্দগ শুরু করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন? আমার মতে পশ্চিমা জগতের বর্তমান মোড়ল আমেরিকা থেকেই শুরু করার উদ্দগ নিলে ইউরোপ এবং নর্থ আমেরিকার রাজধানীগুলোতে সেই ধরনের ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সুবিধে হবে। তবে দূরদর্শী নেত্রী হিসাবে চীনের ক্ষমতাশালী নেতাদের সাথে আপনার সম্পর্ককে প্রাধান্য দিতে হবে সব সময় বাংলাদেশের স্বার্থেই।

আপনি আমাকে এই ব্যাপারে ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য করতে রাজি আছেন কি? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমেরিকাতে একটা রাষ্ট্রীয় সফরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা যেতে পারে কি? নিজের ফাঁদে আটকা পড়ে গেলাম। বিপাকে পড়ে গেলাম নিজের বক্তব্যের জন্যই। কিছুটা ভেবে নিয়ে বলতে বাধ্য হোলাম দেশের স্বার্থে আমি চেষ্টা করতে পারি, তবে ফলাফল কি হবে সেটা একান্তভাবে আমার উপর নির্ভর করছে না, তাই বলাও সম্ভব নয়।

খুবই স্বাভাবিক। তাহলে ফিরে গিয়ে আপনি এই বিষয়ে যা কিছু করার তাই করবেন। প্রয়োজন বোধ করলে, আমি আপনাকে আমেরিকাতে রাষ্ট্রদূত হিসাবেও পাঠাতে পারি।

না ভাবী, রাষ্ট্রদূত হিসাবে সেখানে গিয়ে এ ধরনের কোনও কাজ করা সম্ভব হবে না। কারণ, যেকোনো রাষ্ট্রদূতকেই একটা সীমিত গণ্ডির মধ্যে থেকে তার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ ধরনের কাজ বাঁধাধরা গণ্ডিতে বন্দী হয়ে করা সম্ভব নয়। এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা একটি অপরিহার্য শর্ত। তাহলে আপনি আপনার মতোই এগিয়ে যান। এর জন্য আনুষঙ্গিক সবকিছুর যোগান আমিই আপনাকে দেবো গোপনীয়তা রক্ষা করেই।

ঠিক আছে, তাহলে ফিরে গিয়ে আমি গোপনে আমেরিকা সফরে যাবো। ফিরে যাবার আগে আমাকে আপনার বিশেষ দূত হিসাবে উল্লেখ করে একটা নোট ভারবাল সই করে দিতে হবে আর কিছু ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। খরচাপাতির হিসেব আপনি পাবেন। এ ছাড়া, কয়েকটা Letter of thanks-ও আপনাকে সই করে দিতে হবে। নোট ভারবাল এবং Letter of thanks গুলো আমিই নিজে লিখে নিয়ে আসবো। এর জন্য আপনার অফিসিয়াল প্যাডের কয়েকটা পৃষ্ঠা এবং এনভেলপ আমাকে দিয়ে দিন। দু’দিন পর আপনি আমাকে ডেকে পাঠাতে পারেন। তখন আমি ঐ চিঠিগুলোতে সই করিয়ে আপনার সামনেই সিল করে টাকা সহ চলে যাবো।

তাহলে দু’দিন পর আপনি রাত দশটায় বাসাতেই আসবেন। আমি অপেক্ষায় থাকবো।

এবার আমি তাহলে আসি।

রহস্যময় হাসি হেসে তিনি বললেন আসুন। এখন থেকে কোনও কিছুর জন্যই আপনাকে ধন্যবাদ জানাবার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে তাই না?

কিছু না বলে বেরিয়ে এলাম। ফিরে এলাম বাসায়। পরদিন রাতেই কামাল ফোন করে জানালো

চীনা রাষ্ট্রদূত জরুরী ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে সফর সংক্রান্ত সব তথ্য নিয়ে গেছেন। ভালোই তো মুখ্য সচিব হিসেবে গণচীনে VVIP Delegation-এর মেম্বার হয়ে যেতে পারবি।

ভাবছি, পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা করার চেষ্টা করবো।

না, সেটা করবি না। করলেও দেখা পাবি না। রহস্য পুরুষরা পর্দার আড়ালেই থাকতে পছন্দ করেন। হাই প্রোফাইল রাষ্ট্রীয় সফরে তাদের হদিসও পাবি না। বুঝলাম। কামালের সাথে আলাপ করে ঠিক বুঝলাম না আমাকে দেয়া আগামী দায়িত্ব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী কামালকে অবহিত করেছেন কি করেননি। দু’দিন পর যথা সময়ে মইনুল রোডের বাড়িতে গিয়ে সব কাগজ-পত্রে খালেদা জিয়ার সই করিয়ে, টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম। এই বিষয়ে বাসায় কারো সাথে কোনও আলাপ করলাম না।

নাইরোবি ফেরার প্রাক্কালে কামালের সেকেন্ড ক্যাপিটালের বাসায় ভোজে যেতে হয়েছিল নিম্মিকে নিয়ে। মাত্র আমরা দুইজনই অতিথি। একান্ত ঘরোয়া পরিবেশ। নিম্মিকে কথা বলার জন্য কামালের স্ত্রী অন্য একটি ঘরে নিয়ে গেলো। এতে দুই বন্ধু প্রাণ খুলে আলাপ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আচ্ছা ডালিম, একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। তুই কিছু মনে করবি নাতো?
হঠাৎ এতো বিনয় কেনও বন্ধু, বল। ‘৭১-এর যুদ্ধকালীন সময় থেকে তোর আর নিম্মিদের পরিবারের সাথে এত ঘনিষ্ঠভাবে মিশেও কেনো জানি মনে হয়, তোকে সঠিক ভাবে চিনতে পারিনি।

কেনো? আমার কোনও কিছুই তো তোর অজানা না। তা ঠিক, বরং বলবো আমার সব সুখে-দুঃখে আপনজন হিসাবে আমার পাশেই থেকেছিস। খালাম্মাতো আমাকে ছেলের মতোই ভালবাসেন আর বাপ্পি, নিম্মি এবং মানুতো আমাকে বদ্দা বলেই ডাকে। আমিও নিজেকে তাদের পরিবারেরই একজন বলে মনে করি। নিজের বাবা-মার কাছ থেকে জীবনে যতটুকু স্নেহ-ভালবাসা পেয়েছি তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি নিঃস্বার্থ স্নেহ ও ভালবাসা পেয়েছি এদের কাছ থেকে এটা আমি গর্বের সাথেই স্বীকার করতে পারি। যুদ্ধের পর তোর পরিবারের সাথেও একই রকমের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে এটাও স্বীকার করবো নিঃসঙ্কোচে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি সর্বমহলে তুই ছিলি আলোচিত বিশেষ এক ব্যক্তিত্ব। তোর স্পষ্টবাদিতা, অসীম সাহস আর বীরত্বের কারণে রণক্ষেত্রে তুই নিজেকে সহজেই পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলি এক কিংবদন্তিতে। যুদ্ধের পর দেখলাম দেশের সর্বমহলেই তুই বহুলভাবে পরিচিত। রাজনৈতিক মহলের ডানপন্থী, বামপন্থী, মধ্যপন্থী সবক্ষেত্রেই নেতা-কর্মীদের সাথে তোর রয়েছে বিস্ময়কর অন্তরঙ্গ সখ্যতা। সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য হিসাবে দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক মহল এমনকি ঝানু ঝানু আমলাদের সাথেও দেখেছি তোর ঘনিষ্ঠতা। দেশজুড়ে এমন ব্যাপক পরিচিতি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমার কিংবা অন্য কারো পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব বলে মনে হয়না। এর কারণ কি?

কারণ তোর মতো সচেতন দেশপ্রেমিকরা বরাবরই নিজেকে সীমিত করে রাখে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে। সেই গণ্ডির মধ্যে থেকে যতটুকু ঝুঁকি নেয়া সম্ভব ততটুকু ঝুঁকি নিয়েই দেশ এবং জনগণের সেবা করার চেষ্টা করে থাকিস তোরা। বিপরীতে, আমি এবং আমার সঙ্গী-সাথীরা কোনও গণ্ডির পরোয়া করি না। এটাই প্রধান কারণ। নিজস্ব নিরাপত্তা এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে চলিস তোরা, আর আমরা এ সমস্তের ঊর্ধ্বে বাধন ছাড়া পাখি। পরিণাম যাই হউক না কেনও, নীতি আদর্শের প্রশ্নে কনও আপোষ করতে আমরা জানি না, বুঝিলে কি সুজন?

হ্যা। এবার অন্য বিষয়ে আর একটি প্রশ্ন। যুদ্ধকালীন সময় যখন জিয়াকে সেক্টর থেকে সরিয়ে হেড কোয়ার্টারে এনে ডাম্প করা হয়েছিলো, তখন থেকে দেখে এসেছি তোরা তার বর্ম হয়ে তাকে আগলে রেখেছিলি স্বাধীনতাত্তোর কালেও।

১৫ই আগস্ট এবং ৭ই নভেম্বরের সফল বৈপ্লবিক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াকে তোরাই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত করেছিলি সেটাও আমি জানি। কিন্তু সেই জিয়াই তোদের সাথে নিষ্ঠুর প্রতারণা করল কেন?

কথায় বলে মানুষের মন না মতি। যেকোনো মানুষের মনেই পরিবর্তন আসতে পারে যেকোনো সময়, চোখও পাল্টাতে পারে মুহূর্তে। তোকেই জিজ্ঞেস করি এক সময়ের ভার্সিটির চৌকস ছাত্র, কট্টর বামপন্থী কামাল সিদ্দিকি পরে হয়ে গেলো ক্যারিয়ারিস্ট CSP officer! তারপর মুক্তিযুদ্ধের সময় এক বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার পর আবার বাংলাদেশের ডাকসাইটে একজন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অধিকারী আমলা, এসবই তো মনের পরিবর্তন, তাই নয় কি? জাস্টিস সায়েমকে প্রেসিডেন্ট-এর পদ থেকে হটিয়ে দেশের সব ক্ষমতা করায়ত্ত করে জেনারেল জিয়া কেনও পিটার কুস্টার নামের ডেনিশ সাংবাদিকের সাথে জড়িয়ে তোকে ফেরারি হতে বাধ্য করেছিলো? গণেশ উল্টে দেবার মতো মানুষ তো তুই না, তবে কেনও জিয়ার রোষানল থেকে বাঁচার তাগিদে হক ভাইয়ের শেল্টারে তোকে পালিয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল জেনারেল জিয়া।

পরে অনেক ধরপাকড় করে মাফটাফ চেয়ে কিছুদিন শ্রীঘর বাসের পর আবার চাকুরিতে পুনর্বাসিত হয়ে সেই জিয়ারও খেদমত করলি, এখন খালেদার খেদমত করছিস।

এগুলোর সবই তো মনেরই পরিবর্তন। আশ্চর্য! এত কিছুর পরও জিয়ার মোনাফেকি এবং সন্দেহপ্রবণ মন সম্পর্কে তোর ধারণা এখনো অস্বচ্ছ, এটা বিশ্বাস করতে পারছিনা বন্ধু!

যাই হউক, এখন অতি উৎসাহে চেষ্টা তদবির করে খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব হয়েছিস দেশ উদ্ধার করার জন্য। বিপরীতে বাকশালী রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান যখন আমাদের কালো আইন PO-9 এর আওতায় চাকুরিচ্যুত করে স্বয়ং নানা ধরনের আকর্ষণীয় অফার দিয়ে আমাদের কেনার চেষ্টা করেন, আমরা সেগুলো সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম।

এটাও তোর আর আমাদের মধ্যে একটা তফাৎ। ‘৭১-এর লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন তোদের ম্যাডাম কতটুকু কি করবেন সেটা সময়ই বলবে। তবে যে পদটি তুই করায়ত্ত করেছিস তাতে বিশ্ব আমলাদের হাটে তোর চাহিদা এবং দাম দুটোই বাড়বে। প্রয়োজনে চড়াদামে নিজেকে বিক্রি করতে পারবি যেকোনোও সময় সেটা তুই নিজেও ভালোই জানিস। এটাও তোদের ক্যালকুলেটেড পদক্ষেপের একটি। আমরা মনে করি খালেদা জিয়া জেনারেল জিয়ার পদাংকই অনুসরণ করে চলবেন। তাই তার মাধ্যমে আমাদের ‘৭১-এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জিয়া আমাদের একজন হয়েও ভারতের সাথে সমঝোতা করে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সেনা পরিষদের সদস্য এবং আমাদেরকেই আখ্যায়িত করলেন ষড়যন্ত্রকারী এবং দেশদ্রোহী হিসাবে, তোর ম্যাডামের কাছ থেকেও কোনোদিন তেমনই কোনও অপবাদ নিয়ে চাকুরিচ্যুত হলে বিস্মিত হবার কিছুই থাকবে না বন্ধু। সেইক্ষণে ভাই তুইও আমার সাথে একটা দূরত্ব বজায় রাখবি। তাহলে খালেদার জন্য এতকিছু করে যাচ্ছিস কেন?

আমাদের বিবেচনায় দেশ ও জাতির মঙ্গল আর আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়নের সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যা প্রয়োজন আমরা সেটাই করে চলেছি। এতে জিয়া, এরশাদ কিংবা তোদের ম্যাডাম যদি ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হয়ে থাকেন সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তাই বলতে পারিস যা কিছুই আজঅব্দি করেছি বা করে চলেছি সেটা আমাদেরই স্বার্থে।

তোর বাহ্যিক রূপ দেখে তোর গভীরতা কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। তাই বুঝি! উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম দুইজনই। শোন, একটা গোপন কথা তোকে জানাচ্ছি, যদি তোর কোনও উপকারে লাগে ভবিষ্যতে তাই। তোর ম্যাডাম আমাকে আকুতি জানিয়ে বললেন, আমেরিকা আর পশ্চিম ইউরোপের ক্ষমতা বলয়ের অদৃশ্য শক্তিধর স্তম্ভদের সাথে তার ব্যক্তিগত একটা যোগসূত্র স্থাপন এবং তার আমেরিকা সফরের একটা ব্যবস্থা করে দেবার চেষ্টা করতে। এবারের ভেঞ্চারে তোকে এখনঅব্দি অন্ধকারে রাখা হল! শুধু তাই নয়, তিনি বিশেষভাবে বললেন, বিষয়টি শুধুমাত্র তার আর আমার মধ্যেই যেনো গোপন রাখা হয়।
তাই নাকি? আশ্চর্য তো! তা তুই কি বললি? বললাম, চেষ্টা করে দেখবো। তাই বলছি, যাই করিস না কেনো সাধু সাবধান! একটা শেষ ঔৎসুক্যের জবাব দিবি কি?

বল, কি জানতে চাস? মনজুর জিয়ার বিরুদ্ধে এমন একটা পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে তোর কোনও পূর্ব ধারণা ছিল কি? কার হয়ে গোয়েন্দাগিরি করছিস জানি না। তবে মিথ্যাকে আমি ঘৃণা করি। তাই চুপ থাকতে হচ্ছে। এটাই আমার জবাব।  আমি কিন্তু জানি, এই ব্যাপারে তুই বেশ কিছুটা অবগত ছিলি। সারগোদিয়ান বিধায় এটাই কি খালেদার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হওয়ার একটা কারণ নাকি? ইচ্ছে হলে বলতে পারিস আমার অনুমানটা সঠিক কিনা।

তবে ভয়ের কিছু নেই বন্ধু, আমি তোমার ম্যাডামের কাছে এই বিষয়ে কিছুই কখনো ফাঁস করে দেবো না, আশা করি এতটুকু বিশ্বাস আমার উপর তোর আছে। জবাবে কোনও কিছুই বললো না কামাল। বুঝলাম। এখন যাবার আগে তোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে যেতে চাই জিয়া পরিবারকে বোঝার জন্য। জিয়ার মৃত্যুর পর এরশাদ জিয়া পরিবারের সবার ব্যক্তিগত এবং পার্টির সব একাউন্ট জব্দ করে দেয়ার হুকুম জারি করে, পরিণামে জিয়া পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এর প্রধান কারণ জিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নিজেকে ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতির ঊর্ধ্বে রাখেন কিন্তু তিনি তার দলীয় নেতা-নেত্রীদের দুর্নীতি করার জন্য খোলা ছুট দিয়ে রেখেছিলেন। এভাবেই চতুরতার সাথে তিনি তার পার্টি ফান্ডের ব্যবস্থা করতেন এবং একি সাথে DGFI-এর মাধ্যমে প্রত্যেকের নামে একটা ফাইল বানিয়ে নিজের কাছে রাখতেন। এই ভাবে অতি সহজেই দলের শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতাকে তার পালিত কুকুরের মত অনুগত রাখার ব্যবস্থাটাও পাকাপোক্ত করে নিয়েছিলেন ধূর্ত জিয়া। জিয়ার মৃত্যুর পর এরশাদের আচরণের কারনে অর্থ সংকটে পরেজিয়া পরিবার।

পারিবারিক আর্থিক সংকটের সুযোগে নিয়ে RAW sponsored হংকং এবং সিঙ্গাপুর ভিত্তিক দুইটি কোম্পানির ঢাকাস্থ গার্মেন্টস Buying house মোটা অংকের মাসোহারা এবং শেয়ার হোল্ডার ডিরেক্টর হিসাবে সাঈদ ইস্কান্দার এবং তারেক জিয়াকে নিয়োগ দান করে।

এ ছাড়া তোদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্নেল মুস্তাফিজুর রাহমান পাকিস্তান আমলে একই সময় ক্যাপ্টেন হিসাবে জিয়ার সাথে ISI-তে চাকুরি করেছিলেন বছর দুই-তিন।

তিনি জিয়ার কোর্সমেট, তাই তাকে বিশ্বাসভাজন মনে করে তোর ম্যাডাম তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছেন। কিন্তু তিনি অবগত নন কর্নেল মুস্তাফিজ এখন রুশ-ভারত অক্ষের স্বার্থে RAW- এর পে-রোলে কাজ করছেন। মওদুদও এখন RAW-এর চর। ইন্টেলিজেন্স-এর রীতি অনুযায়ী খবরের সূত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করার বিধান নেই, তবে খবরের সত্যতা যাচাই করার অধিকার অবশ্যই তোর আছে। সম্ভব হলে RAW-এর অনুপ্রবেশকারীদের খপ্পর থেকে তোর ম্যাডামকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করিস দেশ ও জাতীয় স্বার্থে। ‘ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙ্গা স্যুটকেস’ অনেক আগেই আঁস্তাকুড়ে কবর দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির রাহুর গ্রাস ক্রমশ জিয়া পরিবারকে গিলে ফেলছে অতি দ্রুত, বুঝিলে বন্ধু। বড় বড় চোখে কামাল আমার কথাগুলো গিলছিলো।

ঠিক সেই মুহূর্তে কামাল বোধ করি আমার কথাগুলো পুরোপরি হজম করতে পারছিল না।

কিন্তু সময়ের সাথে সংগৃহীত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমার কথার সত্যতার প্রমাণ পেতে সক্ষম হয়েছিল কামাল। অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তাই বিদায় নিয়ে আমরা বাসায় ফিরলাম।

এর কিছুদিনের মধ্যেই লন্ডন হয়ে আমরা নাইরোবি ফিরে এলাম। এটাই ছিল ঢাকায় কামালের সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ।